Home ধর্মীয় সংবাদ ইসলামে রাস্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারীর পরিণাম
Mei ২০, ২০২৩

ইসলামে রাস্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎকারীর পরিণাম

এস.এইচ.এম. আব্দুল কাদের,
করোনার থাবায় বিশ্বব্যাপী থমকে গেছে মানুষের কোলাহল। বর্তমানে গোটা বিশ্ব এক অভাবনীয় দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতির কথা কিছুদিন পূর্বেও আমরা কেউ কল্পনা করিনি। এ পরিস্থিতিতে দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। ছুটিতে কর্মহীন হয়ে পড়া দিনমজুর, দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষদের জন‌্য সরকারের পক্ষ থেকে সারাদেশে ত্রাণ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ত্রাণ কাজে কোনো ধরনের দুর্নীতি সহ্য করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণের চাল চুরি করছেন ডিলারসহ জনপ্রতিনিধিরা। গত কয়েকদিনে যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
মিডিয়ার কল্যাণে আমরা দেখতে পাচ্ছি এই কঠিন সংকট পরিস্থিতিতে মানুষ কী দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছে। কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষ না খেয়ে আছে, ক্ষুধার যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করছে ছোট ছোট শিশু। একটু চাল ও ডালের জন্য রাস্তায় এসে হাহাকার করছে মানুষ। এসব মানুষের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে অনেক সামাজিক সংগঠন। ব্যক্তিগত পর্যায়েও নিজ নিজ অর্থ ভাণ্ডার খুলে দিয়েছেন অনেক হৃদয়বান মানুষ।
কিন্তু আফসোসের কথা হচ্ছে, এই কঠিন পরিস্থিতিতেও অনেক নামধারী জনপ্রতিনিধি সরকারের বরাদ্দ দেয়া ত্রাণসামগ্রী নিজেরা আত্মসাৎ করছেন।
অথচ রাষ্ট্রের সবার অধিকার রয়েছে এমন সকল সম্পদকে পবিত্র আমানত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যেক নাগরিকের এ আমানত রক্ষা করা মৌলিক দায়িত্ব। পবিত্র কুরআন মাজিদে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে নির্দেশ দেন যে, তোমাদের প্রাপ্য আমানতগুলো প্রাপকের কাছে ফিরিয়ে দাও।” (সূরা আন-নিসা, আয়াত নং-৫৮)।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যার আমানত নেই, তার ঈমান নেই।” (মুসনাদে আহমদ)। পবিত্র কুরআন-সুন্নাহর এই মর্মবাণী অনুযায়ী প্রতীয়মান হয় যে, রাষ্ট্রীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানি দায়িত্ব।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত জমি দখল করে, কিয়ামতের দিন সাত স্তবক জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে।” (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমদ)।
রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করা কবিরা গুনাহ। এর ফলে কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকারীকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। সাহাবী হজরত যায়েদ ইবনে খালিদ জুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “খায়বার যুদ্ধে জনৈক ব্যক্তি কোনো দ্রব্য আত্মসাৎ করে। পরে সে মারা গেলে রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তার জানাযা পড়াননি। বরং বললেন, তোমাদের এ সঙ্গী আল্লাহর পথের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা তার জিনিসপত্র তল্লাসী করে তাতে একটি রেশমি বস্ত্র পেলাম, যার মূল্য হয়তো দুই দিরহাম হবে।” (মুয়াত্তা, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে ইবনে মাজা)।
আজকে যারা রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করছেন, এ সম্পদই কিয়ামতের দিন তাদের জাহান্নামের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করবে। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনুল লুতবিয়া নামক এক সাহাবিকে বায়তুল মালের অর্থ আদায়ের জন্য নিয়োগ করেন। তিনি ফিরে এসে আদায়কৃত অর্থগুলো দু’ভাগে ভাগ করে রেখে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এগুলো বায়তুল মালের আর এগুলো আমার। মানুষ এগুলো আমাকে হাদিয়া দিয়েছে। তার কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব রেগে গেলেন। তিনি সাহাবায়ে কিরামকে ডেকে দীর্ঘ এক ভাষণ দিলেন।
তিনি বললেন, তোমাদের কাউকে আমি সাদকা আদায়ের জন্য পাঠালে, সে ফিরে এসে বলে, এগুলো বায়তুল মালের আর এগুলো মানুষ আমাকে হাদিয়া দিয়েছে। সে কি চিন্তা করে দেখেছে, যদি সে বাড়ি বসে থাকতো তাহলে মানুষ তাকে হাদিয়া দিতো? আল্লাহর কসম! তোমাদের কেউ কিয়ামতের দিন উট কাঁধে করে উঠবে। সে উট চিৎকার করে ডাকতে থাকবে। সে আমার কাছে সাহায্যের জন্য আসবে, কিন্তু সে দিন আমি তার কোনো সাহায্যই করতে পারবো না। (সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম)। আলোচ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আত্মসাৎকারী কিয়ামতের দিন আত্মসাৎকৃত বস্তু কাঁধে নিয়ে উঠবে।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করার পাপ থেকে দূরে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *