ভুয়া নাম-ঠিকানায় নেন গৃহকর্মীর কাজ, চুরি করে হন লাপাত্তা
নাম ও ঠিকানা যা দেন—সবই ভুয়া। ভুয়া পরিচয় দিয়ে আজ এ–বাড়িতে তো কাল ও–বাড়িতে নেন গৃহকর্মীর কাজ। কাজ শুরুর পরই সেই বাড়িতে ঘটে চুরির ঘটনা। চুরির পরে তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া না। কোনো তথ্য না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারে না।
এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের ঘটনা। রাজধানীর শান্তিনগরে একটি বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। চুরির পর আছিয়া বেগম নামে পরিচয় দেওয়া ওই বাসার গৃহকর্মীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে জানা যায়, একই কায়দায় রাজধানীর জিগাতলার একটি বাসা থেকেও চুরি করে পালিয়েছিলেন আছিয়া।
গৃহকর্মীর কাজ নেওয়ার জন্য গত ১ মে বিকেলে জিগাতলায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিউডি) অফিসার্স কোয়ার্টারের একটি বাসায় ঢোকেন এই নারী। প্রতিদিন একটি কাজ করে দেবেন—এমন চুক্তিতে কাজ নেন। কথা–পাকাপাকি হলে জানান, সেদিনই কাজ শুরু করতে চান। এরপর সেদিনই শুরু করেন কাজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বাসার এক বাসিন্দা বলেন, প্রথম দিন শয়নকক্ষ মোছার সময় তিনি অপ্রয়োজনেই বেশি কথা বলছিলেন। রান্নাঘর থেকেও শোনা যাচ্ছিল তাঁর কথা। বারবার এটা–সেটা জানতেও চাচ্ছিলেন। কাজ করতে এসে প্রথম দিনেই এত কথা বলতে দেখে তিনি বিরক্ত হয়েছিলেন।
গৃহকর্মী বেশে ঘরে ঢুকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে সটকে পড়েছেন তিনি
ওই বাসিন্দা বলেন, ‘চুরির পরে বুঝতে পারি, তিনি আসলে প্রশ্ন করে বাসার সবার অবস্থান জেনে নিচ্ছিলেন। এতে ঘরে থাকা জিনিসপত্র হাতিয়ে দেখা তাঁর জন্য সহজ হবে। সেটাই ঘটেছে।’ পরে শয়নকক্ষে রাখা ব্যাগ থেকে এক লাখ টাকার স্বর্ণালংকার নিয়ে ওই দিনই পালিয়ে যান তিনি।
এ বাসায় সেদিন মাত্র ২০ মিনিট কাজ করেই চলে যান ওই নারী। জাতীয় পরিচয়পত্র চাওয়া হলে পরদিন নিয়ে আসবেন বলে জানিয়েছিলেন। আরও জানিয়েছিলেন, কামরাঙ্গীরচরে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন তিনি। তাঁকে ওই বাসায় নিয়ে যান বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক (কেয়ারটেকার)। কেয়ারটেকারকে ওই নারী জানিয়েছিলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের ওই আবাসিক এলাকায় আগেও গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। এটা জানার পরই তাঁকে ওই বাসায় নিয়ে যান তত্ত্বাবধায়ক।
চুরির ঘটনার পর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ওই নারীকে শনাক্ত করা হয়। ঘটনাটি জেনে বাড়িটি পরিদর্শনে যান হাজারীবাগ থানা–পুলিশের কয়েকজন সদস্য। তবে ফুটেজ থেকে পাওয়া ছবি ছাড়া আর কোনো তথ্য না থাকায় ঘটনার শিকার পরিবারটি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
আছিয়া বেগম নামে পরিচয় দিয়ে ওই নারী ১০ সেপ্টেম্বর শান্তিনগরের একটি বাসা থেকেও ৪০ হাজার টাকা নিয়ে সটকে পড়েন। এই ঘটনা নিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে থাকা ছবি দেখে জিগাতলার ওই বাসার এক বাসিন্দা তাঁকে চিনতে পারেন। প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুঠোফোনে পাঠান সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে নেওয়া সেই ছবি।
শান্তিনগরের ওই বাসার নিরাপত্তারক্ষী জানান, আছিয়া বেগম নামের ওই নারীকে তিনি চেনেন না। আগে কখনো দেখেননি। সেদিনই প্রথম এসে কাজের সন্ধান করেছেন। শুধু বলেছেন, মান্ডা এলাকায় থাকেন। তবে তিনি গৃহকর্ত্রী রেহানা বেগমকে বলেছিলেন, তিনি পল্টন মসজিদের গলিতে থাকেন।
জিগাতলার ওই বাসিন্দার মতে, এক নারীর একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন জায়গায় চুরির ঘটনা থেকে তাঁর সন্দেহ এর সঙ্গে কোনো চক্র জড়িত। চক্রের অন্য সদস্যরাও একইভাবে এলাকা ভাগ করে গৃহকর্মী পরিচয়ে চুরি করে পালাচ্ছেন। নাম ও ঠিকানা ভুয়া হওয়ায় তাঁদের শনাক্ত করাও যাচ্ছে না।
গৃহকর্মীর বেশে খালি বাসার তথ্য নেন স্ত্রী, স্বামী করেন চুরি
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিয়ম হচ্ছে সব তথ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্থায়ী ঠিকানা নিয়ে গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়া। এ বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সব সময় সচেতনতা তৈরিতে কাজ করা হয়। কোনো কারণে যদি এর কোনোটি না থাকে, তাহলেও অজ্ঞাতপরিচয় দিয়ে মামলা করা যাবে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, চুরির ঘটনার শিকার ব্যক্তি আইনি পদক্ষেপ নিলে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। আর সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যদি তাঁদের কাছে থাকে, তাহলে সেটা বিশ্লেষণ করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে।