‘একটা একটা শিবির ধর’ শ্লোগান সম্পর্কে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ
রাষ্ট্র গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে জামায়াত-শিবির সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘শিবির ও জামায়াতকে ডিহিউম্যানাটাইজ করে ফেলা হয়েছিল। একটা একটা শিবির ধর, ধরে ধরে জবাই কর- এই সেনটেন্সটি নরমালাইজ করে ফেলা হয়েছিল। অর্থাৎ একটা ন্যূনতম হিউম্যান ডিগনিটি যে একটা মানুষের থাকা উচিত, শিবির করলে সেটাও থাকবে না – এটাকেও নরমালাইজ করে ফেলা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন ছিল সকল রাজনৈতিক দলমতের ঊর্ধ্বে একটি ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলন। এই আন্দোলন এখনও শেষ হয়ে যায়নি।
২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিওটি হাসনাত আবদুল্লাহ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেছেন। ওই ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা ভাবছি আমাদের আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। আমাদের এই জায়গায় ভুল একটা কনসেপ্ট। এই কনসেপ্টকে দেখছি ফুয়েলিং করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এই যে রাজনৈতিক দলগুলো মহত্বের ঊর্ধ্বে উঠে… বিএনপি গত ১৬ বছরে যেভাবে একটা ফ্যাসিস্ট গভর্মেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করেছে এটি তাৎপর্যপূর্ণ। নিঃসন্দেহে এই ধরনের রেজিস্ট্যান্স অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বিগত সময় দেখিয়েছে কিনা সেটা আমাদের সার্চ করে দেখতে হবে। বিএনপি সে জায়গায় নিঃসন্দেহে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। জাপা তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, ডিসট্রাকশনের সময় আমরা সবাই একসাথে চলে এসেছিলাম এখন কন্সট্রাকশন যখন হবে তখন আলাদা করে ফেলা হয়েছে। ৪৭ পরবর্তীতে এটা হয়েছে, ৭১ পরবর্তীতে এটা হয়েছে, ৯০ পরবর্তীতে একটা হয়েছে। এখন আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন এই সেপারেট হয়ে যাওয়ার সুফল এটা কি আমদের জন্য রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক।’
রাষ্ট্র পুনর্গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবো আপনারা এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে হঠানোর জন্য ১৬ বছর ধরে অপ্রতিরুদ্ধভাবে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। যেটাকে আমরা বলি ক্লাইম্যাক্স পিরিয়ড তখন আমরা সবাই একসাথে হয়েছিলাম। ঠিক রাষ্ট্র পুনর্গঠনের জন্য আপনারা সবাই একসাথে হবেন। একসাথে হয়ে অতীতের যে স্টিগমা কালচার আছে, কিছু ফসিলাইজড কালচার আছে এই কালচারের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা নতুন ধারার যে রাজনীতি বিনির্মাণের চেষ্টা করছি, এই রাজনীতি বিনির্মাণ আপনাদের ছাড়া সম্ভব না। আর ঐক্য যদি না থাকে কখনোই সম্ভব না। সুতরাং আমাদের সমন্বিত কার্যক্রম লাগবে এবং আন্দোলনের যে দ্বিতীয় ধাপটি রয়েছে রাষ্ট্র পুনর্গঠন। এই রাষ্ট্র পুনর্গঠনের আমাদের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা লাগবে। নচেৎ এই যে মামলা বাণিজ্য বলি বা এই যে এগুলো কিন্তু কম্পোনেন্ট, এগুলো ইনগ্রেডিয়েন্ট। এগুলো কিন্তু পুরো স্ট্রাকচারের কিছু কিছু উপসর্গ। মামলা বাণিজ্য বন্ধ করতে হলে পুরো রাজনৈতিক যে কাঠামো সেটি বিনির্মাণের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান যে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে তাদের আমাদের সহায়তা প্রয়োজন।’
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে গত আগস্ট মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। তার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার দেশের প্রধান প্রধান খাতে সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।