Home ধর্মীয় সংবাদ অন্তরের ০৫ টি রোগ ও আত্মশুদ্ধির উপায়
Mei ২১, ২০২৩

অন্তরের ০৫ টি রোগ ও আত্মশুদ্ধির উপায়

সম্পাদক,
অন্তরের ০৫টি রোগের চিকিৎসা করে অন্তরের ০৫ টি গুণ হাসিল করার নাম তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধি। যা শরী‘আতের দৃষ্টিতে ফরযে আইন এবং এর জন্যে কোন ইজাযত প্রাপ্ত শাইখের সাথে ইসলাহী সম্পর্ক করাও ফরযে আইন। বাইআত হওয়া ফরয বা ওয়াজিব নয় বরং এটা মুস্তাহাব, এর উপর আত্মশুদ্ধি নির্ভর করে না। আত্মশুদ্ধি অর্জন হলে সমস্ত জাহেরী গুনাহ বর্জন করা এবং জাহেরী ইবাদত-বন্দেগী করা সহজ হয়ে যায় এবং সেই বন্দেগীকে তাকওয়ার যিন্দেগী বা সুন্নতী যিন্দেগী বলে এবং সে ব্যক্তি তথন আল্লাহর ওলী হয় এবং তার হায়াতে তাইয়িবা তথা পবিত্র জীবন নসীব হয়। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে এ দৌলত নসীব করেন, আমীন।

১. বেশী খাওয়া এবং ভাল খানার প্রতি লোভী হওয়া,
বেশি খাওয়া এবং উদর পূর্তি করে খাওয়া অসংখ্য গুনাহের মূল। এজন্য হাদীসে পাকে ক্ষুধার্ত থাকার অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। রাসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “মানুষের জন্য পূর্ণ করার ক্ষেত্রে পেটের থেকে খারাপ কোন পাত্র নেই।” (বুখারী হা: নং ৪৩৪৩)

খানা কম খাওয়ার উপকারসমূহ:–
* অন্তরে স্বচ্ছতা সৃষ্টি হয়।
* দিল নরম হয় এবং মুনাজাতে স্বাদ অনুভূত হয়।
* অবাধ্য নফস অপদস্থ ও পরাজিত হয়।
* নফসকে শাস্তি দেওয়া হয়।
* কুপ্রবৃত্তি দুর্বল হয়ে যায়।
* বেশী নিদ্রা আসে না এবং ইবাদত কষ্টকর হয় না।
* দুনিয়াবী চিন্তাভাবনা কমে আসে এবং জীবিকা নির্বাহের বোঝা হাল্কা হয়ে যায়।

উল্লেখ্য : বর্তমান যামানার লোকেরা পূর্বের তুলনায় অনেক কমজোর হওয়ায় তাদের খানার মুজাহাদার ব্যাপারে হাকীমুল উম্মত হযরত থানভী রহ. লিখেছেনঃ এ যমানায় খানার মুজাহাদার অর্থ হলো , পেট পূর্ণ হতে ২/৪ লুকমা বাকী থাকা অবস্থায় খানা শেষ করা , নফস বা শরীর দিয়ে খুব কাজ নেয়া।

২. অধিক কথা বলাঃ
যবান হল অন্তরের দূত, অন্তরের যাবতীয় নকশা ও কল্পনাকে যবানই প্রকাশ করে। এজন্য যবানের ক্রিয়া বড় মারাত্মক হয়।
এজন্যই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকটা কথাই সংরক্ষণ করা হয়। (সূরা কাফ-১৮)

হাদীসে পাকে এরশাদ হয়েছেঃ যে ব্যক্তি নিজের লজ্জাস্থান এবং জিহ্বাহের ব্যাপারে আমাকে নিশ্চয়তা দিতে পারবে আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দিব। (বুখারী হা: নং ৬৪৭৪)

কথা বেশী বলার ক্ষতিসমূহ:
১. মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়া।
২. গীবতে জড়িয়ে পড়া।
৩. অনর্থক ঝগড়া করা।
৪. অতিরিক্ত হাসাহাসি করা, যদ্দরুন দিল মরে যায়।
৫. অন্যের অযাচিত প্রশংসা করা।

চুপ থাকার উপকারিতা:
১. মেহনতবিহীন ইবাদত।
২. সাম্রাজ্যবিহীন দাপট।
৩. দেওয়ালবিহীন দূর্গ।
৪. অস্ত্রবিহীন বিজয়।
৫. কিরামান কাতিবীনের শান্তি।
৬. আল্লাহভীরুদের অভ্যাস।
৭. হেকমতের গুপ্তধন।
৮. মূর্খদের উত্তর।
৯. দোষসমূহ আবৃতকারী।
১০. গুনাহসমূহ আচ্ছাদনকারী।

৩. অহেতুক গোস্বা করাঃ-
এটা অত্যন্ত খারাপ একটি আত্মিক ব্যাধি। রাগ দোযখের আগুনের একটি টুকরা এজন্য রাগান্বিত ব্যক্তির চেহারা লাল হয়ে যায়। এর কারণে মারামারি ঝগড়াঝাটি, গালাগালী, এমনকি খুনাখুনী পর্যন্ত সংঘটিত হয়।

এমনকি অনেকে বৃদ্ধ বয়সে এসে তুচ্ছ ঘটনায় বিবিকে তিন তালাক দিয়ে পস্তাতে থাকে। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন: ঐ ব্যক্তি বাহাদুর নয় যে যুদ্ধের ময়দানে দুশমনকে নীচে ফেলে দেয় বরং ঐ ব্যক্তি বাহাদুর যে রাগের মুহূর্তে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম। (বুখারী হাদীস নং ৬১১৪)

গোস্বার চিকিৎসা:
দুইভাবে গোস্বার চিকিৎসা করা হয়।
১. ইলমী বা জ্ঞানগত পদ্ধতিতে
২. আমলী বা কার্যগত পদ্ধতিতে।

ইলমী চিকিৎসা হলঃ গোস্বার সময় চিন্তা করতে হবে গোস্বা কেন আসে? গোস্বা আসার কারণ তো এটাই যে, যে কাজটি আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে সে কাজটি আমার মনের মোতাবেক কেন হয়নি? কেন এটা আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী হল? তার মানে আমি আল্লাহর ইচ্ছাকে আমার ইচ্ছার অনুগত বানাতে চাই? নাউযুবিল্লাহ! এভাবে চিন্তা করলে গোস্বার বদ অভ্যাস দূর হয়ে যাবে।

আর আমলী চিকিৎসা হলঃ গোস্বা আসলে
১ (أعُوْذ ُبِاللهِ مِنَ الشيْطَانِ الرَّجِيْمِ) পড়বে,
২. নিজ অবস্থা পরিবর্তন করবে। অর্থাৎ, দাঁড়ানো থাকলে বসে পড়বে, বসে থাকলে শুয়ে পড়বে।
৩. যার প্রতি গোস্বার উদ্রেক হয় তার সামনে থেকে সরে পড়বে। ৪. তারপরও গোস্বা ঠান্ডা না হলে উযু করবে, নিজ গালকে মাটিতে লাগিয়ে দিবে। এভাবে আমল করলে গোস্বা দূর হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

৪. হিংসা করা,
হিংসার সংজ্ঞাঃ কোন ব্যক্তিকে আরাম আয়েশ বা প্রাচুর্যপূর্ণ অবস্থায় দেখে তার সে নেয়ামত দূরীভূত হয়ে নিজের জন্য হাসিল হওয়ার আকাংখা করা। হিংসা অত্যন্ত জঘন্য একটি ব্যাধি।

আল্লাহ তা‘আলা হাদীসে কুদসীতে বলেনঃ আমার বান্দার উপর নেয়ামত দেখে হিংসাকারী কেমন যেন আমার ঐ বন্টনের ব্যাপারে অসন্তুষ্ট যা আমি আমার বান্দাদের মধ্যে করেছি। নাউযুবিল্লাহ। (এহয়াউ উলুমুদ্দীন-৩/২৯২)

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ “হিংসা নেকী সমূহকে এমনভাবে জ্বালিয়ে দেয় যেমন আগুন শুকনো লাকড়ীসমূহকে জ্বালিয়ে দেয়”। অবশ্য অন্যের কোন নেয়ামত দেখে সেটা তার মধ্যে বহাল থেকে নিজের জন্য হাসিল হওয়ার আকাংখা করা যাকে “গিবতা” বা “ঈর্ষা” বলে সেটা জায়েয। (আবূ দাউদ হাদীস নং-৪৯০৩)

৫. কৃপণতা ও সম্পদের মোহ,
সম্পদের মোহই মূলতঃ কৃপণতার মূল আর সম্পদের মুহব্বাত মানুষকে ‍দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট করে। যে কারণে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি মুহব্বাত দুর্বল হয়ে যায়।

এ কারণেই কুরআনে কারীমে আল্লাহ পাক এরশাদ করেনঃ যার ভাবার্থ হল: আল্লাহর দেওয়া সম্পদে কৃপণতাকারীদের জন্য পরকালে ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। (সূরা আলে ইমরান আয়াত ১৮০)

হাদীসে পাকে এরশাদ হয়েছেঃ তোমরা লোভকে নিয়ন্ত্রণ কর কারণ এটা তোমাদের পূববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করেছে। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং-২৫৭৮)

বাস্তবিক পক্ষে সম্পদের মোহ মানুষকে আল্লাহ পাক থেকে উদাসীন করে দেয়। এই সম্পদ মুসলমানদের জন্য ভয়াবহ এক ফেতনা।

অবশ্য শুধু সম্পদ কোন নিন্দনীয় ব্যাপার নয়। বিশেষতঃ যদি সে সম্পদ দীনী কাজে ব্যয় করা হয়। নতুবা জরুরত পরিমাণ সম্পদ থাকলে কোন অসুবিধা নেই, যাতে কারো নিকট ভিক্ষার হাত বাড়াতে না হয়।

আল্লাহ সবাই আমল করার তৌফিক দান করুক। আমিন

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *