Home বানিজ্য নাগালের বাইরে ইলিশ ও ডিম
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪

নাগালের বাইরে ইলিশ ও ডিম

চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই ইলিশের দাম ছিল চড়া। এরই মধ্যে ভারতে রপ্তানির খবরে ঢাকার বাজারে ইলিশের দাম আরও বেড়েছে। ফলে মধ্যবিত্ত ও নিুবিত্তের প্রায় নাগালের বাইরে চলে গেছে জাতীয় মাছ ইলিশ। একই অবস্থা ডিমের ক্ষেত্রেও। বেশ কিছু দিন আগে থেকেই ডিমের মূল্য ছিল চড়া। এখন তা আরও বেড়েছে। গত সপ্তাহের চেয়ে ডিমের দাম ডজনে অন্তত ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়। ফলে ‘গরিবের আমিষ’ খ্যাত ডিমও এখন বলা চলে সীমিত আয়ের মানুষের সামর্থ্যরে বাইরে। শুধু ডিম নয়, মধ্যবিত্তের পণ্য ফার্মের মুরগির দামও বাড়ছে নানা অজুহাতে। গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন ধরনের সবজির দাম কমে এলেও টানা বৃষ্টির কারণে সেটাও এখন বাড়তির দিকে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের দাম বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, ভোক্তারা আশা করেছিল পরিবর্তিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজারে অস্থিরতা কমবে। কিন্তু প্রথমদিকে কিছুটা কমলেও ফের অস্থিরতা বাড়তে শুরু করেছে। এখনই সময় বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙে, অসাধুদের নাম প্রকাশ করে আইনে আওতায় আনা। এতে ভোক্তারা স্বস্তি পাবে। বাজারে বিশৃঙ্খলা দূর হবে। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে যে পরিমাণ পণ্যের দাম বেড়েছে, সে হারে আয় বাড়েনি। তাই ক্রেতা সাধারণ অনেক কষ্টে আছে। তাই সরকার সংশ্লিষ্টদের এবার বাজারে নজর বাড়াতে হবে।

ঢাকার বাজারে বর্তমানে এক কেজির চেয়ে বড় সাইজের প্রতি কেজি ইলিশের দাম দুই হাজারের উপরে। এক কেজি সাইজের প্রতিটি এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা কয়েকদিন আগেও ছিল এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া ছোট সাইজের ইলিশ (২০০-২৫০ গ্রাম প্রতিটি) আগে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন ৭০০ টাকার নিচে মিলছে না।

রাজধানীর রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা জালাল মিয়া বলেন, এবার শুরু থেকেই দাম একটু বেশি। ভারতে রপ্তানির খবরে তা আরও বেড়েছে। বরিশাল ও চাঁদপুরেও দাম বেড়েছে, মোকাম থেকে ইলিশ আসছেও কম। তিনি আরও বলেন, ইলিশের মৌসুম শেষের দিকে। চলতি মৌসুমের আর যে কয়দিন আছে, ইলিশের দাম কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

জানা গেছে, প্রজনন মৌসুম সামনে রেখে ১৩ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। নিষেধাজ্ঞার পরপরই শেষ হবে ইলিশের মৌসুম। তখন আবার জাটকা ধরার ওপর ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ফলে এখনই ইলিশের শেষ মৌসুম বলা চলে।

এদিকে বাজারে ইলিশের দাম বেশি বলে সাধারণ ক্রেতারা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। তারা বলছেন, এক কেজির ইলিশ ১০ মার্কিন ডলার (১১৮০ টাকা) দরে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। ভারতে যে দরে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে, দেশের বাজারে ইলিশের দাম তার চেয়ে অনেক বেশি। তাহলে যারা রপ্তানি করছেন, তারা কিভাবে ব্যবসা করছেন? তারা কত টাকা লাভ করছেন? তারা এই দামে রপ্তানি করতে পারলে, দেশের বাজারে এত বেশি দাম কেন হবে? এটা কি দেখার কেউ নেই?

১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্য উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। কেজিপ্রতি সোনালী মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। আর কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।

তবে এরপরও রাজধানীর বাজারে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছিল ডিম। চলতি সপ্তাহে তা আরও বাড়তির দিকে। শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, লাল ডিম (ফার্ম) বিক্রি হচ্ছে হালি (চারটি) ৫৫ টাকা দরে। ডজন কিনলে গুনতে হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। তবে ফার্মের মুরগির সাদা ডিমের দাম একটু কম, যদিও ডজনপ্রতি ১৫৫ থেকে ১৬০-এর কমে মিলছে না। খুচরা ডিম বিক্রেতাদের দাবি, বেশ কিছু দিন ধরেই ডিমের দাম এমন ছিল। বন্যার কারণে বিভিন্ন এলাকার ফার্ম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে কমেছে সরবরাহ। যার কারণে বাজারে দাম বাড়তি। এই পরিস্থিতিতে ডিমের দাম কমতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলেও মনে করেন তারা। এক-দুদিন আগেও রাজধানীর অধিকাংশ খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছিল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। শুক্রবার তা কেজিতে আরও ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায়। এছাড়া সোনালী মুরগি ২৫০-২৬০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০-৫২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারিভাবেই দাম বাড়ানো হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে কেনা সম্ভব হলে সেটি খুচরা বাজারে প্রয়োগ করা সম্ভব হতো। কিন্তু পাইকারিতেই বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।

এদিকে মুরগি ও ডিমের বাড়তি দামের কারণে ক্রেতারা পড়েছেন বেশ বিপাকে। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব নেই। বিক্রেতারা যেমন ইচ্ছা তেমন দাম নিচ্ছেন। এগুলো দেখার কেউ নেই। জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল যুগান্তরকে বলেন, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মূল্য স্থিতিশীল রাখতে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সভা করা হয়েছে। সমস্যা কোন কোন জায়গায় তা চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি অনিয়মের জন্য একাধিক ব্যবসায়ীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। অভিযান অব্যহত আছে। মূল্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে। ইলিশের বাজারেও তদারকি করা হচ্ছে। আমরা দেখেছি পাইকারিতে ৫০০ টাকার ইলিশ খুচরা পর্যায়ে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এমনকি পাইকারি পর্যায়ে ১৪৫০ টাকার ইলিশ খুচরা বাজারে ২২০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখেছি। সিন্ডিকেট কারা করছে, তা চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। তাই দাম কয়েক দিনের মধ্যে কমে আসবে। আর অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদারকি অব্যাহত থাকবে। অনিয়ম পেলেই কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ভেদে লম্বা বেগুন এবং সাদা গোল বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া শসা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করল্লা ৭০ টাকা, কাঁকরোল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, মুলা ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটোল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২২০-২৪০ টাকা, ধনেপাতা ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতিটি লাউ ৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৩০ থেকে ৪০ টাকা, লেবুর হালি ৩০ টাকা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *