Home জীবনযাপন মহাসড়কে চাঁদাবাজি
Mei ১৬, ২০২৩

মহাসড়কে চাঁদাবাজি

মহাসড়কে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ফেরাতে ২০০৫ সালের জুনে যাত্রা শুরু করে হাইওয়ে পুলিশ। মূলত পেনাল কোড ১৮৬০ ও ১৯৮৩ মোটর যানবাহন অধ্যাদেশের কয়েকটি বিভাগের অধীনে মহাসড়ক নিরাপদ করা এবং যানজটমুক্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাই এর উদ্দেশ্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হাইওয়ে পুলিশের কোনো কোনো সদস্য জড়িয়ে পড়েছেন দুর্নীতিতে। দেখা গেছে, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে নানা পন্থায় চাঁদাবাজির পেছনে রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। এ চাঁদার একটি বড় অংশ যায় অসৎ পুলিশ কর্মকর্তাদের পকেটে। প্রতি মাসে কোন পর্যায়ের পুলিশের কাছে কী পরিমাণ অর্থ যায় তার একটি গোপন তালিকা যুগান্তরের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা গেছে, মাসিক ভিত্তিতে দালাল ও লাইনম্যানদের মাধ্যমে চাঁদা তোলা ও বিলি-বণ্টন হয়।

গোপন সেই তালিকা পর্যালোচনা করে আরও দেখা যায়-ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলা নিষিদ্ধ গাড়ি, হাটবাজার, স্ট্যান্ড ও দোকানপাট থেকে মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা হাইওয়ে পুলিশের পকেটে যায়। যাদের মাধ্যমে এ চাঁদা তোলা হয়, তালিকায় তাদের নাম এবং ফোন নম্বরও যুগান্তরের হাতে রয়েছে। যদিও হাইওয়ে পুলিশ পরোক্ষ এ চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করেছে।

অনুসন্ধানে যুগান্তর জানতে পেরেছে-মহাসড়কে অবৈধ লেগুনা, থ্রি-হুইলার, ট্রাক, প্রাইভেটকার স্ট্যান্ড, অটোরিকশা সিএনজি স্ট্যান্ড, বাজার ও দোকানপাট থেকে মাসে প্রায় ৮০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় হয়, যার ২৫ শতাংশ পৌঁছে যায় হাইওয়ে থানায়। বাকি টাকা স্থানীয় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা চক্র ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। স্ট্যান্ডে যেসব বেডফোর্ড ট্রাক পার্ক করা হয়, সেগুলোর বৈধ কাগজপত্র রয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব হাইওয়ে পুলিশের থাকলেও উলটো মাসোহারার বিনিময়ে কাগজপত্রবিহীন এসব অবৈধ ট্রাককে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে। এক চাঁদা উত্তোলনকারী জানিয়েছেন, বৈধ কাগজপত্রহীন ট্রাকগুলোর চলাচলে যাতে কোনো বাধা না আসে, সে জন্য পুলিশের কাছে বিকাশের মাধ্যমে নিয়মিত টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। একই চিত্র ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলাচল করা লেগুনা থেকে শুরু করে ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রেও।

মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্ট্যান্ডগুলোর পেছনেও রয়েছে হাইওয়ে থানার সংশ্লিষ্টতা। একইসঙ্গে ফুটপাতে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট, মাছের আড়ত, কাঁচাবাজারের অবাধ কার্যক্রমের পেছনেও রয়েছে হাইওয়ে পুলিশের অদৃশ্য হাত। ফলে এসব স্থানে যানজট ও দুর্ঘটনা নিয়মিত ব্যাপার হলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না পুলিশকে। যারা এসব স্ট্যান্ড ও বাজার থেকে চাঁদা তোলেন, হাইওয়ে পুলিশের ছত্রছায়ায় তারাও হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। ফলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজট লেগেই থাকছে।

চুরি-ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের কথা বাদ দিলেও মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রীরা হচ্ছেন নিয়মিত ভোগান্তির শিকার। ঘটছে দুর্ঘটনা। সব মিলে রক্ষক যদি ভক্ষকে পরিণত হয়, তাহলে যাত্রীরা হন অসহায়, আইন হয়ে যায় অকার্যকর। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। সরকারের কাছে প্রত্যাশা, অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিয়ে মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে।

 

Advertisement

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *