Home চাকুরী একই দিনে, একই সময়ে নিয়োগ পরীক্ষা- চাকরিপ্রত্যাশীদের নিয়ে তামাশা
মার্চ ৬, ২০২৪

একই দিনে, একই সময়ে নিয়োগ পরীক্ষা- চাকরিপ্রত্যাশীদের নিয়ে তামাশা

একই দিনে এবং একই সময়ে দুটি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা। দুটিই সরকারি কিংবা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করা চাকরি প্রত্যাশীরা দুটি চাকরির পরীক্ষার জন্যই আবেদন করেছেন। এক একটি ৯ম গ্রেড চাকরির আবেদন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। ১০ম গ্রেড বা তার নিচে হলে তার জন্য আবেদন ফিস অন্তত ৪০০ টাকা।

এখন, যেহেতু দুটি নিয়োগ পরীক্ষাই একই দিনে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে, সুতরাং একজন আবেদনকারী একই সময়ে দুটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তাকে যে কোনো একটি পরীক্ষা বেছে নিতে হবে। টাকা দিয়ে আবেদন করার পরেও অন্য চাকরির পরীক্ষাটি তিনি দিতে পারবেন না।

আগামী ৮ মার্চ, (শুক্রবার) সমন্বিত ৮ ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২০২১ বর্ষভিত্তিক (জেনারেল অফিসার) পোস্টের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। অন্যদিকে একই দিনে একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডে’র সিনিয়র অফিসার প্রশাসন পদে নিয়োগ পরীক্ষা। এটি একটি ৯ম গ্রেডের চাকরি এবং আবেদন ফিস ছিল ৭০০ টাকারও বেশি।

এত টাকা দিয়ে চাকরির আবেদন করেও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেন না অনেক চাকরিপ্রত্যাশী। কারণ তাকে দুটি পরীক্ষা থেকে একটি বেছে নিতে হচ্ছে। এমনটা যে শুধু এবারই ঘটছে তা নয়। বারবার ঘটছে এমনটা। দেশের লাখ লাখ উচ্চশিক্ষিত চাকরিপ্রত্যাশী বেকার ছেলেমেয়েরা এভাবেই বারবার প্রহসনের শিকার হচ্ছেন। এভাবেই বারবার তারা প্রতারিত হচ্ছেন। নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে পরীক্ষা গ্রহণের সময় পরিবর্তন চেয়ে আবেদন করলেও কোনো সাড়া মেলে না।

চাকরিপ্রত্যাশীরা বাংলাদেশের যুবক শ্রেণির একটি বড় অংশ। তারাই বাংলাদেশের শিক্ষিত শ্রেণি এবং তারা দেশের সম্পদ। চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়াতে এবং সরকারি চাকরির আবেদন ফিস কমাতে তাদের আন্দোলন করতে হয়। এই ন্যায্য দাবির জন্য তাদের রাস্তায় দাঁড়াতে হয় এর চেয়ে দুঃখের আর কি হতে পারে! সরকারি চাকরির তো আবেদনে কোনো টাকা নেওয়ারই কথা নয়। প্রতিষ্ঠান তার প্রয়োজনে নিয়োগ দেবে, সেখানে ব্যবসা কেন?

দেশে যে বিশাল শিক্ষিত বেকার শ্রেণি তৈরি হয়েছে সেটা তো রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা। বছরে প্রায় ২০ লাখ চাকরিপ্রত্যাশীর জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা তো রাষ্ট্রেরই দায়িত্ব। সেখানে চাকরির আবেদন ফিসের নামে তাদের শুষে খাওয়া কেন? একই দিনে একই সময়ে একাধিক চাকরির পরীক্ষা নিয়ে এই বেকারদের সঙ্গে প্রহসন কেন?

যে লাখ লাখ ছেলেমেয়েরা চাকরি প্রত্যাশায় হন্যে হয়ে ঘুরছে, উপার্জন করার বয়সে পরিবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে যাদের এমনিতেই চরম মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়- ১০-২০টা অথবা ৪-৬টা পোস্টের জন্য ৭০০-৮০০ টাকা আবেদন ফিস ধরে সেসব অসহায় ছেলেমেয়েদের টিউশনের টাকা অথবা বাবার ঘামের টাকা শুষে নেওয়া কেন?

একই সময়ে দুটি আলাদা সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে বেকারদের সঙ্গে তামাশা কেন? কোথায় এই প্রতারণার প্রতিকার?

মুজাহিদুল ইসলাম: শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

[ নিবন্ধ, সাক্ষাৎকার, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতিতে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। দৈনিক কালবেলার সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত মত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণ, তথ্য-উপাত্ত, রাজনৈতিক, আইনগতসহ যাবতীয় বিষয়ের দায়ভার লেখকের, দৈনিক কালবেলা কর্তৃপক্ষের নয়। ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *