Home অপরাধ ক্যাম্পাসে ‘ইয়াবা বিক্রি করতেন’ মামুন, হলেই বসত আসর
ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৪

ক্যাম্পাসে ‘ইয়াবা বিক্রি করতেন’ মামুন, হলেই বসত আসর

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে বহিরাগত হয়েও নিয়মিত যাতায়াত ছিল গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের আসামি মো. মামুনুর রশিদ ওরফে মামুনের (৪৪)। মাদক কারবারি মামুন নিয়মিত কক্সবাজার থেকে ইয়াবা এনে ক্যাম্পাসে বিক্রি করতেন।

মামুনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানা গেছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে। র‌্যাব বলেছে, গত শনিবার রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে তাঁর স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী এই মামুন।

এ ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান এবং তাঁর তিন সহযোগীকে শনিবার রাতেই গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে মামুনকে এবং ধর্ষণের ঘটনায় অন্যতম সহায়তাকারী মো. মুরাদকে (২২) নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন গ্রেপ্তার মামুন ও মুরাদ সম্পর্কে নানা তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ৩ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) রাত সাড়ে ৯টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ‘এ’ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার রাতেই চারজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। আসামিদের মধ্যে মামুন ও মুরাদ পলাতক ছিলেন। গতকাল রাতে র‌্যাব তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

র‌্যাব পরিচালক বলেন, গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে, মামুন প্রায় ২০ বছর আগে ঢাকার জুরাইন এলাকায় এসে পোশাকশ্রমিক হিসেবে চাকরি নেন। পরে তিনি আশুলিয়া এলাকায় পোশাক কারখানায় চাকরির পাশাপাশি মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়েন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে মাদক সরবরাহ করার ফলে তাঁদের সঙ্গে তাঁর সখ্য তৈরি হয়। পরে তিনি পোশাক কারখানার চাকরি ছেড়ে ২০১৭ সাল থেকে পুরোপুরি মাদক কারবারে যুক্ত হন। তাঁর বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদকসংক্রান্ত আটটি মামলা রয়েছে এবং এর আগে এসব মামলায় একাধিকবার কারাভোগও করেন মামুন। আর মুরাদ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকতেন। তাঁর বিরুদ্ধে নওগাঁ থানায় মারামারিসংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, মামুন কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে প্রতি মাসে কয়েক দফায় প্রায় ৭-৮ হাজার ইয়াবা সংগ্রহ করে তা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু মাদকসেবী শিক্ষার্থীকে সরবরাহ করতেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক বিক্রির কারণে এ মামলার ১ নম্বর আসামি মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে তাঁর সখ্য তৈরি হয়। মামুন মাঝেমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে মাদকসহ রাত যাপন এবং অন্য ছাত্রদের সঙ্গে মাদক সেবন করতেন।

আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার মামুন ও মুরাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কথা বলেন
আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার মামুন ও মুরাদের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে কথা বলেন।

অন্যদিকে একই এলাকায় বসবাসের কারণে তিন-চার বছর আগে মামুনের সঙ্গে ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর পরিচয় হয়। পরিচয়ের সূত্রে মামুন মাঝেমধ্যে ভুক্তভোগীর স্বামীর মাধ্যমেও বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় মাদক সরবরাহ করাতেন।

কিছুদিন আগে মামুনের থাকার জায়গার সমস্যা হলে ভুক্তভোগীর স্বামীকে ফোন দিয়ে কিছুদিনের জন্য তাঁদের বাসায় অবস্থান করবেন বলে জানান। পরে মামুন ভুক্তভোগীর ভাড়া করা বাসায় ‘সাবলেট’ হিসেবে প্রায় তিন-চার মাস অবস্থান করায় ভুক্তভোগী নারীর পরিবারের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে। সেই সূত্র ধরে ওই দিন রাতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রথমে স্বামী এবং পরে ওই নারীকে ক্যাম্পাসে ডেকে এনে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *