দুর্নীতিতে বাংলাদেশের আরো ২ ধাপ অবনতি: টিআইবি
দুর্নীতিতে বাংলাদেশের আরো ২ ধাপ অবনতি হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০ম। ২০২২ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম। বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) দুর্নীতির ধারণাসূচক- ২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার দুপুরে ধানমন্ডিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর কার্যালয়ে এ তথ্য জানান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। টিআই বলেছে, ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৪। যা গতবারের চেয়ে ১ পয়েন্ট কম। সেবার বাংলাদেশের পয়েন্ট ছিল ২৫।
টিআইবির বিশ্লেষণ অনুযায়ী দেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা গভীর উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। তবে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতার কারণে ‘বাংলাদেশ দুর্নীতিগ্রস্ত বা বাংলাদেশের অধিবাসীরা সবাই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত’-এ ধরনের ব্যাখ্যা ঠিক নয়। যদিও দুর্নীতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, সর্বোপরি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে কঠিনতম অন্তরায়, তথাপি দেশের আপামর জনগণ দুর্নীতিগ্রস্ত নয়।
তারা দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভুক্তভোগী মাত্র। ক্ষমতাবানদের দুর্নীতি ও তা প্রতিরোধে ব্যর্থতার কারণে দেশ বা জনগণকে কোনোভাবেই দুর্নীতিগ্রস্ত বলা যাবে না।
সিপিআই সূচকের বিশ্লেষণ বলছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের স্কোর ও অবস্থান গত এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থাৎ স্কোর ও অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশ আবারো নিচের দিকে যাত্রা শুরু করেছে। ২০১২ থেকে ব্যবহৃত-১০০ স্কেলে বাংলাদেশের স্কোর ২০২২ সাল পর্যন্ত ২৫ থেকে ২৮” এর মধ্যে আবর্তিত ছিলো। ২০২৩-এ আরো এক পয়েন্ট অবনমন হয়েছে। টিআই কর্তৃক ২০১২ থেকে ২০২৩ মেয়াদের প্রবণতা বিশ্লেষণ অনুযায়ী এ বারের ক্ষোর সার্বিক ১২ বছরের গড় স্কোর ২৬ এর তুলনায় দুই পয়েন্ট কম এবং এই মেয়াদের সর্বনিম্ন। এর মধ্যে টানা চার বছরসহ মোট ছয়বার বাংলাদেশের স্কোর ছিলো ২৬, তিনবার ২৫ এবং একবার করে ২৭ ও ২৮। নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো সর্বোচ্চ চারবার ১৩তম, দুইবার ১৪তম, দুইবার ১২তম এবং একবার করে ১৫, ১৬ ও ১৭তম। আর এ বছর স্কোর ও অবস্থানের অবনমন হয়ে ২৪ স্কোর এবং নিম্নক্রম অনুযায়ী ১০ম অবস্থান প্রমাণ করে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের বিভিন্ন অঙ্গীকার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে “শূন্য সহনশীলতার” ঘোষণা-উল্লিখিত সময়কালে বাস্তবিক অর্থে কোনো কাজে আসেনি। বরং আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও কাঠামোগত দূর্বলতায় বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি না হয়ে আরো অবনতি হয়েছে।
২০২৩ সালের সিপিআই অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ায় শুধুমাত্র ভুটান গত বছরের ৬৮ স্কোর ধরে রেখেছে। নেপাল ও পাকিস্তানের স্কোর যথাক্রমে ১ ও ২ পয়েন্ট উন্নতি হয়েছে এবং অবশিষ্ট পাঁচটি দেশের স্কোরই ১ থেকে ৪ পয়েন্ট অবনমন হয়েছে। এর মধ্যে আফগানিস্তানের স্কোর কমেছে ৪ পয়েন্ট, শ্রীলংকার ২ পয়েন্ট এবং মালদ্বীপ, ভারত ও বাংলাদেশের স্কোর কমেছে ১ পয়েন্ট করে। উর্ধ্বক্রম অনুযায়ী এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র পাকিস্তান ও নেপালের অবস্থানের যথাক্রমে ৭ ধাপ ও ২ ধাপ উন্নতি হয়েছে এবং অবশিষ্ট ৬টি দেশের অবস্থানের ১ থেকে ১৪ ধাপ পর্যন্ত অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীলংকার ১৪ ধাপ, আফগানিস্তানের ১২ ধাপ, ভারত ও মালদ্বীপের ৮ ধাপ, বাংলাদেশের ২ ধাপ এবং ভুটানের অবস্থানের ১ ধাপ অবনমন হয়েছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভুটান ছাড়া বাকি সাতটি দেশই সূচকের গড় স্কোর ৪৩-এর কম পয়েন্ট পেয়েছে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা খুবই উদ্বেগজনক।