Home সারাদেশ গাড়ি-বাড়ির মালিক গরু চুরির টাকায়
Mei ১৬, ২০২৩

গাড়ি-বাড়ির মালিক গরু চুরির টাকায়

২০ বছর ধরে গরু চুরির সঙ্গে জড়িত জাকির হোসেন (৪২)। তার বিরুদ্ধে গরু চুরির অন্তত ১০টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারও হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু পেশা ছাড়েনি। জামিনে বেরিয়ে এসে ফের নতুন উদ্যম নিয়ে শুরু করে গরু চুরি। চুরির জন্য জাকির গড়ে তুলেছে ১৫-১৬ সদস্যের একটি চক্র। তবে এরা সবাই একসঙ্গে গরু চুরিতে অংশ নেয় না। একটি চুরিতে ৫-৬ জন করে অংশ নেয়। তবে প্রত্যেক চুরির সরাসরি নেতৃত্বে থাকে জাকির।

জাকিরের নেতৃত্বে এ চক্রের সদস্যরা প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে গরু চুরি করে ঢাকার কসাইদের কাছে বিক্রি করে। আর বেশি লাভের আশায় কসাইরা কম দামে চোরাই গরু কেনে। এভাবে তারা প্রতি সপ্তাহে ৮-১০টি গরু চুরি করে। এ পর্যন্ত তারা প্রায় তিন হাজার গরু চুরি করেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ডিবি সূত্র জানায়, গরু চুরির টাকায় জাকির দুটি ট্রাক কিনেছে। রাজধানীর কদমতলী এবং নারায়ণগঞ্জে দুটি বাড়ি তৈরি করেছে। এর বাইরেও রয়েছে তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ। জাকির হোসেনসহ এ চক্রের আট সদস্যকে এরই মধ্যে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। রাজধানীর দারুস সালাম থানায় আছির উদ্দিন নামে এক গরু ব্যবসায়ীর করা মামলায় শুক্রবার তাদের গ্রেফতার করা হয়। শনিবার তাদেরকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায় ডিবির লালবাগ বিভাগ।

রিমান্ড আবেদনের শুনানী শেষে আদালত প্রত্যেকের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের প্রথম দিনে তারা ডিবিকে গরু অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। জাকির ছাড়া রিমান্ডে নেওয়া অন্যরা হলো- বল্লাল মিয়া (৩৮), ইউসুফ (৩২), মো. রিপন (২২), রজব আলী (২৭), মো. জুবায়ের (২৫), আলামিন (৪৫) এবং মো. আলমগীর (৩৮)।

ডিবি সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জের বেলকুচির গরু ব্যবসায়ী আছির উদ্দিন এবং তার ব্যবসায়ি অংশীদার মো. সুজন ১১ মে দুপুরে সিরাজগঞ্জের কালিয়া কান্দাপাড়া হাট থেকে একটি ষাঁড় কেনেন। প্রায় ১০০ কেজি ওজনের ছাই রংয়ের ওই ষাঁড় ৭১ হাজার টাকায় কেনার পর হাটের পাশে ফুটবল মাঠের গোলপোস্টে বেঁধে তারা দুজন পাশের দোকানে চা খেতে যান। চা শেষে এসে দেখেন গোলপোস্টে বাঁধা ষাড় নেই।

বিষয়টি হাট কমিটিকে জানালে তারা রাজধানীর গাবতলী গরুর হাটে খোঁজ নিতে বলেন। তাদের কথা অনুযায়ী ভোরে সিরাজগঞ্জ থেকে গাবতলী পৌঁছে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ষাঁড়ের হদিস পাননি। পরে বিষয়টি তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) জানান।

মামলা বাদী আছির উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমরা ডিবি পুলিশের সহায়তা চাইলে ১২ মে ডিবি পুলিশ আমাদের সঙ্গে গাবতলী পশুর হাটে এসে চুরি হওয়া ষাঁড় খুঁজতে থাকে। বিকাল সোয়া ৫টার দিকে নম্বরবিহীন নীল রংয়ের একটি পিকআপ ভ্যানে আমাদের কেনা ষাঁড়টি দেখতে পাই। ডিবি পুলিশকে বিষয়টি জানালে তারা তখনই ওই পিকআপ ভ্যানকে সিগন্যাল দেয়। এ সময় গাড়িটি পালানোর চেষ্টা করে। পরে ডিবি পুলিশ গাড়িটি আটক করে। পিকআপ ভ্যানে থাকা জাকির হোসেন, বিল্লাল মিয়া, ইউসুফ, মো. রিপন এবং রজব আলীকে ডিবি পুলিশ আটক করে।

ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, সিরাজগঞ্জের কালিয়া কান্দাপাড়া থেকে গরু চুরির পর তারা টাঙ্গাইলে অবস্থান করে। সেখানেও তারা আরও গরু চুরির চেষ্টা চালায়। কিন্তু সেখানে সুবিধা করতে না পেরে তারা একটি গরু নিয়েই ঢাকার শনির আখড়ার উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে তারা গরু চুরির সঙ্গে জড়িত উল্লেখ করে আরও বেশ কয়েক সহযোগীর নাম জানিয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- কসাই মামুন ওরফে আলমগীর এবং মো. সোহেল। তারা আরও জানায়, ঢাকার বাইরে থেকে তারা গরু চুরি করে শনিরআখড়ার কসাই মামুন ওরফে আলমগীরসহ রাজধানীর একাধিক কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে। কালিয়া কান্দাপাড়া বাজার থেকে চুরি করা ষাঁড়টি কসাই আলমগীরের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল।

ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, জাকিরের নেতৃত্বাধীন চক্রের সদস্যরা সবাই পেশাদার গরু চোর। তাদের প্রত্যেকের নামে ৭-৮টি করে মামলা আছে। চক্রের বেশিরভাগ সদস্যকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও ২-৩ জন পলাতক আছে। তাদের ধরতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, গাবতলী থেকে আটকদের তথ্যের ভিত্তিতে কদমতলীর শনির আখড়ায় মামুনের আস্তানাতে অভিযান চালায় ডিবি। সেখান থেকে জুবায়ের, আলামিন এবং মো. আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে পাঁচটি চোরাই গরুও উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, রিমান্ডে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

ডিবি লালবাগ বিভাগের সহকারী কমিশনার মহিউদ্দিন মিরাজ জানান, চোরাই গরু কসাইদের কাছে ২০-৩০ হাজার টাকা কমে বিক্রি করে জাকির চক্রের সদস্যরা। চোরাই গরু বহনের জন্য জাকিরের ট্রাক ব্যবহার করা হয়। গরু বিক্রির টাকা ভাগের সময় গাড়ির জ্বালানি খরচ ও গাড়ি ভাড়ার টাকা জাকির এককভাবে নিয়ে নেয়। অবশিষ্ট টাকা আট ভাগ করতে তিন ভাগ জাকির একা এবং পাঁচ ভাগ পাঁচজনকে দেওয়া হয়।

ডিবির অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারদের নামে নাটোরের বড়াইগ্রাম, জামালপুরের সরিষাবাড়ি, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, ঢাকার আশুলিয়া, রাজশাহীর শাহমখদুম, কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া, কুমিল্লার হোমনা, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, গাজীপুরের কালীগঞ্জ, শ্রীপুর, কুমিল্লার চান্দিনা এবং ঢাকার কাফরুলসহ বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।

Tinggalkan Balasan

Alamat e-mel anda tidak akan disiarkan. Medan diperlukan ditanda dengan *