Home সারাদেশ দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দুষ্টু লোকের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেন ভালো লোকের ঐক্য বা সিন্ডিকেট হয় না।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দুষ্টু লোকের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কেন ভালো লোকের ঐক্য বা সিন্ডিকেট হয় না।
তাইফুর রহমান, সমাজকর্মী ও লেখক :
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইদ স্যারের একটি লাইন মস্তিষ্কে গেথে রাখার মতো।”আমাদের দেশের খারাপের ঐক্য আছে,কিন্তু ভালোদের ঐক্য নেই।খারাপদের একজন হুক্কা হুয়া দিলে বাকিরা কেয়া হুয়া বলে লাফিয়ে পরে,কিন্তু ভালোরা একজন আরেকজনকে খুজে পায় না”।
সমাজে দুষ্টু লোকের যদি সিন্ডিকেট বা ঐক্য থাকতে পারে তাহলে ভালো লোকের ঐক্য কেন হচ্ছে না?ভালোদের ঐক্য কি এই দুষ্টু লোকের সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লড়তে পারে না?
বর্তমান সময়ে দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো বাজারের নিয়ন্ত্রণহীনতা।অর্থাৎ দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধগতি এবং তার লাগামহীন অবস্থা। আমদানি বন্ধ হবার খবর ছাপা হওয়া মাত্রই সেই পন্যটির দাম বেড়ে যায় খুচরা দোকানেও। কিন্তু আড়তে কমলেই সাথে সাথে কমে না খুচরা বাজারে। কিছুদিন আগে ঝালকাঠির বাজার থেকে উধাও হয়ে গেলো সব প্রজাতির মুরগী, যার নেপথ্যে বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট।
হঠাৎ এদেশের বাজারে পিয়াজের দাম হয়ে যায় ৩০০ টাকা প্রতি কেজি।হঠাৎ তরমুজ হয়ে যায় পিস থেকে কেজি,কৃষক এক পিস বিক্রি করে ৭০ টাকায় আর খুচরা দোকানীরা প্রতি কেজি বিক্রি করে ৭০-৮০ টাকা,অর্থাৎ একটি ১০ কেজির তরমুজ ৮০ টাকায় কিনে ৮০০ টাকাতেও বিক্রি হয়।
ক্ষেত থেকে এক মন বেগুন বিক্রি হয় ৮০ টাকায়,আর ঢাকাতে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৮০ টাকা দরে।তাহলে কৃষকও মরছে ভোক্তাও মরছে।লাভবান হচ্ছে মধ্যসত্বভোগী বা দালালেরা।
১১০ টাকার আমদানি করা খেজুর খুচরা বাজারে ১১০০ টাকায় পৌঁছে যায় এদেশে। খেজুর নাহয় বাদ দিলাম,দেশীয় পণ্য আলুর বাজারের যেই সিন্ডিকেট সেটিই ভাঙা সম্ভব হলো না।
ঢাকার গরুর মাংসের ব্যবসায়ী খলিলের ৫৯৫ টাকায় গোশত বিক্রি নিয়েও কতই না নাটক হলো।বেচারা সর্বশেষ গরু বিক্রিই বন্ধ করতে বাধ্য হবার পর্যায়ে পৌঁছে গেলো।
সংবাদপত্রগুলোতে দেখা গেছে অনেক কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে সব্জির গাছই কেটে ফেলেছেন।বেগুন কেজি প্রতি ২ টাকাও বিক্রি করতে পারছেন না কৃষকরা,অথচ খুচরা বাজারে দর বেশিই আছে,ভোক্তাও বেশি দরেই কিনেছেন।যেদিন পত্রিকায় দেখলাম কৃষক একটি লাউ ৫ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছেন না,সেদিনিই বাজারে লাউয়ের দাম দেখলাম ৫০-৬০ টাকা প্রতি পিস।তাহলে এই যে দশগুণ বৃদ্ধি পাওয়া দর,কার কারসাজি এটি?এর থেকে পরিত্রাণই বা কিভাবে?
এটার একটা সহজ সমাধান হলো ভালো মানুষের ঐক্য বা,ভালোদের সিন্ডিকেট।এবং এটি হলেই মোটামুটি খুব সহযে ভোক্তাদের কাছে সুলভে পণ্য পৌঁছে দেয়া সম্ভব।
যখন কৃষকের কাছে একটি পণ্যের দাম দুই টাকা কেজি,তখন সেটি খুচরা বাজারে ৩০ টাকা কেজি হওয়া উচিৎ নয়। দুই টাকা করে সেই অঞ্চল থেকে কিনে এক ট্রাক মাল যদি একটি ইউনিয়নের নয়টি ওয়ার্ডে ভাগ করে দেয়া হয় তাহলে সেই দুই টাকার সাথে বা পাচ টাকার লাউয়ের সাথে গাড়ি ভাড়া সর্বোচ্চ তিন থেকে পাচ টাকার বেশি কোনোভাবেই হতে পারে না। এর সাথে ড্যামেজ এবং লাভ হিসেবে যদি আরও দুই টাকাও যোগ হয় তাতেও সেই পণ্য দশ বা বারো টাকায় বিক্রিবকরা সম্ভব। এবং এটির সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হলো ইউপি সদস্য, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যানদের সদিচ্ছায় দায়িত্ব নিয়ে কাজটি করা।যেমনটি ঢাকা -১৩ সংসদীয় এলাকায় পাট ও বস্ত্র মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক তার সুলভ মূল্যের বাজারে দেখিয়েছেন।স্থানীয় পর্যায়ের কৃষকদের গরু কিনে তা জবাই করে মাংস মেপে ভাগ করে সল্প লাভে বিক্রি করলেই তা ভোক্তার নাগালে আনা সম্ভব।
আর যদি ইউনিয়ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা এমন দায়িত্ব নাও নিতে চান,তাহলেও সেই সমাজের ভালো,সচেতন, শিক্ষিত কিংবা সেচ্ছাসেবীদের উচিৎ এই উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসা।তবেই সম্ভব এই দুষ্টু লোকের সিন্ডিকেটের মুখে ঘা দেয়া।
আলু,পিয়াজ সহ দেশীয় কৃষি পণ্য সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কিনে তা সরাসরি ভোক্তার হাতে পন্য পরিবহন, শ্রমিক খরচ যোগ করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় পৌছানো সম্ভব। এতে মধ্যসত্বভোগী বা দালালের নৈরাজ্য প্রতিহত করা অত্যন্ত সহজ।শুধু প্রয়োজন সমাজের দায়িত্বশীলদের দায়িত্ববান হওয়া।