Home সারাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই ১২ গ্রামের মানুষের ভরসা
জুলাই ১৩, ২০২৩

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই ১২ গ্রামের মানুষের ভরসা

বর্ষা এলেই ডুবে যায় বাঁশের সাঁকো। আর তার ওপর যে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে হাজারও মানুষ। নবাব গঞ্জ উপদেষ্টার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রাজাপুর নয়াপাড়া খালপাড়ের দৃশ্য এটি। দুই যুগের বেশি সময় ধরে একটি পাকা সেতুর অভাবে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ।

এলাকাবাসী জানান, শুকনো মৌসুমে তারা বাঁশ দিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো তৈরী করেন। সেই সাঁকো দিয়ে জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১২ গ্রামের ৩০ হাজার মানুষকে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

জনপ্রতিনিধিদের কাছে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানানোর কথা বার বার বলেও সাড়া পাননি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ । কেবল কথা দেয়াতেই আটকে থাকে জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাস। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৯টি গ্রামের মানুষ চলাচল করেন এই পথ দিয়ে। এ ছাড়া ৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করেন এই পথ দিয়ে। সমস্যায় ভোক্তভোগী গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজাপুর, নয়াডাঙ্গী, কেদারপুর, রায়পুর, ঘোষাইল,শ্যামপুর,ধূলশুড়া ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কেউ কথা রাখছে না। জনপ্রতিনিধিরাও প্রতিশ্রুতি দিয়ে বছরের পর বছর পার করে দিচ্ছেন। সাঁকোর ওপর দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। বর্ষায় কিংবা পানি বেড়ে গেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমে যায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা। কয়েকটি গ্রামের হাজারের উপর শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে দাবি অভিভাবক ও শিক্ষকদের। অন্যদিকে আরেক সমস্যার সৃষ্টি হয় যখন কেউ অসুস্থ হয়ে পরে। রোগীকে চিকিৎসার জন্যে ভালো জায়গায় নেওয়াও সম্ভব হয় না। যার কারণে জীবন ঝুঁকিও বেশি এই কয়েকটি গ্রামের মানুষের বলে দাবি স্থানীয়দের।

রাজাপুর গ্রামের মোতালেব খাঁন বলেন, ‘কেউ অসুস্থ হলে বিপদে পড়তে হয়। বর্ষাকালে সন্ধ্যায় নৌকা পাওয়া যায় না। জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের কাছে কিংবা হাসপাতালে যাওয়া দরকার এমন পরিস্থিতিতে পল্লি চিকিৎসকের কাছে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় থাকে না আমাদের।’

নয়াডাঙ্গী এলাকার মবজেল খান বলেন, ‘যারা এই এলাকায় থাকেন তারাই শুধু এখানকার মানুষের কষ্ট বোঝেন। অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু সেতু আর হয়নি।’

রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাউছার হোসেন বলেন, ‘ বর্ষা আসলেই ডুবে যায় সাঁকোটি। এই সময়ে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে যায়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হলে আমাদের শিক্ষার্থীরাও অনেক উপকৃত হবে।’

কলেজ শিক্ষার্থী ইশিতা খান বলেন, ‘আমাদের সারা বছরই দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা এলে নৌকা ছাড়া চলাচল করা যায় না। সাঁকোটি ভেঙে এখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হলেই আমাদের দুর্ভোগ শেষ হবে।’

এলাকাবাসী জানান, বর্ষার শুরুতে চলাচলের একমাত্র বাঁশের সাঁকোটি ডুবে যায়। কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায় খালের পাড়। প্রায় সময় সাঁকো থেকে পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটে। কিছুদিন আগেও সম্পূর্ণ ভাঙা ছিল সাঁকোটি। এলাকার যুবকরা মিলে সংস্কার করায় কিছুটা চলাচলের উপযোগী হয়েছে। প্রতি বছরই দুই পাড়ের স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেন। চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ খুঁটি। জনপ্রতিনিধিরা দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও পরে তা আর বাস্তবায়ন হয় না বলে অভিযোগ তাদের। তাই অবিলম্বে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সেতু না থাকায় যাতায়াত, উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারে আনা-নেয়া, অন্যান্য মালামাল বহনে ভোগান্তির শেষ নেই। শুধু বাঁশের একটি সাঁকো ১২ গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। ফলে কৃষি সমৃদ্ধ এই এলাকায় আজও তেমন আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। এখানে একটি ব্রিজ নির্মিত হলে শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘবের পাশাপাশি সময় ও অর্থেরও সাশ্রয় হবে বলে দাবি স্থানীয়দের।

জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেশমা আক্তার বলেন, ‘যেহেতু সামনে নির্বাচন উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের কাজ করতে হবে। তা না হলে জনগণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাব কীভাবে। উপজেলা থেকে তো একটা ফান্ড থাকতে হবে। আমরা যখন যেভাবে দিকনির্দেশনা পাই সেভাবেই কাজ করি।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডির) নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. জুলফিকার হক চৌধুরী বলেন, ‘ সাঁকোটির ব্যাপারে আমার জানা নেই। আপনার কাছেই শুনলাম। কোনও জনপ্রতিনিধি এ নিয়ে কখনো কিছু বলে নাই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *