আলহামদুলিল্লাহ শব্দে ছেয়ে গেছে তুরস্কের মিডিয়া
অনলাইন ডেস্ক,
গতকাল সারারাত তুরস্কের শহর-নগর-বন্দরসহ সর্বত্র উৎসবের বন্যা বইয়ে গেছে। মধ্যা রাতে রাস্তায় মানুষ নেছে আসেন। গাড়ীতে উচ্চ গান বাজিয়ে, রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে, নৃত্য করে তারা এই উৎসবের যোগ দিয়েছে। সেই উৎসবের রেশ থাকবে সপ্তাহব্যাপী। এরদোগানের জয়ে ফিস্তিনির গাজ্জায় উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন নিরীহ ফিলিস্তিনিরা। হামাস সদস্য আকাশে গুলি ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করে।
নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রেসিডেন্টের সমর্থকরা চুপষে ছিলেন। কারণ বিশ্বমিডিয়া প্রচার করেছে যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটে এবার রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান হেরে যাবেন। তুরস্কের ইতিহাস থেকে মুছে যাবে তার নাম। কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে তার সমর্থকরা প্রমাণ করেছে তাদের প্রিয় নেতা ইতিহাস থেকে মুছে যাননি বরং আরোও জনপ্রিয় হয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করছেন।
ইতোমধ্যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, সৌদি আরব, পাকিস্তান, আজারবাইজান, কাতার, হাঙ্গেরি, উজবেকিস্তান, উত্তর সাইপ্রাস, লিবিয়া, আফগানিস্তান, ইরান, ফিলিস্তিন, জর্জিয়া, আলজেরিয়া, কসোভো ও সোমালিয়াসহ বিশ্বের ৫০ টির বেশি দেশ ১৩তম নবনির্বাচিত তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এখন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী থেকে শুরু করে তুরস্কের গণমানুষের সোশ্যাল মিডিয়ায় আলহামদুলিল্লাহ শব্দে ছেয়ে গেছে।
তুরস্কের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান একটি সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক নীতির মাধ্যমে দৃঢ়তা, বাস্তববাদিতা এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে তুরস্কের প্রভাব প্রসারিত করেছে। ২০০২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এরদোগানের সবচেয়ে প্রভাবশালী নীতিগুলোর মধ্যে একটি ছিল আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে তুরস্কের ভূমিকা গতিশীল রাখা। এরদোগানের লক্ষ্য ছিল তুরস্ককে এ অঞ্চলে ও এর বাইরেও একটি প্রধান শক্তি হিসাবে তুলে ধরা। উদাহরণস্বরূপ, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে, সিরিয়ার বিরোধী দলগুলোকে সমর্থন করেছিল ও লাখ লাখ সিরীয় উদ্বাস্তুকে সাহায্য প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এটি করার মাধ্যমে এরদোগান মূলত তুর্কি শক্তিকে জানান দেয়, সংঘাতের গতিপথকে প্রভাবিত করা। এরদোগানের নেতৃত্বে সিরিয়ার শরণার্থী সংকটে তুরস্কের প্রতিক্রিয়া প্রশংসনীয়।
এরদোগানের বৈশ্বিক নীতি নব্য-ওসমানী ও প্যান-ইসলামিক পরিচয়ের নীতি দ্বারা অবহিত করা যায়, যা মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে তুরস্কের ঐতিহাসিক প্রভাবকে পুনরুজ্জীবিত করার আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। উসমানীয় খিলাফতে ঐতিহ্যের আহ্বান জানিয়ে এরদোগান মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সংহতি গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। এর মাধ্যমে তুর্কি জনগণের কাছে ও মুসলিম বিশ্বের মধ্যে নিজেকে বিশ্ব নেতা হিসাবে স্থান করে নিয়েছেন।
এরদোগানের সরকার সারা বিশ্বে, বিশেষ করে আরব বসন্তের সময় ইসলামি আন্দোলন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করেছিল। তুরস্ক মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুডের মতো গোষ্ঠীকে সমর্থন করেছে এবং সিরিয়ায় বিরোধী শক্তিকে সমর্থন করেছে। এই গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন প্রদর্শনের মাধ্যমে এরদোগান মুসলিম দেশগুলোতে উম্মাহের ঐক্যের একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করাসহ তুরস্কের আঞ্চলিক উদ্দেশ্যগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল এমন মিত্রদের এক করে তোলার অভিপ্রায় করেছিলেন।
টানা তৃতীয় মেয়াদে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রজব তাইয়্যেব এরদোগান। রোববার (২৮ মে) দ্বিতীয় দফার ভোটে তার ভাগ্য নির্ধারিত হয়।
নির্বাচিত হওয়ার পর ইস্তাম্বুলের উসকুদারে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় এরদোগান বলেন, এ নির্বাচনে তুরস্কেরই জয় হয়েছে।
এ জয়ের ফলে ‘তুরস্কের শতাব্দির’ দোয়ার খুলেছে- উল্লেখ করে এরদোগান বলেন, ‘এ নির্বাচনের ফলাফল এটাই দেখিয়েছে যে, কেউ তুরস্কের সফলতা ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’
তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে উদ্দেশ করে বলেন, রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) তাদের খালাপ ফলাফলের জন্য কিলিচদারোগ্লুকেই দায়ী করবে। গত নির্বাচনের তুলনায় এবার পার্লামেন্টে সিএইচপির আসন আরো কমেছে।
দ্বিতীয় দফার এ নির্বাচনে ৯৯.১৭ শতাংশ ভোট গণনায় দেখা গেছে এরদোগান পেয়েছেন ৫২.০৮ শতাংশ ভোট আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী কামাল কিলিচদারোগ্লু পেয়েছেন ৪৭.৯২ শতাংশ ভোট।
প্রথম দফায় কেউ নিয়ম অনুসারে ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ করতে হয়।
তৃতীয়বারের মতো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার প্রেক্ষাপটে রজব তাইয়্যিপ এরদোগান দেশে ও বিদেশে আরো শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন। এশিয়া, ইউরোপে তুরস্কের প্রভাব বাড়তে পারে এবং ন্যাটোতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন এরদোগান।
রোববার দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে এরদোগানের জয় নিশ্চিত হয়। তিনি ৫২.১৪ ভাগ ভোট পেয়ে জয় নিশ্চিত করেন। তার চ্যালেঞ্জার কামাল কিলিচদারুগ্লু পেয়েছেন ৪৭.৮৬ ভাগ ভোট।
জয়ের পর প্রথম মন্তব্যে এরদোগান তার প্রতি আস্থা রাখার জন্য জাতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আপনাদের আস্থার প্রতি যথাযথ সম্মান দেব আমরা, যেমন ২১ বছর ধরে দিয়েছি।’
ইস্তাম্বুলে তিনি তার বাড়ির বাইরে সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আজ কেবল তুর্কিয়েই জিতেছে। আমাদের জাতিকে কেউ খাটো করে দেখতে পারবে না।’ তিনি তুরস্কের দ্বিতীয় শতকে কঠোর পরিশ্রমের প্রতিশ্রুতি দেন।
নির্বাচন কমিশনের ফলাফল ঘোষণার আগেই তুরস্কের জনতা উল্লাস প্রকাশ করে দিয়েছিল। ফলাফল প্রকাশের পর পুরো তুরস্ক আনন্দে ফেটে পড়ে। তারা তুর্কি ও ক্ষমতাসীন একে পার্টির পতাকা দোলায়, গাড়ির হর্ন বাজায়, তার নামে স্লোগান দেয়। ইস্তাম্বুলের আশপাশে জয় উদযাপনের গুলির শব্দও শোনা গেছে। সূত্র : আরব নিউজ ও অন্যান্য