Home নির্বাচন বাংলাদেশে ফ্লাট বা এপার্টমেন্ট কেনা ভাল ইনভেস্টমেন্ট নয়।
মে ২১, ২০২৩

বাংলাদেশে ফ্লাট বা এপার্টমেন্ট কেনা ভাল ইনভেস্টমেন্ট নয়।

খালেদ মাহমদ,

এটার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে এসেটের দামের তুলনায় ভাড়া হাস্যকর রকমের কম!

ছোট একটা উদাহরণ দেই। ধরেন আপনি উত্তরায় ২০০০ স্কয়ার ফিটের একটা এপার্টমেন্ট কিনলেন, দাম নিল দুই কোটি টাকা। এই বাসার ভাড়া হবে বড়জোড় পঞ্চাশ হাজার টাকা।
ধরে নিলাম একজন এই বাসাটা কিনে নিজেই থাকা শুরু করলো। আমরা তার অপোরচুনিটি কস্ট ক্যালকুলেট করবো। হিসাবের সুবিধার্থে আমি ইনফ্লেশন ক্যালকুলেট করবো না, এটা উভয় পক্ষের হিসাব থেকেই বাদ যাবে।

এপার্টমেন্টটা যদি সে না কিনতো, পঞ্চাশ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে সে এই বাসাতেই এক বছরে মাত্র ছয় লাখ টাকা দিয়ে থাকতে পারবে। মানে দশ বছর থাকতে পারবে ষাট লাখ টাকায়। তিরিশ বছর থাকতে পারবে এক কোটি আশি লাখ টাকায়!

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, তাকে এককালীন যে দুই কোটি টাকা ইনভেস্ট করতে হত সেটা করতেই হল না। তার সঞ্চয় খরচ হল না, তার চিকিৎসার সিকিউরিটি থাকলো, তাকে তার সারা জীবনের সব সঞ্চয় এক জায়গায় বিনিয়োগের ঝুকি নিতে হল না, তাকে ঋণের দায় নিতে হল না। এই দুই কোটি টাকা সে অন্য যে কোন জায়গায় ইনভেস্ট করে তিরিশ বছরে আরও অনেক টাকা বানাতে পারে।
ধরলাম সে ইনভেস্ট করবে না, সে সবচেয়ে বাজে উপায়ে টাকাটা ব্যবহার করবে। অর্থাৎ সে শুধু ব্যাংকে টাকাটা রেখে দিবে। ধরলাম ব্যাংক তাকে ৬% হারে সুদ দিবে। তাহলে দুই কোটি টাকায় বছরে সে পাবে ১২ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাসে এক লাখ। পঞ্চাশ হাজার টাকা ভাড়া দিয়েও হাতে আরও পঞ্চাশ থাকে। তিরিশ বছরে সংখ্যাটা তিন কোটি ষাট লাখ টাকা শুধু ইন্টারেস্টেই! সঞ্চয়পত্রে ইনভেস্ট করলে সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি।

আর এই তিরিশ বছরে আপনার কেনা ফ্ল্যাট এর চেহারার অবস্থা কি দাঁড়াবে বলেন তো? ফ্ল্যাট তো জমি না, এর ডেপ্রিসিয়েশন আছে। এখনকার বাজারে তিরিশ বছরের পুরনো একটা ফ্ল্যাট কিনতে যান, বুঝবেন। ক্রেতা পান কিনা সন্দেহ! আর নিজেরা থাকলে বিল্ডিং ভেংগে আবার নতুন করে বাড়ি বানাতে হবে- আরও খরচ! নিজের ফ্ল্যাটে প্রতিবেশিরা ভাল না হলে ইউ উইল বি স্টাকড, আজীবন টক্সিক একটা পরিবেশে থাকতে হবে। ভাড়া বাসায় পুরো তিরিশ বছরই নতুন ফ্ল্যাটে থাকতে পারবেন, সুবিধা অনুযায়ী এলাকায় শিফট করতে পারবেন, পরিবেশ ভাল না লাগলে বদলে ফেলতে পারবেন।

অনেকে আবার লোন করে ফ্ল্যাট কিনে। বিশ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে যে ফ্ল্যাটে থাকা যায়, সেই ফ্ল্যাটে ডাউন পেমেন্টের টাকা পকেট থেকে দিয়ে তিরিশ হাজার টাকা প্রতি মাসে কিস্তি দেয়। এসেট হয়ে যায় লায়াবিলিটি, প্রতি মাসে যার খরচ দশ হাজার টাকা!

“নিজের বাড়ি” একটা বিংশ শতকের এলিটিস্ট আবেগ। একে প্রশ্রয় না দিয়ে স্মার্ট হোন!

বড়জোড় একটা জমি কিনে রেখে ভাড়া থেকে জীবন কাটায় দেন!

(ডিসক্লেইমার: আমি অবশ্যই বলছি না যে টাকা নিয়ে ব্যাংকে ফেলে রাখা ভাল জিনিস। এটা টাকার সবচেয়ে বাজে ব্যবহার৷ উদাহরণ টানলাম এটা বোঝাতে যে টাকার সবচেয়ে বাজে ব্যবহারও ফ্ল্যাট কেনার চেয়ে ভাল)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *