কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর বার্তা
ব্যাংকের চেয়ারম্যান-এমডিদের দ্বন্দ্ব দিন দিন বেড়েই চলছ। কয়েকটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের পদত্যাগ ও পদত্যাগের গুঞ্জন ঘিরে কয়েকদিন যাবৎ ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ব্যাংকের পরিচালন পর্ষদের সাথে বনিবনা না হওয়া, ব্যাংকের স্বার্থে নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় কিছু ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সাথে পরিচালনা পর্ষদের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আর এ নিয়েই কিছু ব্যাংকের এমডি চাকরি হারানোর আশঙ্কা করছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল চেয়ারম্যান-এমডিদের দ্বন্দ্ব নিরসন করার কঠোর বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক চেয়ারম্যানদের সাথে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে দ্বন্দ্ব বন্ধ করে করপোরেট গভর্নেন্স মেনে চলার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতাদের সাথে বৈঠকে গভর্নর এ তাগিদ দেন। বৈঠকে বিএবি চেয়ারম্যান মো: নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে আট সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের তিন ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বৈঠকে এমডিদের সাথে চেয়ারম্যানের দ্বন্দ্ব বন্ধ, বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) বেঁধে দেয়া দামের চেয়ে বেশি মূল্যে ডলার কেনাবেচা না করা, মূল্যস্ফীতি চাপ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন ও ঋণপত্রের (এলসি) মাধ্যমে ডলার পাচার বন্ধসহ ব্যাংকগুলোর করপোরেট গভর্নেন্সের যাবতীয় নীতিমালা মেনে চলার বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ সময় ডলার কারসাজি রোধে ব্যাংক চেয়ারম্যানদের কড়া বার্তা দেন গভর্নর।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, নানা সময় ব্যাংকের পরিচালকদের দ্বারা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা হেনেস্তার শিকার হচ্ছেন। অতীতে ন্যাশন্যাল ব্যাংক এর সবচেয়ে বড় উদাহারণ। সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হওয়ায় নানা সময়ে ব্যাংকটি থেকে এমডিরা পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।ন সম্প্রতি এর শিকার হয়েছেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি। সমস্যাকবলিত ফার্মার্স ব্যাংক থেকে পদ্মা ব্যাংক নাম ধারণ করা ব্যাংকটির এমডি তারেক রিয়াজ খান পদত্যাগ করেন। গত বছর মার্চ থেকে নিয়োগ পাওয়া তারেক রিয়াজ খানের চাকরির মেয়াদ আগামী ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অর্থাৎ চুক্তির মেয়াদের ১৯ মাস আগেই তিনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। যদিও পদত্যাগ পত্রে তিনি ব্যক্তিগত কারণ উল্লেখ করেছেন। এর পর আরো কয়েকটি ব্যাংকের এমডির পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠে। এতেই নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে পদত্যাগ করা পদ্মা ব্যাংকের সাবেক এমডি ও পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠা আরো কয়েকজনের সাথে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর। গতকাল ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের সাথেও বৈঠক করেন গভর্নর।
বৈঠক প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণেই বিএবির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এসেছিল। এটা পূর্বনির্ধারিত বৈঠক। ব্যাংকের চেয়ারম্যানদের সাথে বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, মূল্যস্ফীতির চাপ, রিজার্ভ পরিস্থিতি, ডলার, এক্সচেঞ্জ রেট এবং আমদানি-রফতানি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে; এগুলো তাদের জানানো হয়েছে। পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে তাদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। বিএবির পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। গভর্নর ব্যাংকগুলোর করপোরেট গভর্নেন্স মেনে চলার তাগিদ দিয়েছেন জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, দেখা যাচ্ছে বাফেদার বেঁধে দেয়া দামের বাইরে গিয়ে অনেকে ডলার কেনাবেচা করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না। এমডিদের সাথে চেয়ারম্যানদের দ্বন্দ্ব লাগছে। বৈঠকে এসব বিষয়গুলো সমাধানে করপোরেট গভর্নেন্স মানতে বলা হয়েছে।