তরুণ নির্মাতারা জুলাই বিপ্লবকে সামনে রেখে বানাবেন পিস অব আর্ট: উপদেষ্টা ফারুকী
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, বাংলাদেশে সবকিছু রাজধানী কেন্দ্রিক। এর বাইরে মনে হয় কিছু নেই। এটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা না। এই বৈষম্য মাথায় রেখে কর্মশালা ৮ বিভাগে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের তরুণদের চলচ্চিত্রবিষয়ক সৃজনশীলতার উদঘাটন ও স্বীকৃতি দেয়া যাবে। কর্মশালার মাধ্যমে যে ৮টি চলচ্চিত্র নির্মিত হবে এ ক্ষেত্রে সরকারের কোন নির্দেশনা নেই। তরুণ নির্মাতারা জুলাই বিপ্লবকে সামনে রেখে যে ছবিগুলো বানাবেন, সেগুলো হবে পিস অব আর্ট।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘রিমেম্বারিং মনসুন রেভল্যুশন’ কর্মসূচির আওতায় ৮টি বিভাগে ৮টি মাঝারি দৈর্ঘ্যের কনটেন্ট বা ফিল্ম নির্মাণে ওয়ার্কশপ পরিচালনার জন্য নির্বাচিত ৮ চলচ্চিত্র পরিচালকের নাম ঘোষণা উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে পরিচালকদের নাম ঘোষণা করেন এ বিষয়ে গঠিত সার্চ কমিটির সদস্য সুমন রহমান।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, ‘এই চলচ্চিত্র পরিচালকদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তিনি ৫০টা কাজ করেছিলেন কি না, এটার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তিনি একটা কাজ করেছেন কি না, যেটাকে আমি উল্লেখ করতে পারি। আমরা দেখার চেষ্টা করেছি তাদের মধ্যে আগুনটা আছে কি না। এই আটজনই জানেন তাদের দিকে বাংলাদেশ তাকিয়ে আছে। তারা যে কাজটি করবেন, সেই কাজের দিকেই সবাই তাকিয়ে আছেন। তারা এটার ওজন জানেন এবং তারা সেটা রক্ষা করবেন।’
ফারুকী আরও বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে এই আট নির্মাতাকে বলছি, সরকার তাদের কোনো প্রেস্ক্রিপশন দিচ্ছে না। আমরা চাইও না তারা কোনো প্রপাগান্ডা ছবি বানাক। আমরা চাই তারা এমন ছবি বানাক, যেটা এনগেজিং এবং পিস অব আর্ট হবে! এবং ছবিটি নিয়ে ওই ফিল্মমেকার নিজেরাই প্রাউড ফিল করবে!’
এই চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকার সম্পূর্ণ আর্থিক সহযোগিতা দেবে। এ ক্ষেত্রে কত খরচ হবে সেটি পরিচালক এবং সার্চ কমিটি মিলে ঠিক করবে। আগামী জুনের মধ্যে এ চলচ্চিত্র নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা।
এদিকে সুমন রহমান বলেন, ‘সার্চ কমিটির লক্ষ্য ছিল আটজন চলচ্চিত্রকার নির্বাচন করা, যারা ২০২৫ সালে দেশের আটটি বিভাগীয় শহরে চলচ্চিত্র বিষয়ক কর্মশালা করে পরিচালনা করবেন এবং কর্মশালায় প্রশিক্ষিত জনবল নিয়ে আটটি চলচ্চিত্র তৈরি করবেন।
নির্বাচিত পরিচালকরা হচ্ছেন অনম বিশ্বাস, হুমায়রা বিলকিস, শঙ্খ দাশগুপ্ত, শাহীন দিল রিয়াজ, রবিউল আলম রবি, তাসমিয়াহ আফরিন মৌ ও মো. তাওকীর ইসলাম।’
এই উদ্যোগের মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় দুটি লক্ষ্য অর্জন করতে চাইছে জানিয়ে সুমন রহমান বলেন, ‘এক, শিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ঢাকার ও ঢাকার বাইরের আগ্রহী তরুণ জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ তৈরি করা এবং তাদের কর্মদক্ষতা তৈরি ও প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়া। দুই, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতাকে সরাসরি কাজে লাগানোর জন্য ওই প্রশিক্ষকদের সঙ্গেই চলচ্চিত্র নির্মাণে অংশগ্রহণ করা। এসব কর্মশালা এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য কোনো ছক বেধে দেওয়া হয়নি। এতে করে শিল্পীরা তাদের নিজস্ব কর্মপদ্ধতি ও সৃজনশীলতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ ঘটাতে সমর্থ হবেন এবং শৈল্পিক, রাজনীতিমনস্ক, বৈপ্লবিক এবং তারুণ্যমণ্ডিত শিল্প ভাষা তৈরি করতে আরো স্বচ্ছন্দ হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।’
সুমন রহমান আরো জানান, প্রতিটি বিভাগে কর্মশালার জন্য একটি গুগল ফর্ম তৈরি করা হয়েছে। সেটার মাধ্যমে আবেদনকারীদের আবেদন করতে পারবেন। নির্দিষ্ট বিভাগের পরিচালকরা প্রার্থীদের নির্বাচন করবেন। আবেদনের শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫।
চলচ্চিত্র প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণের আবেদন করতে এখানে ক্লিক করুন