গরমে আরামদায়ক পোশাক
তীব্র গরমে নাজেহাল জনজীবন। সূর্যের তাপ যেন বেড়েই চলছে দিনকে দিন। একদিকে অসহনীয় গরম আর অন্যদিকে জ্যামের কারণেও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয়ে পড়ছে কষ্টসাধ্য। এছাড়া প্রচুর ঘাম সঙ্গে হিটস্ট্রোকের মতো বিষয়গুলো প্রায়শই চোখে পড়ছে। তাই গরম থেকে যে কোনো উপায়েই চাই মুক্তি। কোমল পানীয়সহ নানা ধরনের মুখরোচক শরবতের চাহিদা তাই চোখে পড়ার মতো, তারপরও যেন গরম থেকে মুক্তি মিলছে না। এর বাইরে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার কাজগুলোকেও করতে হচ্ছে সব সময়ের মতোই। অন্যদিকে গরমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হচ্ছে সঠিক পোশাক নির্বাচন। গরমে ঘাম শুষে নিতে পারে এমন কাপড় বেছে নিতে হবে সবার আগে। এ ক্ষেত্রে সুতি কাপড় সবচেয়ে ভালো।
পাতলা সুতি কাপড়ে ঘাম শোষে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া এ ধরনের কাপড় গরমের অনুভব কমায় অন্যান্য কাপড়ের থেকে। সুতি কাপড়ের সালোয়ার কামিজ, কুর্তি যেমন বাসায় পরা যায় তেমনি গ্রীষ্মের এ সময়ে অফিস কিংবা ভার্সিটির জন্য সবচেয়ে ভালো চয়েজ।
ঢিলেঢালা সালোয়ার কামিজের সঙ্গে প্লাজো গরমে বেশ আরামদায়ক। এতে পর্যাপ্ত বাতাস যেমন শরীরে প্রবেশ করতে পারে তেমনি দেখতেও লাগে বেশ ট্রেন্ডি। এসব সালোয়ার কামিজেও থাকতে পারে হালকা পাতলা সুতার হাতের কাজ। কটনের কাপড়েও অনেকে স্বস্তি পান গরমের এ সময়ে। তবে সিল্ক, জর্জেট এ জাতীয় কাপড় যতটা সম্ভব এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কামিজের মধ্যে হাতাতে আনতে পারেন ভিন্নতা। ঢিলেঢালা হাতার পাশাপাশি হাফহাতা কিংবা কোয়ার্টার হাতার ফ্যাশন দেখা যায় কামিজের মাঝে। তবে গরম বেশি থাকলে লম্বা সালোয়ার কামিজের জায়গায় শর্ট কামিজ সবচেয়ে ভালো।
এর বাইরে স্কার্ট সঙ্গে জিন্স, টপস কিংবা ফতুয়াও এই গরমে বেশ আরামদায়ক। তবে যে কোনো পোশাকের ক্ষেত্রেই আপনাকে লক্ষ রাখতে হবে যাতে তা হয় ঢিলেঢালা। আঁটোসাঁটো পোশাক এ গরমে আপনাকে আরও অস্থির করে তুলবে। অন্যদিকে যারা বাসাতে থাকেন সব সময় তারা সুতি কাপড়ের গেঞ্জি পরতে পারেন। লং গেঞ্জি কিংবা শার্টের সঙ্গে প্লাজো ঘরোয়া আমেজে অন্দরমহলে আপনার গরম কমাতে সাহায্যে করবে অনেকখানি।
গরমের সময় ছেলেদের পোশাকেও আসে পরিবর্তন। বিশেষ করে যারা অফিস করেন তাদের ক্ষেত্রে লম্বা হাতার শার্টের জায়গায় শর্ট হাতার শার্টের দেখা মেলে। কাজেই টি-শার্টের বেলায়ও আসে পরিবর্তন। কলার টি-শার্টের জায়গায় গোল গলার টি-শার্ট এ গরমে সবচেয়ে আরামদায়ক। তবে টি-শার্টের বেলায়ও সুতি কাপড়ের হলে সবচেয়ে ভালো। কাপড় পাতলা হলে ঘাম যেমন শুষে নেবে খুব সহজে তেমনি গরম থেকেও রেহাই মিলবে অনেকখানি। আর কালারের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। গাঢ় রং যেমন কালো, লাল, হলুদ এ ধরনের রঙের পরিবর্তে হালকা রং এ গরমে সবচেয়ে ভালো।
এতে দেখতে যেমন প্রশান্তি লাগে তেমনি গরম কমাতেও বেশ কার্যকর। এ ক্ষেত্রে সাদা, ধূসর, বাদামি, সবুজ, ফিরোজা এ ধরনের হালকা রং বেছে নিতে পারেন। হালকা রং গরম আটকে রাখে না দীর্ঘসময়। তাই গরম অনুভব হয় কম। অন্যদিকে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি যারা পরতে চাচ্ছেন তারা নিশ্চিন্তে সুতি কাপড়ের পাঞ্জাবি বেছে নিতে পারেন। সুতি কাপড়ের সাদা রঙের পাঞ্জাবি গরমের আরেকটি আরামদায়ক পোশাক। তবে খেয়াল রাখতে হবে খুব বেশি যাতে কারুকাজ করা না থাকে।
রঙের বিষয়ে সালোয়ার কামিজের ক্ষেত্রেও হালকা রং বেছে নিতে হবে। কালো, খয়েরি, হলুদ, লাল কিংবা গাঢ় রংগুলো এড়িয়ে চলতে হবে এ সময়ে। গরমের জন্য আলাদাভাবে সুতি কাপড়ের হালকা রং যেমন সাদা, ধূসর, বাদামি, মেজেন্ডা, পিচ, লেবু, সাদা, প্যাস্টেল, সবুজ, গোলাপি এ ধরনের রংগুলো বেছে নিতে পারেন। এছাড়া যারা ওয়েস্টার্ন ক্যারি করেন তারাও রঙের বিষয়টি সমানভাবে মাথায় রাখবেন। এতে যে কোনো ধরনের আউটফিটেই আপনি গরম থেকে অনেকখানি বাঁচতে পারবেন।
তবে কেবল আউটফিটেই নয় গরমের এ সময় খাবার তালিকায়ও সমানভাবে পরিবর্তন আনতে হবে। তেলে ভাজা খাবার, ঝালজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। প্রচুর পানি পানে অভ্যাস করতে হবে আর বাইরের খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় ব্যাগে ছাতা, টিস্যু, পানির বোতল ক্যারি করতে হবে।
গরমের এ সময় চেষ্টা করুন দিনে দুবার অন্তত পোশাক পালটে নেওয়ার। এ ক্ষেত্রে বাসার বাইরে যাওয়ার সময় ঠান্ডা পানিতে গোসল করে নিতে পারেন। ঠিক একইভাবে বাড়ি ফিরে নিতে পারেন ঠান্ডা পানিতে প্রশান্তির গোসল। সারা দিনের ঘামের পোশাক পালটে ঘরোয়া ঢিলেঢালা পোশাক পরে নিন।
ছুটির দিনে কিংবা কোনো একদিন প্ল্যান করে আশপাশের কোথাও সুইমিং পুল থেকেও ঘুরে আসতে পারেন। প্রশান্তির সঙ্গে পানিতে লম্বা সময়ের গোসল গরম থেকে একটা দিনের জন্য হলেও নিজেকে ছুটি দিতে পারবেন। এর বাইরে খাবারের তালিকায় মৌসুমি ফল আর ডাবের পানি রাখতে পারেন। এতে করে আপনি এ গ্রীষ্মের গরমেও থাকবেন অনেকখানি প্রশান্তির মাঝে।