Home খেলা আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু বাংলাদেশের
অক্টোবর ৮, ২০২৩

আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু বাংলাদেশের

জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করেছে বাংলাদেশ। গতকাল প্রথম ম্যাচেই ৬ উইকেটে আফগানিস্তানকে উড়িয়ে বড় জয় পেয়েছে টাইগাররা। ম্যাচে জয়ের নায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে দারুণ জয় দিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরু করেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ ও ২০১৯ সালের বিশ্বকাপেও নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশ। গতকাল বল হাতে ৩ উইকেট শিকারের পর ব্যাট হাতে ৫৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হন মিরাজ। সাকিব আল হাসানের পর বাংলাদেশের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে বিশ^কাপের ম্যাচে ৩ উইকেট শিকার ও ৫০ রান করা খেলোয়াড় হলেন মিরাজ। এছাড়া দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন ব্যাট হাতে অপরাজিত ৫৯ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত। মাঠের বাইরের নানা বিতর্কের পর বিশ্বকাপে এমন একটা শুরুর দরকার ছিল বাংলাদেশের। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হয়েছেও তাই।  আফগানিস্তানকে ১৫৬ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয় পেয়েছে ৯২ বল হাতে রেখে। বিশ্বকাপে বলের হিসেবে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। গতকাল ধর্মশালার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। ব্যাট হাতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিল আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। ৮ ওভারে বিনা উইকেটে ৪৭ রানের সূচনা করেন তারা। তবে দুই স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মিরাজের ঘূর্ণিতে পড়ে শেষ পর্যন্ত ৩৭ দশমিক ২ ওভারে  মাত্র ১৫৬ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। সাকিব ও মিরাজ ৩টি করে উইকেট নেন। জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ছিল ১৫৭ রান। টার্গেটটা সহজই ছিল টাইগারদের জন্য। জয়ের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মিরাজের ৫৭ ও নাজমুল হোসেন শান্তর অপরাজিত ৫৯ রানের সুবাদে ৯২ বল বাকী রেখেই বিশ^কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। জয়ের জন্য ১৫৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ৪ ওভারে বিনা উইকেটে ১৯ রান তুলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও লিটন দাস। তবে পঞ্চম ওভারে দলীয় ১৯ রানে রান আউট হয়ে ৫ রান করে ফেরেন তানজিদ। এরপর সপ্তম ওভারে প্যাভিলিয়নে তানজিদের সঙ্গী হন লিটন। আফগানিস্তানের পেসার ফজলহক ফারুকির বলে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন ২টি চারে ১৮ বলে ১৩ রান করা  লিটন। দলীয় ২৭ রানে ২ ওপেনারকে হারিয়ে একটু চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জুটি রেধে দলের হাল ধরেন মিরাজ ও শান্ত।  দু’বার জীবন পেয়ে শান্তর সাথে ২৩তম ওভারে বাংলাদেশের রান ১শতে নেন মিরাজ। ঐ ওভারেই ওয়ানডেতে তৃতীয় হাফ-সেঞ্চুরি করেন ৫৮ বল খেলা মিরাজ। বিশ^কাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচের দু’টিতেই হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। হাফ-সেঞ্চুরির পর ইনিংস বড় করতে পারেননি মিরাজ। নাভিনের বলে মিড অফে রহমতকে ক্যাচ দিলে  ৫টি চারে ৭৩ বলে ৫৭ রান করা ডান হাতি ব্যাটারের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। সর্বশেষ এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওপেনার হিসেবে নেমে ১১২ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মিরাজ। তৃতীয় উইকেটে শান্ত-মিরাজ  ১২৯ বলে ৯৭ রানের জুটি গড়েন।

মিরাজ যখন ফিরেন তখন জয় থেকে ৩৩ রান দূরে ছিলো বাংলাদেশ। সাকিবকে নিয়ে দলের নিশ্চিত করার পথেই ছিলেন শান্ত। কিন্তু ৩৪তম ওভারে দলীয় ১৪৬ রানে ওমরজাইর বলে শিকার হয়ে জয় থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে প্যাভিলিয়নের ফেরেন সাকিব। সাকিব।শান্ত-সাকিব জুটি ২২ রান যোগ করেন। সাকিব ফেরার পর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে প্রয়োজনীয় ১১ রান তুলে ৩৫তম ওভারেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন শান্ত। ৮০ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ অধর্শতকের দেখা পাওয়া শান্ত শেষ পর্যন্ত ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৩ বলে  ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ২ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। আফগানিস্তানের ফারুকি-নাভিন ও ওমরজাই ১টি করে উইকেট নেন। এরআগে, ব্যাট করতে নেমে ১৫৬ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান। অবশ্য শুরুটা ভালোই করেছিল দলটি। উদ্বোধনী জুটিতেই দলটি করেছিল ৪৭ রান। ইনিংসের নবম ও নিজের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক-থ্রু এনে দেন সাকিব। সাকিবের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে তানজিদ হাসানকে ক্যাচ দেন ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৫ বলে ২২ রান করা ইব্রাহিম। দলীয় ৪৭ রানে প্রথম উইকেট পতনের পর জুটি গড়ার চেষ্টা করেন গুরবাজ ও রহমত শাহ। দেখেশুনে খেলে রানের চাকা সচল রাখেন তারা। ১৫ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৮৩ রান পেয়ে যায় আফগানিস্তান। ইনিংসের ১৬তম ও নিজের চতুর্থ ওভারে আবারও বাংলাদেশকে আবারো ব্রেক থ্রু এনে দেন  সাকিব। আবারও সাকিবের অফ-স্টাম্পের বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে মিস টাইমিংয়ে কাভারে লিটন দাসকে ক্যাচ দেন ১৮ রান করা রহমত। এরপর অধিনায়ক হাসমতুল্লাহ শাহিদিকে নিয়ে আফগানিস্তানের রান ১শ পার করেন গুরবাজ। ২৫তম ওভারে শাহিদিকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে তৃতীয় সাফল্য এনে দেন মিরাজ। সাবধানে খেলতে থাকা শাহিদি ৩৮ বল খেলে ১৮ রান করেন। পরের ওভারে উইকেটে সেট ব্যাটার গুরবাজকে ফেরান মুস্তাফিজ। ডিপ পয়েন্টে তানজিদকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৬২ বলে ৪৭ রান করা গুরবাজ। ১১২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে আফগানিস্তান। এ অবস্থায় আফগানিস্তানের মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটারকে আউট করে চাপ আরও বাড়ান সাকিব ও তাসকিন। ২৯তম ওভারে নাজিবুল্লাহ জাদরানকে দারুন এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন সাকিব। ১৩ বলে ৫ রান করেন নাজিবুল্লাহ। পরের ওভারে ১২ বলে ৬ রান করা মোহাম্মদ নবির উইকেট উপড়ে ফেলেন তাসকিন। ১২৬ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতন হয় আফগানিস্তানের। এ অবস্থায় সপ্তম উইকেটে ২৬ বলে ২৪ রান যোগ করে আফগানিস্তানের রান দেড়শতে নেন আজমতুল্লাহ ওমারজাই ও রশিদ খান। ৩৫তম ওভারে রশিদকে ব্যক্তিগত ৯ রানে বোল্ড করে দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন মিরাজ। ৩৫তম ওভারে দলীয় ১৫০ রানে সপ্তম ব্যাটার হিসেবে রশিদ ফেরার পর আফগানিস্তান ইনিংসের শেষ ৩ উইকেট দ্রুতই তুলে নেন শরিফুল ও মিরাজ। ৩৭ দশমিক ২ ওভারে ১৫৬ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। ১৫৬ রানেই শেষ ৩ উইকেট হারায় আফগানরা। ওমারজাইকে ২২ রানে এবং নাভিন উল হককে খালি হাতে বিদায় করেন শরিফুল। মুজিব উর রহমানকে রানের খাতা খুলতে দেননি মিরাজ। অর্থাৎ বাংলাদেশী বোলারদের সামনে ধুকতে থাকা আফগানরা ৪৪ রানে শেষ ৬ উইকেট হারায়। সাকিব ৮ ওভারে ৩০ রানে ও মিরাজ ৯ ওভারে ২৫ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। শরিফুল ৩৪ রানে ২টি, তাসকিন ৩২ রানে ও মুস্তাফিজ ২৮ রানে ১টি করে উইকেট শিকার করেন। ধর্মশালায় আগামী ১০ অক্টোবর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *