Home ধর্মীয় সংবাদ প্রিয় নবীজির চরিত্র ছিল বাস্তব কোরআন
সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩

প্রিয় নবীজির চরিত্র ছিল বাস্তব কোরআন

‘আপনি সুমহান চরিত্রের অধিকারী’-এ হলো রসুল (সা.) সম্পর্কে আল্লাহতায়ালার বাণী। পৃথিবীর সব কলম যাবতীয় কল্পনা আল্লাহর এ বাণীর তাৎপর্য তুলে ধরতে অক্ষম। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশ্বরিক মানদন্ডে তার বান্দা রসুল (সা.)-এর ব্যাপারে এ সাক্ষ্য ‘এবং নিঃসন্দেহে আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী’ (সুরা কালাম আয়াত ৪) এবং এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সুমহান চরিত্র বিশিষ্ট হওয়ার দলিলও বটে।

যার প্রকৃত মর্ম আল্লাহ ভালো জানেন। কোনো সৃষ্টির পক্ষে সম্ভব নয় এর স্বরূপ পূর্ণাঙ্গভাবে উপলব্ধি করা। এ বাণী বহুভাবে মুহাম্মদ (সা.)-এর মহত্ত্ব প্রকাশ করে। তিনিই সেই প্রতীক্ষিত নবী। যার মাধ্যমে নবুওয়াত প্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং নবুওয়াতের ধারা সমাপ্ত হয়েছে। সুতরাং তাঁর মধ্যে সর্বোত্তম চারিত্রিক জ্ঞানের সমাবেশ আশ্চর্যের কিছু নয়। এটা নবুওয়াত সমাপ্তির অনিবার্য বিষয়।

রসুল (সা.)-এর চরিত্র ও আচরণই হলো মানদন্ড। যার ওপর ভিত্তি করে সব আমল ও কাজের মূল্যায়ন হবে। তার চরিত্রই হলো মাপকাঠি, যার মাধ্যমে সব চরিত্রের পরিমাপ করা যাবে। এমন একটি মানদন্ড থাকা জরুরি। কারণ সময়ের পরিক্রমায়, প্রজন্মের পরিবর্তনে অনেক সময় মূল্যবোধ পাল্টে যায়। মন্দ পরিণত হয় ভালোতে, আর ভালো হয়ে যায় মন্দে।

 

‘তার আখলাক ছিল হুবহু কোরআন’-এটা উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেছিলেন রসুল (সা.)-এর আখলাক বর্ণনা করতে গিয়ে, এ বর্ণনায় আয়েশা (রা.)-এর গভীর প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও পা-িত্যের প্রমাণ বহন করে। কোরআনে অনেক কাজ করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে, অনেক কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনেক ফজিলতপূর্ণ আমলের প্রতি উৎসাহ দান করা হয়েছে এবং অনেক বিষয় থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায় কোরআন যা কিছুই বলেছে তিনি তা মেনেছেন যা কিছুই নিষেধ করেছে, তিনি তা বর্জন করেছেন। প্রকাশ্য ও প্রকাশ্য সব ধরনের অশ্লীলতা বেহায়াপনা থেকে সম্পূর্ণ নিজেকে পাক ও পবিত্র রেখেছেন।

অর্থাৎ পৃথিবীর সব মানুষ, সব সভ্যতা যদি কোনো জিনিসকে ভালো বলে, আর যদি কোরআন সেটাকে খারাপ বলে, তো সেটাকে তিনি খারাপ বলে তার থেকে সম্পূর্ণরূপে নিজেকে সরিয়ে নিতেন এবং মনেপ্রাণে তা ঘৃণ্য ও বর্জনীয় বস্তু হিসেবে সাব্যস্ত করতেন। আর পৃথিবীর সব মানুষ, সব সভ্যতা যদি কোনো জিনিসকে খারাপ বলে, অথচ কোরআন সেটাকে ভালো বলে, তখন তিনি সেটাকে প্রিয় বস্তু এবং করণীয় আমল হিসেবে মনেপ্রাণে কোনো প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই গ্রহণ করে নিতেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে তার কালামুল্লাহর মাধ্যমে সমস্ত করণীয় এবং বর্জনীয় ভালো এবং মন্দকে তিনি যথার্থভাবেই গ্রহণ করে নিতেন এবং কোনো প্রকারের তারতম্য, অবহেলা, গাফিলতি ও সময়ক্ষেপণ করার কোনো সুযোগ রাখতেন না।

হজরত ইমাম বাইজাবি (রহ.) বলেন এর অর্থ কোরআনের যাবতীয় বিষয় মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চরিত্রে একীভূত হয়ে গিয়েছিল। কোরআন যা উত্তম বলেছে, তিনি তাই করেছেন। কোরআন যে কাজের প্রশংসা করেছে, যে দিকে আহ্বান করেছে, তিনি তা দিয়েই নিজেকে সাজিয়েছেন এবং যা মন্দ বলেছে, যা কিছু নিষিদ্ধ করেছে, তা তিনি বর্জন করার গৌরব অর্জন করেছেন। সুতরাং কেউ যদি রসুল (সা.)-এর চরিত্র সম্বন্ধে জানতে চায় তাহলে বলা যায়, যে রসুলের চরিত্র ছিল হুবহু কোরআন অর্থাৎ কোরআন পড়ে নাও রসুলের চরিত্র সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে নাও।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর দিন রাত রসুল (সা.)-এর খেদমত করেছি, কিন্তু তিনি কখনো আমাকে প্রহার করেননি, ধমক দেননি, কোনো দিন বলেননি, কেন তুমি এ কাজ করেছ আর কেন এটি করনি-সহি বুখারি। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রসুল (সা.) কখনো অশ্লীল কথা বলতেন না, অশোভন কিছু করতেন না, তিনি বলতেন তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো সেই ব্যক্তি যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী-সহিহ বুখারি।

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহুতায়ালা আনহা বলেন, আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, মুমিন বান্দা সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে রোজাদার ও নামাজি ব্যক্তির মর্যাদা অর্জন করে নেয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং কেয়ামতের দিবসে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে তারা, যারা তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর চরিত্রের অধিকারী। আর সবচেয়ে অপছন্দনীয় ও কিয়ামত দিবসে আমার থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী হবে তারা, যারা তোমাদের মধ্যে বাচাল, দাম্ভিক, অহংকারী ও হিংসুটে হয়।

আয়েশা (রা.) বলেন রসুল বলেছেন, ইমানের দিক থেকে সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ মমিন হলো সে, যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী এবং পরিবার পরিজনের প্রতি অধিক হৃদ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি-তিরমিজি। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেকটি বিশেষ গুণ ছিল, তিনি ছিলেন আল আমিন তথা স্বীকৃত সত্যবাদী বা বিশ্বস্ত।

নবুওয়াতের আগে পরে উভয় সময়ে রসুল (সা.) ছিলেন নিজ মাতৃভূমি মক্কাসহ গোটা আরবে অত্যন্ত সত্যবাদী বলে পরিচিত। কেননা নবুয়তের আগেই মক্কায় ছোট বড় সবার কাছে এ নামেই তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। এ কারণেই প্রথমবার যখন অহি অবতীর্ণ হয় এবং হজরত খাদিজা (রা.)-কে তিনি বলছিলেন, নিজেকে নিয়ে ভয় হচ্ছে আমার। খাদিজা তাকে বললেন, আপনি পেরেশান হবেন না বরং আপনি নিশ্চিন্ত ও শান্ত থাকুন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, কাওলার বাজার জামে মসজিদ, দক্ষিণখান, ঢাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *