আয় না থাকলেও কর দিতে হবে ২ হাজার টাকা, ধনীদের ছাড়
আগামী বাজেটে করযোগ্য আয় না থাকলেও ন্যূনতম দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। এই কর না দিলে সরকারি-বেসরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে না। তবে বাজেটে ধনীদের ওপর করের বোঝা কমানোর প্রস্তাব করবেন অর্থমন্ত্রী। এখন বিত্তশালীদের তিন কোটি টাকা বেশি সম্পদ বা একাধিক গাড়ি বা আট হাজার বর্গফুটের বেশি আয়তনের গৃহসম্পত্তি থাকলে সারচার্জ বা সম্পদ কর দিতে হয়। এটি বাড়িয়ে চার কোটি টাকা করা হচ্ছে। অন্যদিকে আগের হারেই কর দিতে হবে। এতে ধনীদের কম আয়কর দিতে হবে।
বাচ্চার কলম, গৃহিণীর অ্যালুমিনিয়াম বা প্লাস্টিকের ঘটিবাটি, টয়লেট টিস্যু-ফেসিয়াল টিস্যু, নিজের বা পরিবারের জন্য নতুন মোবাইল ফোন কেনা-সব খাতেই খরচ বাড়বে।
ঘুরতে বা চিকিৎসা করাতে বিদেশ যেতে চাইলে বিমান টিকিটের সঙ্গে বাড়তি ভ্রমণ কর দিতে হবে। সুস্বাস্থ্যের জন্য খেজুর, কাজুবাদাম খান অনেকে- এ দুটি পণ্যের আমদানি শুল্ক বাড়ানোয় দাম বাড়তে পারে। সবকিছু মিলিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয়ের বোঝা বাড়াবে আগামী বাজেট।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কলম উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে, সেখানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। এতে কলমের দাম বাড়তে পারে। প্লাস্টিকের তৈরি সব ধরনের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। একইভাবে অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি গৃহস্থালিসামগ্রী ও তৈজষপত্রের ভ্যাট হার বাড়ানো হচ্ছে। কিচেন টাওয়াল, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু/পকেট টিস্যু ও পেপার টাওয়াল উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে টিস্যু পেপারের দাম বাড়তে পারে।
এছাড়া মোবাইল ফোন উৎপাদন পর্যায়ে ২ শতাংশ ভ্যাট বসানো হচ্ছে। বর্তমানে ভ্যাট অব্যাহতি রয়েছে। আর সংযোজন পর্যায়ে ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে মোবাইল ফোনের দাম বাড়তে পারে।
বিদেশ ভ্রমণ অথবা চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনের খরচ বাড়বে। বাজেটে বিমান টিকিটের ওপর ভ্রমণ কর বাড়ানো হচ্ছে। আকাশপথে দেশের এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে ২০০ টাকা ভ্রমণ কর দিতে হবে, এতদিন দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণ কর দিতে হতো না। বর্তমানে স্থলপথে বিদেশ গমনে ৫০০ টাকা ও নৌপথে ৮০০ টাকা কর বহাল রয়েছে, এটি বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। আকাশপথে সার্কভুক্ত দেশ ভ্রমণে এক হাজার ২০০ টাকা কর আছে, এটি বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করা হচ্ছে।
অন্য দেশ ভ্রমণে তিন হাজার টাকা কর আছে, এটি চার হাজার টাকা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে আকাশপথে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, জাপান, হংকং, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও তাইওয়ান ভ্রমণে যাত্রীপ্রতি চার হাজার টাকা ভ্রমণ কর আছে, এটি বাড়িয়ে ছয় হাজার টাকা করা হচ্ছে।
অবশ্য পাঁচ বছরের বেশি থেকে ১২ বছর বয়সি শিশুদের জন্য নির্ধারিত হারের অর্ধেক ভ্রমণ কর দিতে হয়। পাঁচ বছর বা তার কম বয়সি যাত্রী, ক্যানসার আক্রান্ত রোগী, অন্ধ ব্যক্তি, বাংলাদেশি ও বিদেশি কূটনীতিক, তাদের পরিবার, বিমান ক্রু, বিমানকর্মী, হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের ভ্রমণ কর দিতে হবে না।
অন্যদিকে নিুআয়ের মানুষকে করজালের মধ্যে আনার ছক থাকছে বাজেটে। কারণ শূন্য আয় (করযোগ্য সীমার নিচে বার্ষিক আয়) দেখিয়ে আগে রিটার্ন জমা দেওয়া গেলেও আগামীতে স্লিপ (প্রাপ্তি স্বীকারপত্র) পেতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। আর রিটার্ন জমার স্লিপ না নিলে সঞ্চয়পত্র কিনতে ও ব্যাংক ঋণ নেওয়া যাবে না। ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস নবায়ন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ, বাড়ির নকশা অনুমোদনসহ সব মিলিয়ে সরকারি-বেসরকারি ৪৪ ধরনের সেবা পাওয়া যাবে না।
স্বস্তির খবর হচ্ছে-ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হচ্ছে। ন্যূনতম কর আগের নিয়মেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার পাঁচ হাজার টাকা, অন্যান্য সিটি করপোরেশন এলাকার করদাতাদের চার হাজার টাকা এবং সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্যান্য এলাকার করদাতাদের তিন হাজার টাকা দিতে হবে।
ব্যাংক ডিপিএসে (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) কর রেয়াতের সীমা বাড়ানো হচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংকে বেশি টাকা জমালে বেশি কর ছাড় পাওয়া যাবে। বর্তমানে ৬০ হাজার টাকা (মাসিক পাঁচ হাজার) ডিপিএসে কর রেয়াত পাওয়া যায়, এটি বাড়িয়ে এক লাখ ২০ হাজার (মাসিক ১০ হাজার) টাকা করা হচ্ছে। তবে শেয়ারবাজারের সেকেন্ডারি মার্কেটের বিনিয়োগকারীদের কষ্ট বাড়াবে বাজেট। আগে সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত পাওয়া যেত, এ সুবিধা বাতিল করে শুধু আইপিওতে বিনিয়োগে কর রেয়াত সুবিধা দেয়া হচ্ছে।