Home সারাদেশ দুই-তৃতীয়াংশ ওয়ার্ডে সংঘাতের শঙ্কা
জুন ১১, ২০২৩

দুই-তৃতীয়াংশ ওয়ার্ডে সংঘাতের শঙ্কা

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দুই-তৃতীয়াংশ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা চলছে।

তাদের মতে, এটি সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। শুধু কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে নয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরাও এতে জড়িয়ে পড়তে পারেন। কারণ প্রায় সব ওয়ার্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।

পাশাপাশি নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপির নয়জন ও জামায়াতের পাঁচজন প্রার্থীও এ ভোটের মাঠে রয়েছেন। পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে সব পক্ষই মাঠে রয়েছেন।

গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক প্রতিবেদনে এমন শঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি- জামায়াত সুকৌশলে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি করতে পারে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও পুলিশ কমিশনার দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আরও জানা গেছে, প্রভাব বিস্তার ও সংঘাতের ওই আশঙ্কা থেকে এ সিটি করপোরেশনের ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৬১টি ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ জন সদস্য মোতায়েন করা হচ্ছে।

এসব কেন্দ্রে ভোটারদের যাতায়াতের পথেও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সহিংসতার ঝুঁকি বিবেচনায় পুলিশ ১১টি ওয়ার্ডে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। র‌্যাব তাদের বোম ডিসপোজাল টিম প্রস্তুত রেখেছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে যাদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করা হয়েছে তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন এ প্রতিবেদক। তাদের সবাই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ করেছেন। তবে নিজ থেকে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও সংঘাতে জড়ানোর সম্ভাবনাকে অস্বীকার করেছেন।

সহিংসতার আশঙ্কার বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঞা যুগান্তরকে বলেন, আমরা বড় আকারে সংঘাতের আশঙ্কা করছি না। কয়েকটি ওয়ার্ডে সংঘাত হতে পারে-এমন আশঙ্কা থেকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সম্প্রতি থানায় ডেকেছিলাম। তারা কোনো সহিংসতায় জড়াবেন না-এই মর্মে তাদের কাছ থেকে আন্ডারটেকেন (লিখিত) নিয়েছি।

যদিও বিএনপি দাবি করেছে তারা এ নির্বাচনে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয়। তাই সহিংসতায় জড়ানোর প্রশ্নও আসে না। এ নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। এমনকি তাদের নেতাকর্মীরা যাতে কেন্দ্রে না যান সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা যুগান্তরকে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে নেই, ভোটকেন্দ্রেও যাবে না। সুতরাং কেন্দ্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হলে সেজন্য কোনোভাবে আমরা দায়ী হব না। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের যেসব নেতাকর্মী এ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। যারা নির্বাচনি প্রচারে অংশ নিচ্ছেন তাদের শোকজ করা হয়েছে। তারা যদি ভোটকেন্দ্রে যান তার দায়-দায়িত্ব বিএনপি নেবে না।

খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাল সোমবার ভোটগ্রহণ করা হবে। এ নির্বাচনের ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা বিনা ভোটেই জয়ী হয়েছেন। বাকি ২৯টিতে কাউন্সিলর পদে ভোট হবে। তবে মেয়র পদে সব কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণ করা হবে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩৬ জন ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সূত্রমতে, যেসব ওয়ার্ডের বিভিন্ন কেন্দ্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে-১, ৪, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৪, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৮, ৩০ ও ৩১টি। এর মধ্যে এক নম্বর ওয়ার্ডে ৮টি কেন্দ্রে ১৬ হাজার ৭৫৫ জন ভোটার রয়েছেন। এ ওয়ার্ডে ছয়জন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নেতা এসএম আজিজুর রহমান স্বপন এবং আওয়ামী লীগের মো. মনিরুজ্জামান খান খোকন, শেখ আব্দুর রাজ্জাক ও মো. শাহাদাত মিনাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে আজিজুর রহমান স্বপন ও শাহাদাত মিনার বাড়ির পাশে ভোটকেন্দ্র রয়েছে।

ওইসব কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব বিস্তার নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এছাড়া এ ওয়ার্ডের ৬ ও ৭ নম্বর কেন্দ্রের ৫৩২৪ জন ভোটারের বেশিরভাগই সংখ্যালঘু। তাদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ওয়ার্ডের ৮টির মধ্যে ৬টিই ঝুঁকিপূর্ণ। জানতে চাইলে মো. শাহাদাত মিনা যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের ভরাডুবির আশঙ্কায় প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন পায়ে পা দিয়ে সংঘাতের চেষ্টা করছে। এজন্য প্রতিকার চেয়ে বারবার নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছি। উলটো নির্বাচন কমিশন আমাকে ডেকে সতর্ক করেছে।

৪ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচজন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী, বিএনপি ও জামায়াতের সাবেক নেতাও কাউন্সিলর পদে লড়ছেন। তাদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গোলাম রাব্বানী ও যুবলীগ নেতা বিএম জামিরুল ইসলামের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। এছাড়া ২৯ ও ৩০ নম্বর ভোটকেন্দ্র বিএম জামিরুল ইসলামের বাড়ির পার্শ্বে অবস্থিত এবং দুটি কেন্দ্রের মধ্যে দূরত্ব ২০০ গজের মতো। এছাড়াও সেখানে বর্তমান কাউন্সিলর সাবেক বিএনপি নেতা মো. কবির হোসেন কবু মোল্যা ও জামায়াতের সাবেক নেতা মোহাম্মদ আশরাফ হোসেনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আশরাফ হোসেন এ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। একাধিক শক্ত প্রার্থীর মধ্যকার প্রভাব বিস্তার ও সংঘাতের শঙ্কা থেকে এ ওয়ার্ডের ছয়টি কেন্দ্রের সবকটি ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়েছে। সেখানে পথে পথে ভোটারদের বাধা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে গোলাম রাব্বানী যুগান্তরকে বলেন, এ ওয়ার্ডে একজন চরমপন্থি ক্যাডার রয়েছেন। সে একজন সংসদ-সদস্যের ছত্রছায়ায় ক্যাডার বাহিনী জড়ো করছেন। তিনি নির্দিষ্ট কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রভাবিত করার কাজ করবেন। এক প্রশ্নের উত্তরে গোলাম রাব্বানী বলেন, আমি সুষ্ঠু ভোটের পক্ষে।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের ৮টি কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে ২৩ হাজার ৯৯৯ জন ভোটার রয়েছেন। এ ওয়ার্ডে ৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। এ ওয়ার্ডের বস্তিবাসী ভোটার সংখ্যা অনেক। সেখানেও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কা করা হচ্ছে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচজন কাউন্সিলর প্রার্থী থাকলেও বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা কাজী তালাত হোসেন (কাউক) ও যুবলীগ নেতা শরিফুল ইসলাম প্রিন্সের সমর্থকদের মধ্যে ‘ঝামেলা’র আশঙ্কা করা হচ্ছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ছয়জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে অন্তত তিনজনই আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা। এ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মুনশী আ. ওদুদ, একই দলের মো. নাইমুল ইসলাম খালেদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ওই ওয়ার্ডে সন্ত্রাসীদের আনাগোনা রয়েছে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ৮০ ও ৮১ নম্বর ভোটকেন্দ্রে এর আগের নির্বাচনেও গন্ডগোল হয়েছিল। এ ওয়ার্ডের বেশিরভাগ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।

১২ নম্বর ওয়ার্ডে খুলনা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মো. শফিকুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বর্তমান কাউন্সিলর মো. মনিরুজ্জামান গত নির্বাচনে বিএনপির হয়ে নির্বাচিত হন। এবার তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এ ওয়ার্ডের আটটি কেন্দ্রের মধ্যে তিনটিতে ঝামেলা হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ তিন কেন্দ্রে বিহারি ভোটার বেশি।

সোনাডাঙ্গার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আনিছুর রহমান বিশ্বাস ও শেখ হাসান ইফতেখার চালু এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর আওয়ামী লীগের শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ ও একই দলের মো. ইউছুফ আলী খানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের নেতারাও রয়েছেন। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এই ওয়ার্ডের ৫টি কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকদের মধ্যে ত্রিমুখী প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি কেন্দ্রে বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২১ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন, শ্রমিক লীগের সভাপতি মোতালেব মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ নির্বাচনে তা চাঙ্গা হতে পারে। এছাড়া এ ওয়ার্ডের তিনটি কেন্দ্রের কিছু কিছু অংশে বাউন্ডারি নেই। এছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো নয়। এসব কেন্দ্রে সহিংসতার আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইভাবে ২৪, ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তারা ১১টি ওয়ার্ডকে বেশি সহিংসতা প্রবণ মনে করছেন। ওইসব ওয়ার্ডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে-১, ৪, ৭, ১০, ১৬, ১৯, ২১, ২২, ২৬, ২৬ ও ৩১।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *