Home সারাদেশ শঙ্কিত জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী বাবুল
জুন ১৫, ২০২৩

শঙ্কিত জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী বাবুল

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, পরিবেশ ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তে প্রার্থী হননি বিএনপি নেতা বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। প্রার্থী হলেও বরিশালে দলীয় প্রার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে নির্বাচনি মাঠ ছাড়েন ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী হাফিজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান। এবার অভিযোগ আনলেন আওয়ামী লীগপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি অভিযোগ করেন, সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। নৌকার প্রার্থী আচরণবিধির তোয়াক্কা না করেই প্রচারণা চালাচ্ছেন। এসব নির্বাচনসংশ্লিষ্ট স্থানীয় কর্মকর্তারা দেখেও না দেখার ভান করছেন। এমনকি হলফনামায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বরিশাল সিটিতে ভোটের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের একটি মন্তব্যে নিজেও আতঙ্কিত বলে জানান নজরুল ইসলাম বাবুল। হলফনামায় অসত্য তথ্য থাকায় নৌকার প্রার্থিতা বাতিল করার দাবি জানান তিনি।

বুধবার বিকালে নগরীর কুমারপাড়ায় তার প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাবুল এই দাবি জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাবুলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সাইফুদ্দিন খালেদ, সদস্য সচিব আব্দুস শহীদ লস্কর বশিরসহ পার্টির ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবারের সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমার হাতে লাঙ্গল তুলে দিয়েছেন। এরপর থেকে আমি ভোটের মাঠে আছি। কিন্তু আপনারা দেখতে পাচ্ছেন নির্বাচনের মাঠে কী ঘটতে চলেছে। এতে আমি শঙ্কিত। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নানাভাবে আমাকে চাপের মধ্যে রাখা হচ্ছে। মাঠে থাকা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের চোখ রাঙানি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের কর্মসূচিতে নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে। কিন্তু রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না। মাঠে থাকা প্রশাসন বরং আমার ওপরই কড়াকড়ি আরোপ করছে। আর নৌকার প্রার্থী প্রতিদিন আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার চালাচ্ছেন।

বাবুল বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকার অভিযোগ করে সিলেট সিটি নির্বাচন বর্জন করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ইসলামী আন্দোলনের মেয়রপ্রার্থী মাহমুদুল হাসানও সরে দাঁড়িয়েছেন। এখন টার্গেট আমি। আমাকে সরানোর চেষ্টা চলছে।

তবে জীবন গেলেও ভোটের মাঠ ছাড়বেন না উল্লেখ করে বাবুল বলেন, চলমান সিটি নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে দেশ-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণের আস্থা খুঁজে পাবে। নতুবা সিলেটের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।

ফেসবুকে নজরুল ইসলাম বাবুলের একটি ব্যক্তিগত ভিডিও ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে একটি ভুয়া ভিডিও ফেসবুকে ছড়ানো হয়েছে। এতে এডিট করে আমার ছবি যুক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এটি ছড়িয়েছে। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয়ের বিষয়টি অনুধাবন করে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা সিলেটে এই নগ্ন খেলায় মেতে উঠেছে। নগরবাসী বিষয়টি বুঝতে পেরে আরও দুর্বার গতিতে লাঙ্গলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আমার বিচার দেওয়ার জায়গা নেই। ২১ জুনের নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে নগরবাসী এর বিচার করবে।

জলাবদ্ধতা দূর করার প্রত্যয় আ.লীগ প্রার্থীর : সিলেট সিটি করপোরেশনকে জলাবদ্ধতামুক্ত নগর গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। বুধবার দুপুরে নগরীর কাজিরবাজার, শিবগঞ্জ সোনারপাড়া, ফরহাদ খাঁর পুল এলাকায় গণসংযোগ ও বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া এলাকা পরিদর্শনকালে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ভোর থেকে প্রায় দুপুর পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। অনেকের ঘরে বা বারান্দায় পানি উঠে যায়। বয়স্ক মহিলা ও শিশুদের নিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েছিলেন কেউ কেউ। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে এসব অসহায় মানুষের কাছে ছুটে যান, তাদের পাশে দাঁড়ান।

তিনি দুর্ভোগে পড়া মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি নির্বাচিত হলে জলাবদ্ধতা নিরসনে ছড়া-খাল উদ্ধার ও ড্রেনেজ সিস্টেম আরও উন্নত করব। একটু বৃষ্টিতে নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হবে না আর। পাশাপাশি সুরমার নাব্য বৃদ্ধিতে ড্রেজিং করা হবে। স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করব। সব দিক দিয়েই সিলেট হবে একটি সত্যিকারের স্মার্ট সিটি।

গণসংযোগকালে উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অসিত শ্যাম সজল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল হক মঞ্জু, সিলেট চেম্বারের সভাপতি তাহমিন আহমদ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফখরুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক চন্দন রায়, পশ্চিম কাজিরবাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল হক জাহাঙ্গীর। এছাড়া মঙ্গলবার রাতে নগরীর রায়নগর সোনারপাড়া আব্দুর রহমান জামিলের বাসভবনের সামনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সমর্থনে নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

নৌকার প্রচারণায় নায়ক ফেরদৌস : সিসিকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। বুধবার বিকালে মহানগরীর তালতলা, মির্জাজাঙ্গাল, লামাবাজার এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর প্রচারণায় অংশ নেন তিনি। এ সময় তাকে দেখতে ভিড় জমান স্থানীয় ভোটাররা। ফেরদৌস বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ২১ তারিখ নৌকা মার্কায় ভোট দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিলেটেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দেশের অন্যান্য সিটির তুলনায় সিলেট সিটিতে আশানুরূপ উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। নৌকা জয়ী হলে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন হবে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *