Home সারাদেশ ছাত্র শিক্ষকের মধ্যকার পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্কের ধীরে ধীরে কেন এত অবনতি?সভ্যতার কোন দিকে যাচ্ছে প্রজন্ম?
ছাত্র শিক্ষকের মধ্যকার পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্কের ধীরে ধীরে কেন এত অবনতি?সভ্যতার কোন দিকে যাচ্ছে প্রজন্ম?
বালী তাইফুর রহমান তূর্য, সমাজকর্মী ও লেখক, ঝালকাঠি।
ছাত্র শিক্ষকের মধ্যকার পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্নেহের সম্পর্কের ধীরে ধীরে কেন এত অবনতি?এই দ্বায় কার,ফলাফলই বা কি?নতুন প্রজন্ম আসলে যাচ্ছে কোন দিকে।এদের ভবিষ্যৎ চারিত্রিক পরিবর্তনটিই বা কেমন হবে?
আধুনিকতার নামের পাশ্চাত্য যান্ত্রিকতাবাদ কি আমাদের সভ্য বানাচ্ছে নাকি সভ্যতার নৈতিক অবক্ষয় ডেকে আনছে? এক্ষেত্রে বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রথম প্রশ্ন যাগে যেই সকল শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করেন,শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষায় অনিয়মে সহযোগিতা করেন,ভেবে দেখেছেন জাতি গড়ার কারিগর হয়েও পুরো জাতিকে যে ধ্বংস করে দিচ্ছেন?
সাম্প্রতিক সময়ে প্রায়ই শোনা যায় অনেক শিক্ষকদের নৈতিক অবনতির খবর।শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপ্রয়োজনীয় অর্থ আদায়,অনৈতিক সম্পর্ক গড়া,প্রশ্ন ফাসে জড়িত থাকা,অর্থের বিনিময়ে শিক্ষার্থীদেরকে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের মতো ভয়াবহ অভিযোগ প্রায়ই দেখা যায় পত্রিকার পাতায়।নি:স্বন্দেহে এটি একটি জাতী ধ্বংসের পূর্বের অশনি সংকেত।সারা বিশ্বেই ইতিহাসের প্রতিটি উদাহরনে শিক্ষকদের অবস্থান রাখা হয়েছিল সম্মান এবং শ্রদ্ধার সাথে। অথচ সেই শিক্ষকদের প্রতি ছাত্রদের সেই শ্রদ্ধাবোধের পরিচয় আর খুব একটা পাওয়া যায় না।কয়েকদিন আগে পত্রিকার সংবাদ হয়েছিলো পরীক্ষার হলে কড়াকড়ি দেওয়ায় শিক্ষকের মাথায় পচা ডিম ভেঙেছে ছাত্ররা।এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় মনোভাবের বহি:প্রকাশ যা একদিনে হয়নি।
তাহলে আসলে ঠিক কি কারনে শিক্ষকরা তাদের শ্রদ্ধার স্থানটি হারিয়ে ফেলছেন?এর রয়েছে বেশ কিছু কারন।এরমধ্যে সন্তানদের প্রতি অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা,শিক্ষকদের হাত থেকে শাসনের লাঠি কেড়ে নেয়া,শিক্ষকদের নৈতিক অবনতি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিতে অযোগ্যদের স্থান দেয়া সহ অনেক কারন।কিন্তু সেখানে প্রশ্ন হলো এর সমাধান কি?
হয়তো এর সমাধান কঠিন,তবু তো সমাজ বাচানোর চেষ্টা করেই যেতে হবে। এবং সেই দায়িত্ব নিতে হবে সকলকে।নির্লোভ পরিচ্ছন্ন লোকদেরকে ফের শিক্ষকতায় ফেরাতে হবে, সমাজের জ্ঞ্যানীদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে আনতে হবে, শিক্ষকদের হাতে শাসনের লাঠি ফেরাতে হবে।তাহলেই কেবল মানুষকে মানুষ বানানো সম্ভব।
লোভী, বিবেকহীন কুরুচিপূর্ণদের শিক্ষকতা পেশা থেকে বেরিয়ে আসা উচিৎ।শিক্ষা ক্ষাতকে বাচাতে অভিভাবক এবং পুরো সমাজকে সচেতন হওয়া উচিৎ।
শুধু কাগুজে বইয়ের ভিতরের লেখার প্রতিবাদ করে নয়,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, নিয়োগ বানিজ্য,পরিচালনার নামে লুটপাটে সম্পৃক্ত সকলের বিরুদ্ধে সচেতন হয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির পদ বানিজ্যের খবর শোনা যায়,যাতে অনেক সময় সম্পৃক্ত থাকেন শিক্ষকরাও (বিশেষ করে প্রতিষ্ঠান প্রধান)।
যারা অন্যায় করেন না তারা অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করেন,যা আরেকটি অন্যায়।কোনো সমাজের শিক্ষকদের নিয়োগেই যদি দুর্নীতি হয় তাহলে তারা সেই বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত উঠাতেই চাইবেন।এরপরে তারা শুরু করবেন মানহীন সহায়ক বই বা গাইড কোম্পানির বই কিনিয়ে দেয়ার সংস্কৃতি,চাপ দিয়ে প্রাইভেট পড়ানো,প্রতিষ্ঠানের জন্য আসা বরাদ্দকৃত অর্থের ভাগাভাগি,শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তোলা নামে বেনামে চাদার ভাগাভাগি।
আর ছোট ছোট এইসব ভাগের সংস্কৃতি তাদেরকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেবে মেরুদণ্ডহীনদের মতো।এক সময় তারা আর কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন না,সাহস হারিয়ে ফেলেন।।
ফলাফল একটি অসুস্থ জ্ঞ্যানহীন ভয়ংকর জাতি?