Home কৃষি ও প্রকৃতি রাজবাড়ীতে গাড়ল পালনে লাভবান খামারিরা
আগস্ট ২৭, ২০২৩

রাজবাড়ীতে গাড়ল পালনে লাভবান খামারিরা

সোহেল রানা চৌধুরী রাজবাড়ী:

রাজবাড়ীতে বাণিজ্যিকভাবে হচ্ছে উন্নত জাতের গাড়ল পালন। জেলার চাহিদা মিটিয়ে আশেপাশের জেলাতেও বিক্রি হচ্ছে এ জেলার গাড়ল। গাড়ল পালন করে ভাগ্য বদলেছে অনেক খামারির। গাড়লের বাজারে ভালো দাম পেয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভোবন হচ্ছেন চাষিরা। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় জেলায় দিন দিন বাড়ছে গাড়লের খামার।

দেখতে হুবুহু ভেড়ার মতই। এদের জীবনচক্রও একই রকমের। তবে ভেড়ার চেয়ে আকারে বেশ বড় ও মাংসের পরিমাণও কয়েকগুন বেশি গাড়লের। ভেড়াগোত্রীয় এই গাড়লের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে সারা দেশ জুড়ে। রাজবাড়ী জেলার খামারিদের কাছ থেকে গাড়লের বাচ্চা কিনে নিয়ে নতুন নতুন খামার গড়ে তুলছেন জেলাসহ দেশের অনেক জেলার খামারিরা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উদ্যোক্তারা খামার থেকেই বাচ্চা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

খামারিরা জানিয়েছেন, আকার ও আকৃতিভেদে ৬ মাস বয়সের গাড়লের প্রতিটি বাচ্চাা ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টি গাড়লের খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে বছরে প্রায় ১ হাজার গাড়লের বাচ্চা উৎপাদন হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার যতগুলো খামার রয়েছে তার বেশিরভাগ থেকেই বাচ্চা উৎপাদন মূল লক্ষ্য। মাংস বিক্রির উপযুক্ত গাড়লের চেয়ে বাচ্চা বিক্রি বেশি লাভজনক। জেলার বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জের পশু হাটে গাড়ল বিক্রি হয়ে থাকে। তবে বাচ্চা গাড়ল বিক্রি হয় খামার থেকেই। এতে খামারিরা স্বচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

রাজবাড়ী জেলা সদরের বসন্তপুর ইউনিয়নের গাবলা গ্রামের খামারি মো. ইসমাইল (৫৫) বলেন, আগে ছাগল পালন করতাম। পরে ইউটিউবে দেখেছি গাড়ল পালন অধিক লাভজনক। চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে ৬০টি গাড়ল কিনে আনি রাজবাড়ীতে। এখানে ১ বিঘা জমিতে ঘর তৈরি করে গাড়ল পালন শুরু করি ২০২১ সালের শেষের দিকে। এ পর্যন্ত ৪০টি গাড়ল আমি বিক্রি করেছি।

তিনি আরও বলেন, গাড়ল বছরে দুইবার বাচ্চা দেয়। প্রতিবারে দুই থেকে তিনটি বাচ্চা প্রসব করে মা গাড়ল। দেশীয় ভেড়ার চেয়ে গাড়ল আকারে প্রায় দ্বিগুণ। যেখানে দেশীয় একটি ভেড়ার ২০ থেকে ২৫ কেজি মাংস হয় সেখানে প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি গাড়লের ৩৫ থেকে ৫০ কেজি মাংস পাওয়া যায়। গাড়লের দামও বেশি এবং এর মাংস খেতে সুস্বাদু।  খাবার, আবাস ও পালন পদ্ধতি দেশীয় ভেড়ার মতই।

 

আরেক খামারি মো. আল আমিন বলেন, জেলার পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার মানুষ খামার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন গাড়লের বাচ্চা। প্রতিটি ৬ মাসের দুধ ছেড়েছে এমন বাচ্চা ৪ থেকে ৬ হাজার এবং প্রাপ্তবয়স্ক ১৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এই গ্রামের আরেক গাড়ল পালনকারী যুবক মো. বছির বলেন, গাড়ল ভেড়ার চেয়ে আকারে বড় এবং লেজও অনেক বড়। গাড়ল সাধারণত কাঁচা ঘাস, গাছের পাতা, বিচুলী, ভূষি, খৈলসহ সব ধরনের প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে থাকে। ভেড়ার মতো গাড়লও একে ওপরের অনুসরণ করে চলে। এ জন্য গাড়ল পালন করা অনেক সহজ। তবে পুরুষ গাড়ল শান্তশিষ্ঠ দেখা গেলেও রাগি প্রকৃতির। সুযোগ পেলে মাথা দিয়ে আঘাত করে।

রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. খায়ের উদ্দীন আহমেদ বলেন, গাড়ল সব পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। এদের রোগব্যাধি অনেক কম। এ জন্য গাড়ল পালন সহজ। প্রতি ৭ মাস পর পর গাড়ল বাচ্চা দেয়। প্রসবকালে ২টি পর্যন্ত বাচ্চা হয়। ৪ থেকে ৫ মাসের একটি গাড়লের বাচ্চার দাম ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। মাদি গাড়ল বিক্রি হয় প্রতিটি ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকায়। গর্ভবতী গাড়ল বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকায়। পাঠা গাড়ল বিক্রি হয় প্রতিটি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায়। গাড়লের মাংস ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এর মাংস সুস্বাধু হওয়ায় চাহিদা বেশি। পূর্ণ বয়স্ক গাড়লের ওজন ৫৫ থেকে ৬০ কেজি পর্যন্ত হয়। গাড়ল খামার করেই স্বাবলম্বী হতে পারেন উদ্যোক্তারা। গাড়ল পালনে বাড়তি খাবারের প্রয়োজন নেই। দিন দিন গাড়ল পালন বাড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *