স্মার্ট বাংলাদেশ রূপরেখায় থাকছে ৪০ মেগা প্রকল্প
আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেটে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’-এর রূপরেখা তুলে ধরা হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের পর ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা এটি। সেখানে প্রধান চারটি কৌশল হবে-স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। এছাড়া স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট বাণিজ্য ও স্মার্ট পরিবহণব্যবস্থার কথাও থাকবে।
এর ধারাবাহিকতায় আসন্ন বাজেটের শিরোনাম ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবার বাজেট বক্তব্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১’-এর স্বপ্ন ও বাস্তবায়নের পথ দেখাবেন। তুলে ধরবেন নানা চ্যালেঞ্জের কথাও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
সূত্রমতে, স্মার্ট বাংলাদেশ মহাপরিকল্পনায় প্রায় ৪০টি মেগা প্রকল্প রয়েছে। তা বাস্তবায়নের জন্য ২০২৫, ২০৩১ এবং ২০৪১-এই তিনটি সময়রেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এর শুরুতে ২০২৩ সালের মধ্যে বাংলা ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি, আইসিটি নীতিমালা, জাতীয় প্রকিউরমেন্ট ই-বাজার, ডিজিটাল চাকরির প্ল্যাটফরম, স্মার্ট পাবলিক সার্ভিস (জনপরিষেবা) ও পেপারলেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (কাগজবিহীন প্রশাসন), ইনক্লুসিভ ফিন্যান্সিয়াল (অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক সংস্থান), গভর্নমেন্ট ক্লাউড অ্যান্ড ডেটা সেন্টার প্রভৃতি কার্যক্রম শুরুর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে ইউনিভার্সাল ডিজিটাল আইডি, ডিজিটাল কারিকুলাম, স্মার্ট ডিভাইস অ্যাকসেস, স্মার্ট বাংলা ক্যাম্পেইন, স্মার্ট হেলথ কেয়ার, স্মার্ট ট্যাক্স, ডিজিটাল লিডারশিপ অ্যাকাডেমি উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হবে। এছাড়া ২০২৫ সালের মধ্যে স্মার্ট ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, স্মার্ট পোস্টাল সার্ভিস, স্মার্ট জুডিশিয়ারি, স্মার্ট বর্ডারস, স্মার্ট সোশ্যাল সেফটি নেট, পুলিশ মডার্নাইজেশন, ইনক্লুসিভ ফিন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম, ফিনটেক অ্যাকসেলারেটর, উদীয়মান প্রযুক্তিবিষয়ক সেন্টার অব এক্সিলেন্স (সিওই) বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হবে। এভাবে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ উদ্যোগ ভালো। ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী যুগ স্মার্ট বাংলাদেশ। কিন্তু সেখানে পৌঁছতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে দুর্নীতি প্রতিরোধ, অর্থ পাচার রোধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও জ্বালানির স্বল্পতা কাটাতে হবে। এমনকি দারিদ্র্যসীমার হার বেড়ে যাচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশে পৌঁছতে কম্পিউটার ও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল তুলে দিতে হবে তাদের হাতে। সেক্ষেত্রে দারিদ্র্যদূরীকরণে আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
জানা যায়, পহেলা জুন জাতীয় সংসদে বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট উপস্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে অর্থ বিভাগ। ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা ব্যয়ের আকার ধরে ঠিক করা হয়েছে বাজেট। তবে এবার বাজেটের দর্শন হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১। এটি প্রাধান্য দিয়ে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যের বইয়ে পৃথক চ্যাপ্টার রাখা হচ্ছে এর ওপর। বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি এবং উদ্ভাবনী জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠায় স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ ভিশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
স্মার্ট বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট জাতি, স্মার্ট অর্থনীতি এবং স্মার্ট সমাজ গঠনে কাজ চলছে। এ লক্ষ্য পূরণে সরকারের পাশাপাশি প্রযুক্তির দক্ষতা অর্জনে নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের অনুপ্রাণিত করতে হবে। পশ্চাদপদতা অতিক্রম করে আমাদের সামনে এগোনোর একমাত্র পথ হচ্ছে এখানকার তরুণ জনগোষ্ঠীকে ডিজিটাল মানবসম্পদ হিসাবে তৈরি করা।’ তরুণদের উপযুক্ত মানবসম্পদ হিসাবে তৈরি করতে যুবসমাজকে অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণে এগিয়ে আসতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা সর্বত্র প্রযুক্তিনির্ভর। সেখানে বলা আছে, কৃষিতে প্রচলিত যুগের অবসান হয়েছে। আগামী দিনের কৃষি হবে প্রযুক্তিনির্ভর। প্রচলিত কৃষককেও এখন স্মার্ট ফোনের কার্যকর ব্যবহার জানতে হবে। আইওটি ডিভাইস ব্যবহার করে কীভাবে অল্প খরচে মাছ চাষে এবং কৃষিতে অধিক লাভবান হওয়া যায়, তা জানতে হবে।
এছাড়া অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল সমাজ গড়ে তোলার কথা বলা হবে। আর পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসতে আত্মকর্মসংস্থানভিত্তিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রম নিশ্চিতে ‘ওয়ান স্টুডেন্ট, ওয়ান ল্যাপটপ, ওয়ান ড্রিম’ এর আওতায় শিক্ষার্থীদের ল্যাপটপ সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হবে।
এছাড়া ক্ষুদ্র, কুটির, ছোট, মাঝারি ব্যবসাগুলোর জিডিপিতে অবদান বাড়াতে এন্টারপ্রাইজভিত্তিক ব্যবসাগুলোকে বিনিয়োগ উপযোগী স্টার্টআপ হিসাবে প্রস্তুত করা হবে। পাশাপাশি অল্টারনেটিভ স্কুল ফর স্টার্টআপ এডুকেটরস অব টুমোরো (এসেট) প্রতিষ্ঠা, বাংলাদেশ নলেজ ডেভেলপমেন্ট পার্ক নির্মাণ ও পরিচালনা, সেন্টার ফর লার্নিং ইনোভেশন অ্যান্ড ক্রিয়েশন অব নলেজ (ক্লিক) স্থাপন, সরকারি সেবা ও অবকাঠামোনির্ভর উদ্যোক্তা তৈরি এবং সব ডিজিটাল সেবাকে কেন্দ্রিয়ভাবে সমন্বিত ক্লাউডে নিয়ে আসার কথা বলা হবে।