Home নির্বাচন ২০ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব বিইএ’র
Mei ২৬, ২০২৩

২০ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব বিইএ’র

আগামী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ২০ লাখ ৯৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা বাজেট দেওয়ার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি (বিইএ)। এর মধ্যে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১৯ লাখ ২৯ হাজার ১১২ কোটি এবং ঘাটতির অঙ্ক এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত এ বাজেট সরকারের চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেটের তিনগুণ। বড় অঙ্কের এ বাজেট বাস্তবায়নে অর্থায়নের জন্য দেশে পুঞ্জীভূত মোট কালো টাকার ২ শতাংশ অর্থাৎ দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা এবং পাচার করা অর্থের ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫৯ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা উদ্ধারসহ ২৭টি উৎসের কথা উল্লেখ করা হয়।

বৃহস্পতিবার ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২৩-২৪ : বৈষম্য নিরসনে জনগণতান্ত্রিক বাজেট’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেছে বিইএ।

সংবাদ সম্মেলনে অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৫০ বছরে কালো টাকা ও অর্থপাচারের পরিমাণ ১৪৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে পুঞ্জীভূত কালো টাকার পরিমাণ ১৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা আর বিদেশে অর্থ পাচারের পরিমাণ ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উল্লিখিত দুটি উৎস ছাড়াও ১০০ কোটি টাকার বেশি কর দিচ্ছে এমন সংখ্যা বিইএ’র হিসাব মতে বাংলাদেশে ৪ লাখ ১৮ জন। এদের করের আওতায় আনতে পারলে এখানে বিপুল অঙ্ক আদায় হবে। এছাড়া সম্পদ কর নেওয়া হয় না। এ খাতে ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা আনা সম্ভব।

এছাড়া অতিরিক্ত মুনাফার ওপর কর আরোপ, সংসদ-সদস্যদের গাড়ি আমদানির ওপর কর আরোপ, বিভিন্ন কমিশন ও বোর্ডের কর আদায় যৌক্তিকরণ, বিদেশি নাগরিকদের ওপর কর আরোপ, বিভিন্ন কমিশন ও বোর্ড থেকে আহরিত কর যৌক্তিকরণের সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থনীতি সমিতির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম প্রমুখ। ব্যাংকিং খাত প্রসঙ্গে অধ্যাপক বারকাত বলেন, বর্তমান খেলাপি ঋণের অঙ্ক ৪ লাখ কোটি টাকা।

গুটিকয়েক মানুষের হাতে খেলাপি ঋণ জিম্মি হয়ে আছে। ঋণ নিয়ে তা ফেরত না দেওয়ার চর্চা গড়ে উঠছে। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধনীদের কর কমালে প্রবৃদ্ধি বাড়ে না। নিম্ন ও মধ্যবিত্তের কর কমালে কর্মসংস্থান হয়। আমাদের উদ্দেশ্য বিপজ্জনক বৈষম্য কমানো। বিকল্প বাজেট বাস্তবায়ন করলে ১০ বছরের মধ্যে বিপজ্জনক বৈষম্য কমানো সম্ভব।

তিনি বলেন, বিকল্প বাজেটের হিসাবে রাজস্ব আয় থেকে আসবে ১৯ লাখ ২৯ হাজার ১১২ কোটি টাকা। যা চলমান অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৪.৪২ গুণ বেশি। অর্থাৎ মোট বাজেটের ৯৩.২ শতাংশের জোগান দেয় রাজস্ব। বাকি ৭.৮ শতাংশ তথা ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি হবে ঘাটতি বাজেট। অর্থ আদায়ের জন্য এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের মধ্যে আয়, মুনাফা ও মূলধনের ওপর কর অর্থাৎ আয়কর প্রস্তাব ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ভ্যাট খাতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা বর্তমান সরকারের বাজেটের মতোই।

অন্যদিকে এনবিআরবহির্ভূত কর-যেমন মাদক শুল্ক ১৫২ কোটি টাকা। যেখানে ৩০ হাজার কোটি টাকা আসতে পারে এবং ভূমি রাজস্ব থেকে আসতে পারে ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি বড় চ্যালেঞ্জ হলেও আমরা বিদেশি অর্থায়ন ও ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার পক্ষে নই। ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেটের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র, বন্ড, বিদেশে বসবাসরত নাগরিক ও কোম্পানি থেকে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদ বারকাত বলেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, লাগামহীন কর্মবাজার সংকোচন, মহামারি ও ইউরোপ যুদ্ধের অভিঘাত এসব বিষয় মাথায় রেখে আগামী বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বহুমাত্রিক দরিদ্র। ধনী ও অতিধনীর সংখ্যা ১ শতাংশ। বহুমাত্রিক দরিদ্রের সংখ্যা কোভিডকালের চেয়ে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, অপরদিকে প্রকৃত মজুরি না বাড়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। সঞ্চয় ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। অনেকেই ধারদেনা করে জীবন চালাচ্ছে, আমিষজাতীয় খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছে। পূর্ণ কর্মসংস্থান, শিশুর জন্য সুস্থ জীবন, সবার জন্য আবাসন ও মূল্যস্ফীতি রোধ এ বিষয় মাথায় রেখে অর্থনীতি সমিতি বাজেট প্রণয়ন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক বারকাত বলেন, কার ভিসা প্রবলেম (সমস্যা) আমরা বুঝতে পারছি না। দেশে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ। এদের যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দরকার নেই। ভিসা দিলে ও না দিলেও তাদের সমস্যা নেই। বরং এ শ্রেণির মানুষদের ভিসা পেলে সমস্যা, তাহলে যাওয়ার জন্য টাকা-পয়সা খুঁজবে। এটা নিয়ে রাজনৈতিক দলের লোকজন চিন্তা করবে।

আগামী বাজেটে বিইএ সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে বলেছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে। দ্বিতীয় অগ্রাধিকার খাত হচ্ছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি। পর্যায়ক্রমে অন্য খাতগুলো হচ্ছে কৃষি, জনপ্রশাসন ও খাদ্য। এছাড়া ঘাটতি অর্থায়নের জন্য কোনো বিদেশি ঋণ না নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। সেখানে বলা হয়-ঘাটতি অর্থায়নের মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা, বন্ড থেকে ৮৫ হাজার কোটি টাকা এবং সরকার ও জনগণ যৌথভাবে আরও ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে।

ঋণ প্রসঙ্গে বলা হয়-বর্তমান ১৬৭ বিলিয়ন ঋণ সরকারের। এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ বৈদেশিক এবং ৫৩ শতাংশ অভ্যন্তরীণ। জিডিপির ঋণ অনুপাতও বাড়ছে। এ কারণে বাজেটে বড় হচ্ছে এখন ঋণ পরিশোধ। এছাড়া বাজেটে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর উদ্যোগ থাকতে হবে।

বিকল্প বাজেট সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও কনফারেন্সে দেশের ৬৪টি জেলা, ১৩৫টি উপজেলা এবং ৪৫টি ইউনিয়ন থেকে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *