Mei ৩০, ২০২৩
পীর গোলাম সালমানী আব্বাসী’র জীবন ও কর্ম
১১৭ 18 second read
- কায়ছার উদ্দীন আল-মালেকী
বিশ্বে যেসকল তরীক্বতের মহান সাধক পুরুষ তাঁদের কর্মযজ্ঞের কারণে সমধিক প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন তন্মধ্যে পীর গোলাম সালমানী আব্বাসী এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি কাদিরিয়া,চিশতিয়া, নক্সবন্দীয়া, মোজাদ্দিদীয়া তরীক্বার পীর ছিলেন। তাঁর কলমে লেখা হয়েছে অসংখ্য গ্রন্থরাজি। আত্মিক শুদ্ধ পুরুষ হিসেবে বিশ্ব দরবারে তাঁর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তাঁর দর্শন ছিলো, মানুষের মাঝে আধ্যাত্মিক চিন্তাচেতনার বিকাশ ঘটানো ও নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করা।
এ মহান মনীষীর পিতা-মাতার বংশধারা হজরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রা.)’র সাথে মিলিত হয়েছে। তিনি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার শ্রীরামপুর মহকুমার জাঙ্গিপাড়া থানার ফুরফুরা শরীফের মোল্লাপাড়ায় ১৮৫৪ সালের ১ জুলাই ৫ সওয়াল ১২৭০ হিজরী, ১৭ আষাঢ় ১২৬১ বঙ্গাব্দে মাতা যাহিদুন্নিসা ও পিতা গোলাম রব্বানি আব্বাসীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।
তরীক্বত জগতে যেকজন দিকপাল বিজ্ঞ জ্ঞানী ছিলেন,তন্মধ্যে তিনি একজন। তিনি পীরতান্ত্রিক বাণিজ্য নীতি পরিহার করে আমরণ শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। তিনি যুগশ্রেষ্ঠ হাদিস বিশারদ মাওলানা আহমদ আলী সাহারানপুরি (১৮১০-১৭ এপ্রিল ১৮৮০) সহ বহু জ্ঞানী গুণী জগৎ বিখ্যাত মনীষীদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন।
তিনি আরবী,ফারসি ও উর্দ্দু ভাষার যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। ইলমে তফসির, ইলমে হাদীস, ইলমে ফেকাহ, ইলমে বালাগাত, ইলমে ফাসাহাত, ইলমে মানতিক, ইলমে ক্বিয়াস,ইলমে শরীয়াত, ইলমে তরীক্বাত, ইলমে মারেফাত ও ইলমে হাক্বীকাত সহ নানান বিষয়ে তাঁর অসাধারণ দক্ষতা ও নিপুণতা ছিলো। এমনকী নানাবিধ প্রতিভা ও বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। হুগলি মাদ্রাসা ও কলকাতা আলীয় মাদ্রাসা থেকে কৃতিত্বের সাথে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে ১৮৮৭ সালে হুগলি মাদ্রাসায় অধ্যাপক হিসেবে চাকরীজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে উক্ত প্রতিষ্ঠানে হেড মাওলানা পদে পদোন্নতি হন। ১৮৯০ সালে চতুর্থ অধ্যাপক হিসেবে মনোনয়ন পান কলকতা আলীয়া মাদ্রাসায়। ১৯১০ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিতে হুগলি মাদ্রাসায় এ্যাসিসট্যান্ট সুপারিন্টেনডেন্ট হিসেবে নিযুক্ত হন । ১৯১০ সালের ৯ ই নভেম্বর সেন্ট্রাল পরীক্ষার পরীক্ষক নির্বাচিত হন। ১৯১০ সালে হজ্বব্রত পালন করেন। ১৯১১ সালের ১২ই ডিসেম্বর কলকাতার রাজভবনে বৃটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জ প্রদত্ত ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড চার্লস হার্ডিঞ্জ সাক্ষরিত “ শামসুল উলামা- ই- হিন্দ ” (যা পদ্মশ্রীর সমতুল্য) সনদে ভূষিত হন। উল্লেখ্য যে, তিনি সৌদি আরব সরকার কর্তৃক “সুলতান-উল-আরিফীন (ধার্মিকদের রাজা), মক্কা শরীফের উলামা পরিষদ প্রদত্ত “শেইখুল হিন্দ” (ভারতের গুরু), হিন্দুস্তানের উলামা কর্তৃক “বড়ো মাওলানা” উপাধিতে ভূষিত হন।
আল্লাহ তা’লা যাঁর মঙ্গল চান, তাঁকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন (বুখারী-৭১)। মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও সত্য অনুসন্ধানীরা নিত্যদিন তাঁর কাছে ভিড় জমাতেন। তিনি কুরআন-হাদিস ও ইজমা-ক্বিয়াসের ভিত্তিতে মানুষের সমস্যা ও জিজ্ঞাসা কিতাব সামনে রেখে সমাধান দিতেন। ফিকাহ শাস্ত্রে বাংলার বিদগ্ধ আলমদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করতেন।
অ্যাকাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক পরিমন্ডলেও তাঁর বিচরণ ছিলো অকল্পনীয়। বস্তুতঃ চর্ম চোখ দিয়ে যেমনি শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা সনাক্ত করা যায়না তেমনি শরীয়তের জ্ঞান দিয়ে আল্লাহর চূড়ান্ত সান্নিধ্য লাভ করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন শরীয়ত সমর্থিত কর্মপদ্ধতির অনুশীলন। যা অতীব কঠিন ও কষ্টসাধ্য। এ পথের শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই। বেলায়াত এমন একটি ক্রমধারা, যা অতিক্রম করতে সাধনা ব্যতিরেখে আল্লাহর করুণা আবশ্যকীয়। এজন্য প্রয়োজন একজন আত্মিক শুদ্ধপুরুষ। যার সাথে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূল (দ.)’র রূহানি যোগাযোগ বিদ্যমান থাকে। যে যোগাযোগের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন পীর ও মুর্শিদের কলব হয়ে নবী করিম (দ.)’র ফয়েজ ও বরকত অর্জিত হয়। বলাবাহুল্য যে, যার মধ্যে সামান্যতম আত্মার কুপ্রবৃত্তির দাসত্ব থাকে, তাঁর মধ্যে কামালিয়াত নেই বললেও চলে! সত্যিকার অর্থে, আল্লাহ ওয়ালাদের কলব থাকে স্বচ্ছ ও পরিশুদ্ধ। তাঁরা সমস্ত নোংরামি থেকে নিজেদের ধ্যানধারণা, চিন্তাচেতনা, অনুভূতি ও কলব কে সুরক্ষিত রাখেন। তাঁরা দুনিয়ার ক্ষমতা, যশখ্যাতি, সম্পদ ও বিলাসী জীবন পরিহার করে গরীবী হালতে সাধারণ জীবনযাপন করে থাকেন। শাহ্সূফী সালমানী সাহেবও এমন একজন পথপ্রদর্শকের সন্ধানে ছিলেন। তাঁর পীর ছিলেন-বিশ্ববরেণ্য আউলিয়া প্রথম বাঙালি ফারসি কবি, পীর হজরত সুফি সৈয়দ ফতেহ আলী শাহ ওয়সী (রহ.)। তাঁর বিখ্যাত ফারসি কাব্যগ্রন্থ “দিওয়ানে ওয়াইসী”। পীর ফতেহ আলী (রহ.) আবুবকর সিদ্দিকীকে “খোলা বাকস” এবং গোলাম সালমানি আব্বাসিকে “ঢাকা বাকস” নামে সম্যক অভিহিত করেছেন। এ সিলসিলা সূফি সাইয়্যিদ ফতেহ আলী ওয়সী ও শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী হয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত পৌঁছেছে।
তাঁর স্বভাব চরিত্র ছিলো, খুবই গাম্ভীর্য প্রকৃতির ও ঠান্ডা মেজাজী। তিনি খুবই সাদামাঠা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। আল্লাহর নূরে পরিপূর্ণ ছিলো তাঁর কলব। ইসলামী পরিভাষায় ইলমে দ্বীন তথা দ্বীনের জ্ঞান কে নূর বা জ্যোতি বলা হয়েছে। আগুন এবং পানি যেমন একস্থানে থাকতে পারে না অনুরূপে ইলম ও নাপাকি একস্থানে থাকতে পারে না। তিনি সবসময় সুন্নাতের প্রতি অটল ও অবিচল থাকতেন। এজন্য তাঁকে সুন্নাতের জ্বলন্ত প্রতীক বলা হয়। মানুষের বিপদে, রোগীর সেবায়,অশ্লীল বাক্যালাপে মুচকী হাসি, একাগ্রতাও একানিষ্ঠার সাথে দ্বীনের কাজ,ধনীদের প্রতি অনিহা প্রকাশ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায়, নামাজের প্রতি গভীর মনযোগ, পর্দার ব্যাপারে কঠোর,গরীবের সাথে উঠাবসা এসব বৈশিষ্ট্য ছিলো তাঁর অনুপম চরিত্রের অন্যতম দিক। অল্পবয়সী হলেও তিনি সকলকে আগে সালাম জানাতেন। কেউ প্রথমে তাঁকে সালাম জানাতে পারতেন না।
এপয়েন্টমেন্ট ব্যতিত তাঁর সাথে কেউ স্বাক্ষাৎ করতে পারতেন না। তবে দুনিয়াত্যাগী ফকিরনিদের বিনা অনুমতিতে স্বাক্ষাৎ দিতেন। তিনি বলতেন, যারা আল্লাহর সন্ধানে আসবে; তাঁদের জন্য আমার দরজা সর্বদা খোলা। তরীক্বত প্রচার-প্রসারের দিক দিয়ে তিনি ছিলেন, প্রচারভিমুখী। যাঁকে তাঁকে তরীক্বতের কাজ দিতেন না। কারণ, অপাত্রে কন্যা দান করলে যে অবস্থা; অমনোযোগী মানুষকে তরীক্বতের কাজ দিলেও সে অবস্থা। তিনি এ ধরণীতে অসংখ্য ছাত্র রেখে গেছেন, তন্মধ্যে চট্টগ্রামের মৌলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এবং ভারতের আল্লামা রুহুল আমিন অন্যতম। দ্বীন ইসলামের ঝাঁন্ডা কে পৃথিবীর বুকে সমুন্নত রাখার জন্য: পৃথিবীতে রেখে গেছেন অসংখ্য দ্বীনের দাঈয়ী এবং অসংখ্য খলিফা। যাদের প্রভাবে হাজারো মানুষ ভ্রান্ত পথ থেকে বেরিয়ে আলোর পথে এসেছেন। খলিফাগণের নাম ও ঠিকানা, শাহ মাহাতাবউদ্দিন (পুকুরনিয়া, পাবনা), শাহ সুফি আবদুল মজিদ (করমজি, বগুড়া), হাজি আবদুল্লাহ (ভদ্রেশ্বর, সিলেট), সৈয়দ আবদুল বারী (ব্যাণ্ডেল, হুগলি), আমিনুল ইসলাম (ইন্সপেক্টর জেনারেল, কলকাতা), হাজি আবদুল লতিফ (ইন্সপেক্টর, বর্ধমান), নবাব সুলতান আলম (আইনজীবি, হাইকোর্ট), হাজি মোঃ দাউদ (শাস্তিপুর, নদিয়া), মাওলানা হায়দার আলি (সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম), মাওলানা মুহাব্বত আলি (বড়ো গোয়ালি, ত্রিপুরা), মাওলানা আবদুল হালিম (উদয়পুর, খুলনা), মাওলানা গুলজার হোসেন (ফুলতলা, খুলনা), আবদুল জওয়াদ (আইনজীবি, কলকাতা হাইকোর্ট), মাওলানা মুহাম্মদ মাজহার (অধ্যাপক, কলকাতা মাদ্রাসা), মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াকুব (সদর কাজি, বগুড়া), হাজি বরকতুল্লাহ (পাইকড়, বগুড়া), আলেক মাহমুদ (বেলাইল, বগুড়া), দিদার মাহমুদ সরকার (হিলিবাজার), আনিসউদ্দিন আহমদ (মহেশপুর, ক্ষেতলাল), মুআজ্জম আলি (পাবনা), তফাজ্জল আলি (সিলেট), হাফেজ ফতেহ নসীব (কলকাতা), মাওলানা হাফিজুল্লাহ (পূর্ব-ইয়ারপুর, নওয়াখালি), মুহাম্মদ নিজামউদ্দিন খাঁ (পুডরা, ফরিদপুর), মাওলানা আশরাফ আলি (বাঁশখালি, চট্টগ্রাম), মুহাম্মদ ইউনুস (ময়মনসিংহ), আবদুল আজিজ (কুমিল্লা), মহিউদ্দিন চৌধুরী (কামদিয়া, গাইবান্ধা), মাওলানা এহসান আলি (বীরভূম), মাওলানা আবদুর রউফ (এনায়েনপুর, নওয়াখালি), গোলাম সরওয়ার (শশীপুর, ২৪ পরগণা), কাজি নসিমউদ্দিন (বাকসাডাঙ্গী, যশোহর), হাবিবুর রহমান (বগুড়া), ফজলে করিম (কলকাতা), আবদুল গফফর (জব হাসপাতাল), মাওলানা আবদুল অহেদ (বেরইল, যশোহর), ডাঃ আবদুল আজিজ (চারিখাদা, যশোর) প্রমুখ।
তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী ও মনোনীত খলিফা হলেন, সাইয়্যিদ আবদুল বারী (রহ)। যার মাধ্যমেই এ সিলসিলা এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকা আরব সহ বিশ্বের বহু দেশে প্রসারিত হয়েছে। চট্টগ্রামে এ সিলসিলা “বারীয়া হামেদীয়া” নামে সমধিক পরিচিত। সাইয়্যিদ আবদুল বারী শাহ্ (রহ.)’র সুযোগ্য খলিফা হাফেজ হামেদ হাসান আলভী আজমগড়ী (রহ.) প্রায় সময় তাঁর সোহবত লাভ করতেন। সালমানী (রহ.) হাফেজ হামেদ হাসান কে খুবই সমাদর করতেন এমনকী বিনা এপয়েন্টমেন্টে স্বাক্ষাতের সুযোগ দিতেন। তিনি আরোও বলতেন, আপনার মুরিদের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা।
তিনি অনুসারীদের থেকে নাজরানা নেওয়া অপছন্দ করতেন, কিন্তু খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করতেন। সূফীবাদ বা তরীক্বতের নামে ভন্ডামী ও কুসংস্কার মূলক কর্মকান্ড কে অপছন্দ করতেন। এজন্য, বংশধরদের আদেশনামায় লিখেছেন, “পীর-মুরিদি, মক্তব-মাদ্রাসার নামে চাঁদা আদায়,জাকাত-ফিতরা ভিত্তিক অর্থ সংগ্রহ, তাবিজের উপার্জিত পথ পরিহার করে বৈধ ব্যবসা-চাকরির পথই উত্তম পন্থা।”
তাসাউফ পন্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি কিছু অসাধারণ কথা বলে গেছেন। তন্মধ্যে, (১) মারেফাতের পথ বড়ো দুর্গম, সূক্ষ্ম ও সুকঠিন। (২) ফকিরীর বাসনা যদি জাগে, তাহলে চোখ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে অন্ধ ভাবতে হবে, কান থাকা সত্ত্বেও বধির বনে যেতে হবে, জিভ রয়েছে, তবু বোবা সাজতে হবে। (৩) বিশ্বনবি (দ.)’র “দর্শাই-ই-নবুওয়তের” সব কিছু শেষ হয়েছে। দর্জা-ই-বিলায়ত”-এর সফর এখনও চলমান। যেদিন বিশ্বনবি (সা.)’র “সাইরে বিলায়ত” পূর্ণ হবে, সেদিন মহাপ্রলয় আসন্ন হবে। (৪) হাওয়ায় উড়ে যাওয়া, পানির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া এবং নাসুতি, মলোকুতি, জাবারুতি বা লাহুতি সায়র করা ফকিরীর মূল বিষয় নয়। সত্য নিজেকে চিনতে পারলে “ফকির” হওয়া যায়। (৫) আল্লাহ ছাড়া আর সব কিছু থেকে অন্তরকে যখন মুক্ত, পরিশূন্য করবে, তখন আল্লাহর নৈকট্য লাভ হবে।
তাঁর কাশফ ছিলো খুবই সূক্ষ্ম ও তীক্ষ্ণ । সর্বদায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন। তাঁর অসংখ্য ও অগণিত কারামাতের জনশ্রুতি এখনোও লোকমুখে শুনা যায়। আহলে সুন্নাত ওয়াত জামাতের বিশুদ্ধ আকিদা মতে, আল্লাহর ওলিগণ কবরে স্বশরীরে জীবিত আছেন।অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, তাঁর কবরের পাশে মুরাক্বার হালতে চোখবন্ধ করে ধ্যান করলে এখনো ফয়েজ ও বরকত হাসিল হয়। আল্লাহ তা’লা পবিত্র কুরআনুল করিমে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন, জেনে রাখ! আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং দুঃখিত হবেনা (ইউনুছ-৬২)। বস্তুত! আল্লাহর ওলীগণ ইহকাল ও পরকাল নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। তাঁরা সবসময় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ.)’র প্রেমে বিভোর থাকেন। দুনিয়াদারি নিয়ে তাঁরা উদাসীন। তাঁদের জবানে ও কলবে থাকে আল্লাহর জিকির। তাঁরা দুনিয়ার ভোগবিলাস হতে মুক্ত। তাঁরা অল্প আহারে ও স্বল্প কথনে অভ্যস্ত। দুনিয়া ভোগীদের উপর কেউ যদি মিথ্যা অপবাদ দেয় বা মারধর করে; তাদের নেতা বা লিডার যেমন স্বহস্তে বিচার করে। অনুরূপে আল্লাহর ওলিদেরও একজন মালিক আছেন; যিনি আরশের মালিক; যার ক্ষমতা চিরস্থায়ী,যিনি এক ও অদ্বিতীয়। এজন্য আল্লাহ তা’লা বান্দাদের সাবধান করে হাদীসে কুদসীতে উল্লেখ করেছেন, “যে বা যারা আমার (আল্লাহ) ওলীর (বন্ধু)’র সাথে শত্রুতা/হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করে বা সমালোচনা করে; রোজ হাশরে! আমি (আল্লাহ) স্বয়ং তাদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করবো।”
তিনি ঢাকঢোল পিটিয়ে তরীক্বত চর্চাকে অপছন্দ করতেন। তিনি অতিগোপনীয়তার সাথে তরীক্বতের অনুশীলন ও কর্মশালা আঞ্জাম দিতেন। কেউ তাঁর অনুসারী হতে ইচ্ছে পোষণ করলে, তাঁকে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতেন। এমনকী যাচাই বাচাই ও ছাটাই করে অনুসারীদের তরীক্বতের অজিফা ও ছবক দিতেন।
এ মহান সফল ধর্ম প্রচারক ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ ১৯১২ সালের ১ জুলাই (১৭ আষাঢ় ১৩১৯ বঙ্গাব্দে) আটান্ন বছর বয়সে হুগলি শহরের খিড়কিঘাটের (ঘোলঘাট) অদূরে আবদুল করিম সাহেবের বাড়ীতে সোমবার বৈকাল ৫-২০ মিনিট ফিরিশতা সঙ্গে আরবি ভাষায় কথাবার্তা বলে হঠাৎ পরলোক পাড়ি দেন। পরের দিন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস—আদালত ছুটি ঘোষিত হয়। সালাতে জানাযা সমাধা করেন, পীর আবুবকর সিদ্দিক (রহ.)। তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ- বাংলার গভর্ণর টমাস গিবসন কারমাইকেল, ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড চার্লস হার্ডিঞ্জ, আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলেকজাণ্ডার হ্যামিলটন, বৃটিশ সম্রাট পঞ্চম জর্জ প্রমুখ। পীর আবুবকর সিদ্দিকী তাঁকে “জিন্দা পীর” বলে আখ্যায়িত করতেন। ১৯১৩ সাল হতে আজ অবধি তাঁর স্মরণ সভা (ঈসালে সওয়াব) চলমান রয়েছে। অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়
গুডফ্রাইডের পরের দিন। ইয়া আল্লাহ! এ মহান ওলিয়ে কামেলের পদাঙ্ক অনুসরণ ও অনুকরণের তৌফিকে ধন্য করুন। আমিন।
কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন-
নাছের উদ্দীন আব্বাসী
(তিনি একাধারে কবি, লেখক, গবেষক, সংগঠক।)
প্রপৌত্র- পীর গোলাম সালমানী আব্বাসী (রহ.)
DON'T MISS
আইসিটি বিভাগে চাকরি পেলেন দুই হাত হারানো সেই অদম্য রায়হান
রায়হান যখন স্কুলের ছাত্র তখন ট্রান্সফরমারের বৈদ্যুতিক তারের স্পর্শে তার দুই হাত ঝলসে যায়। …