বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙা বাঁশের সেতুর উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন ওই এলাকার লোকজন।
জানা যায়, গত মঙ্গলবার সকালে রবিন (১২) নামে একটি ছেলে পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়। সে সময় লোকজনের চাপে সাঁকোটি মাঝ বরাবর ভেঙে যাউ। এছাড়া আগের থেকেই সাঁকোটি নড়বড়ে অবস্থায় ছিল বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ১০ বছর আগে সাত গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য পদ্মা নদীর শাখা ক্যানেল ঘাট এলাকায় ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাঁকোটি ব্যক্তিগত অর্থে নির্মাণ করে দেন দৌলতদিয়া তিন নম্বর ওয়ার্ডের আইয়ুব আলী। এরপর থেকে স্থানীয়রা জোড়াতালি দিয়ে সাঁকো সংস্কার করে ব্যবহার করে আসছে। প্রতিদিন এই সাঁকো দিয়ে দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ১ নং বেপারী পাড়া, সাহাজদ্দিন বেপারী পাড়া, লালু মন্ডলের পাড়া, নতুন পাড়া, ইদ্রিস পাড়া, নাসির সরদারের পাড়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সী বাজার এলাকার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন।
সাঁকো পার হওয়া বড় সিংগা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রেবেকা আক্তার জানায়, ‘সাঁকোটি নড়বড়ে হওয়ার কারণে পার হতে ভয় লাগে। গত বছর বন্যার সময় সাঁকোর ওপর থেকে পানিতে পড়ে একটি শিশু মারা গিয়েছিল। আর এখন তো মাঝখানে ভেঙে গেছে কখন সম্পূর্ণ ভেঙে যাবে কে জানে?’
ইদ্রিস পাড়ার বাসিন্দা আইজুদ্দিন প্রামাণিক বলেন, ‘এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেওয়া ছাড়া কোনো উদ্যোগ নেয়নি। নির্বাচন এলেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু নির্বাচনে জেতার পর কারও আর মনে থাকে না। ভারী কোনো মালামাল নিয়ে সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করা যায় না।’
স্থানীয় আরাফাত বলেন, ‘একটি সেতুর অভাবে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি। সব এলাকার উন্নয়ন হলেও আমাদের এখানে হয় না। শুধু একটি সেতুর অভাবে পিছিয়ে যাচ্ছি।’
ইদ্রীস মিয়ার পাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমাদের মতো বয়স্কদের এই সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে খুব কষ্ট হতো। নড়বড়ে এই সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করতে গেলেই কাঁপতে থাকতাম। আর এখন মাঝখান থেকে খুটি সরে গেছে। দুই পাশের খুটির উপর ভর করে সেতু দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো সময় পুরো সেতু ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমাদের দাবি, দ্রুত এখানে একটি ব্রিজ করা হোক।’
শাহাজদ্দিন মন্ডল পাড়ার বাসিন্দা মেজেক বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের এখানে সেতু দেওয়ার কথা থাকলেও সেই সেতু নাসির উদ্দীন সরদার পাড়া দেওয়া হয়েছে। মূলত সব মানুষ এখান দিয়ে চলাচল করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে ওইখান দিয়ে সেতু নির্মাণ করছে।’
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘আমি মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গিয়ে বাঁশের সাঁকো ভাঙা দেখে মেরামতের জন্য ইতিমধ্যেই বাঁশ কেনার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া এলাকাবাসী ওখানে একটি ব্রিজ তৈরির দাবি করছে দীর্ঘদিন ধরে। ব্রিজ নির্মাণের কাজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী মো. বজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে সয়েল টেস্ট করে সেখানে ৯৬ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বরাবর পাঠিয়েছি। এতে প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। নদী ভাঙন নিয়ে একটা শঙ্কা রয়েছে, তাই এখানে বাধ নির্মাণ হলে খুব শীঘ্রই এখানে সেতু নির্মাণ সহজ হবে।