সূর্যমুখী ফুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে খাগড়াছড়িতে
খাগড়াছড়ি জেলাতে জনপ্রিয় হচ্ছে সূর্যমুখী ফুল চাষ। উৎপাদন খরচ কম ও বীজের চাহিদা থাকায় পাহাড়ের অনেকেই আগ্রহী হচ্ছেন সূর্যমুখী চাষ।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা বলছেন, খাগড়াছড়ি জেলাতে জমিতে সাড়ে পাঁচশ হেক্টর সূর্যমুখী ফুলের আবাদ হয়েছে, অথচ আগে হতো না। এবার ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরাও খুশি।
শহরের কালাডেবা পাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় গেলে দেখা যায়, মনোমুগ্ধকর সূর্যমুখী ফুলের মাঠ। দূর থেকে দেখলে মনে হয়, হলুদ গালিচা পেতে রেখেছে কেউ। সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তৈরি তেল বাজারের অন্যান্য তেলের চেয়ে ভালো মানের। তেলের দাম বেশি। এই তেল থেকে মানুষ হাজারো উপকার পেয়ে থাকেন। তাই কৃষকেরা লাভের মুখ দেখছেন।কালাডেবা পাড়ার সূর্যমুখী ফুল চাষি মংসাথৈয়াই চৌধুরী বলেন, তেলের জন্য প্রথম এক একরের মত জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। এক হাজারের বেশি গাছে ফুল ফুটেছে। এতে পনের হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ ফুলের বীজে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ লিটার তেল পাব আশা করি। পাহাড় জুড়ে যার যার জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে সবাই লাভবান হবে তেমনি এলাকা উন্নতি হবে।
খেজুরবাগান হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-সহকারী হর্টিকালচার অফিসার সুজন চাকমা বলেন, রক্তের কোলেস্টেরল হয় না, চর্বি জমে না তাই সূর্যমুখী তেল স্বাস্থ্য সম্মত নিরাপদ। সূর্যমুখী তেল দামও বেশি। যার কারণে সূর্যমুখী তেলের দিকে ঝুঁকছে কৃষকরা। স্থানীয়ভাবে চাষাবাদ করে কৃষকরা লাভবান হবেন। জেলাতে আবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তেল বিক্রি করে লাভবান হয় তাই চাষিরা আগ্রহ বাড়াচ্ছে।তিনি আরও বলেন, তবে একটা সমস্যা আছে বীজটা আসে বিদেশ থেকে। এটা হাইব্রিড বীজ। বীজটা দেশে উৎপাদন হয় না। এটা বাহিরের প্রতি নির্ভরশীল যার কারণে আবাদের নিশ্চয়তা আছে। কৃষকরা যদি বীজটা সংরক্ষণ করতে পারত তাহলে কৃষকদের আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পেত। এখন সম্পূর্ণ নির্ভরশীল কৃষি অফিসের ওপর। বীজ আসবে কিনা আসবে এটা অনিশ্চয়তায় ভুগতে হয়।খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, জেলাতে সাড়ে পাঁচশ হেক্টর সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। ৩৩০ কৃষক তেলের জন্য সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছে। যতটুকু সম্প্রসারিত হয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রনোদণার কর্মসূচির আওতায় কৃষকদের সূর্যমুখী ফুলের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। এ আবাদটা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাগড়াছড়িতে সূর্যমুখী চাষ বৃদ্ধিতে কাজ চলছে। আমরা সবসময় কৃষদের পাশে আছি।পাহাড়ি কৃষি গবেষণাকেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলতাফ হোসেন বলেন, সূর্যমুখী একটি তেল জাতীয় ফসল। পাহাড়ের ঢালুতে যথেষ্ট চাষ করা যায়। সূর্যমুখী চাষ করলে দেশে যে তেল আমদানি করতে হয় প্রতি বছর ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয় সেই তেল আমদানি খরচের ওপরে এখান থেকে বিদেশী মূদ্রা সাশ্রয় করতে পারবে। সূর্যমুখী তেল স্বাস্থ্য সম্মত। পাহাড়ের ঢালু যে জায়গা খালি আছে, সেইসব জায়গায় সূর্যমুখী চাষ করলে তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কিশোর কুমার মজুমদার বলেন, তেল নিষ্কাশন করার জন্য ইতোমধ্যে আমাদের দেশে তেল নিষ্কাশন দুইটি মেশিন দিয়েছেন। একটি খাগড়াছড়ি আর একটি পানছড়িতে। সূর্যমুখী আবাদ আগামী বছর আরো বৃদ্ধি পাবে। সূর্যমুখী ভেঙে কৃষক তেল তৈরি উৎপাদন করে নিজে ব্যবহার করতে পারবে আবার বাজারে বিক্রি করতে পারবে।