রাজনীতি থেকে বিরোধীদের সরিয়ে দিতেই মিথ্যা মামলাসহ হতাহতের ঘটনা চলছে
স্টাফ রিপোর্টার: বিরোধী নেতাকর্মীদের রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হীন উদ্দেশেই দেশব্যাপী মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও হতাহতের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ বিএনপির। দলটি বলছে, সরকার এক্ষেত্রে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করছে। গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে বিএনপির পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য যথাক্রমে ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় ঈদুল আযহা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে এমন কি ঈদের দিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা ও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে মনে করে আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশে বিএনপি ও বিরোধী দল গুলোকে রাজনীতির মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এই হামলাগুলো চালাচ্ছে। ১৯ মে থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে ২১৫টি মামলায় মোট আসামী করা হয়েছে ৯ হাজার ৮শ’ জনকে। মোট গ্রেফতার হয়েছে ৮৩৬জন। স্থায়ী কমিটির সভায় গভীর আশংকা প্রকাশ করা হয় যে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি তথা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হীন উদ্দেশে এই অবৈধ সরকারের এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার, আহত ও হত্যা করা হচ্ছে।
সভায় সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে সিরিয়ায় গুম বা নিখোঁজ ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষের চূড়ান্ত পরিণতি কি হয়েছে তা জানতে একটি নিরপেক্ষ মেকানিজম বা বডি গঠন করার প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাবে সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ ভোট দানে বিরত থাকে। প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের ভোটে পাশ হয়। বাংলাদেশের এই ভোটদানে বিরত থাকা মানবাধিকার নীতির পরিপন্থি। বাংলাদেশ জাতিসংঘে মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হলেও এই বিষয়ে ভোট দানে বিরত থাকা প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের বর্তমান অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে গুরুতর অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গণে উঠেছে তা মিথ্যা নয়। সভায় এই অবৈধ সরকারের সকল প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণতন্ত্র বিরোধী কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানানো হয়।
সভায় সম্প্রতি জাতীয় সংসদে ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করে ব্যাংক কোম্পানি আইনের যে সংশোধনী আনা হয়েছে তাকে সম্পূর্ণ গণবিরোধী এবং সুশাসন বিরোধী বলে অভিহিত করা হয়। সভা মনে করে, দীর্ঘ দিন ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় নৈরাজ্য চালিয়ে ব্যাংকিং খাতকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সরকার দুর্নীতির লক্ষ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ খেলাপির জন্য কোন রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাদেরকে সকল প্রকার সুবিধা দিয়েই চলেছে। পুনঃতফশিলকৃত ঋন, অবলোপন করা ঋণ, অর্থঋণ আদালতে আটকে থাকা বিপুল পরিমাণ অংকের ঋন বিশেষ বিবেচনায় নবায়ন করা সহ আরো অনেক ঋণ যেগুলো খেলাপি যোগ্য সেগুলো খেলাপি ঋণ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে না। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে সরকারি হিসাব মতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা কিন্তু উপরোক্ত ঋণগুলোকে তালিকাভুক্ত না করায় প্রকৃত খেলাপি ঋণ প্রায় ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদদের মতে এর প্রধান কারন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। ব্যাংকিং খাতকে এই সরকার সচেতনভাবে ধ্বংস করছে। সভায় অবিলম্বে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে যে আইন করা হয়েছে তা বাতিলের দাবি জানায়।
সভায় সরকারের মদদ পুষ্ট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের চক্রান্তে কাঁচা মরিচের মূল্য কেজি প্রতি ১১শ’ টাকা অন্যদিকে কাঁচা চামড়ার মূল্য নি¤œমুখি হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভা মনে করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে অন্যদিকে কাঁচা চামড়ার মূল্য পরিকল্পিতভাবে হ্রাস করায় সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে এতিমখানাগুলো তাদের প্রাপ্য অর্থ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সভায় এ বিষয়ে সরকারের ব্যর্থতার তীব্র সমালোচনা করা হয় এবং অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য হ্রাস ও কাঁচা চামড়ার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
দেশ এখন নারকীয়
সন্ত্রাসের বৃত্তে আবদ্ধ
——- মির্জা ফখরুল
স্টাফ রিপোর্টার : দেশ এখন নারকীয় সন্ত্রাসের বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে কোন বাংলাদেশীরই সহায়-সম্পত্তি, জান-মাল নির্বিঘেœ চলাচলের কোন নিরাপত্তা নেই।
বিবৃতিতে কক্সবাজার জেলার উখিয়ায় হলদিয়া পালং ইউনিয়নের অন্তর্গত মরিচ্যা শ্রাবস্তি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ধর্ম জ্যোতি ভিক্ষুকে গত রোববার ভোর রাতে সন্ত্রাসীরা ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে যাওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে কোন বাংলাদেশীরই সহায়-সম্পত্তি, জান-মাল নির্বিঘেœ চলাচলের কোন নিরাপত্তা নেই। দেশ এখন নারকীয় সন্ত্রাসের বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ। জনসমর্থনহীন সরকারের একমাত্র অবলম্বনই হচ্ছে সহিংস সন্ত্রাসের আশ্রয় গ্রহণ করা। তাদের টিকে থাকার একমাত্র গ্যারান্টি হচ্ছে জনসমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ভয়ের পরিবেশ বজায় রাখা।
মির্জা ফখরুল বলেন, পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশুসহ প্রতিদিনই কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছে। রক্ত ঝরছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিভিন্ন জনপদে বহুদলীয় গণতন্ত্র বহু মত ও পথের শেষ চিহ্নটুকু মুছে দিতে সরকার মনুষ্যত্বহীন অমানবিক পন্থায় সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠন ধ্বংস করছে। তারা আবারও ভোটার শূণ্য একতরফা নির্বাচন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। একদিকে দেশব্যাপী ডেঙ্গু রোগের ব্যাপক বিস্তারে মানুষের মৃত্যু ও দূর্ভোগে সরকারের অবহেলায় ক্ষুদ্ধ জনগণ, অন্যদিকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবীতে সারাদেশের মানুষেরা যখন ঐক্যবদ্ধ তখন জনদৃষ্টিকে ভিন্ন দিকে ফেরাতেই বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ধর্ম জ্যোতি ভিক্ষুকে ছুরিকাঘাতে আক্রান্ত করা একটি সু-পরিকল্পিত ঘটনা। এহেন একজন শ্রদ্ধেয় ধর্মগুরুকে শারিরীকভাবে আহত করা কেবলমাত্র আওয়ামী শাসন আমলেই সম্ভব। গণধিকৃত আওয়ামী সরকার রক্তাক্ত হানাহানীকেই দলীয় ইস্তেহারে পরিণত করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিগত চৌদ্দ বছর ধরে জোরপূর্বক গুম, বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা, ভিন্নমত প্রকাশ ও কথা বলার স্বাধীনতাকে অদৃশ্য করার পাশাপাশি বিশ^াসযোগ্য, সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে মাটিচাপার মাধ্যমে বিশ^মঞ্চে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে জলাঞ্জলী দিয়ে কর্তৃত্ববাদী শাসন ধরে রাখার জন্য রক্তাক্ত হিংসার পথে এগিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি লুটপাট ও পাচারের মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা। অন্যদিকে শ্রমিক, কৃষক, দিনমজুর সহ স্বল্প আয়ের মানুষেরা ক্ষুধার জালায় কাতরাচ্ছে। এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে দল মত নির্বিশেষে সকল গণতন্ত্রকামী মানুষকে একযোগে রাস্তায় নেমে আসতে হবে। জন সমাজে শান্তি, শৃঙ্খলা, স্থিতি ফিরিয়ে আনতে দেশের প্রকৃত গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্মাণের জন্য সবাইকে জোরালো কন্ঠে আওয়াজ তুলতে হবে। বিএনপি মহাসচিব অবিলম্বে অধ্যক্ষ শ্রীমৎ ধর্ম জ্যোতি ভিক্ষুর উপর হামলাকারী দুস্কৃতিকারীদের গ্রেফতার করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।