অনলাইন ডেস্ক,
অস্ত্র হাতে নিয়ে মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীকে নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা বিব্রত।
রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দেওয়ার প্রতিবাদে গত সোমবার বিকেলে বাঁশখালীতে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই রাতে মিছিলের তিন মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনের এমপি মোস্তাফিজুর রহমান পিস্তল হাতে মিছিলের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
অস্ত্র প্রদর্শনের বিষয়ে জানতে গতকাল স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান গতকাল বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এসব কর্মকাণ্ডে আমরা বিব্রত। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে জনগণ।
কিন্তু মিছিলে কেন একজন এমপির হাতে অস্ত্র থাকবে? এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। বিষয়টি দলের হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আগের কমিটির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মুজিবুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শুধু এবারই নয়, উনি (মোস্তাফিজুর রহমান) বিভিন্ন সময় নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। এ কারণে এরই মধ্যে দলের জেলা থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ে বিভিন্ন ফোরামে তাঁকে ভর্ত্সনা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে দল সিদ্ধান্ত নেবে। বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুধাংশ শেখর হাওলাদার গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটা স্যারের (এমপি) ব্যক্তিগত লাইন্সেসকৃত অস্ত্র। তবে উনি কী কারণে বের করেছেন তা আমি বলতে পারব না। আমি নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলাম।’
ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম শফিউল্লাহ গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাতে একজন আমাকে ছবি পাঠিয়েছেন।
আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ডিএসবিকে (পুলিশের জেলা বিশেষ শাখা) নির্দেশ দিয়েছি। তাঁর (মোস্তাফিজুর রহমান) অস্ত্র বৈধ কী অবৈধ, কেন অস্ত্র প্রদর্শন করে মিছিল করেছেন, এসব বিষয় তদন্ত করে আমাকে জানাবে ডিএসবি। এরপর কী আইনানুগ ব্যবস্থা, তা বলা যাবে। আমি ঘটনার ভিডিও দেখিনি।’
পুলিশের জেলা বিশেষ শাখার অতিরিক্ত সুপার আবু তৈয়ব মো. আরিফ জানান, তাঁরা বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছে।
এদিকে গতকাল দুপুর ২টা ৩৬ মিনিটে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন মোস্তাফিজুর রহমান। এতে তিনি লেখেন, ‘প্রকাশ্য জনসভায় যদি বিএনপি নেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে কবরে পাঠানোর মতো বক্তব্য দিতে পারেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীকে হুমকি দিতে পারেন, তবে আমি বৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে অগ্নিসন্ত্রাসকারী বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে মিছিলে অংশ নিলে তাতে ক্ষতি কি? বিএনপি-জামায়াতের নাশকতাকারীদের প্রতিরোধ করতে ভবিষ্যতেও জীবন বাজি রেখে মাঠে থাকতে পারলেই আমার রাজনীতির সার্থকতা।’
সোমবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ। মিছিলের সামনে ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তাঁর পেছনে ছিলেন ব্যানারসহ দলীয় নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা বাঁশখালী থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনের সড়ক ঘুরে আবার দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হন। মিছিলের একটি ভিডিও এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী নামে একটি ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়।