‘শুধু ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিচার নয়, পশ্চিমাদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা’
মাত্র ছয় ঘন্টার কিছু বেশি সময় ধরে আইনি যুক্তি চলেছিলো ঠিকই, কিন্তু আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকা যে গণহত্যার মামলাটি এনেছিল তা কয়েক দশকের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকা অনুরোধ জানিয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে কিনা তা বিবেচনা করে দেখতে। ফিলিস্তিনিদের বাস্তবতা এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক শক্তিগুলি কীভাবে তাদের অবস্থা বর্ণনা করছে তার মধ্যে ব্যবধান দূর করা। এখন কয়েক সপ্তাহ ধরে, গাজার ঘটনায় ক্ষোভ পুরো ইউরোপের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবুও এই ক্ষোভকে রাজনৈতিক নেতারা দৃঢ়ভাবে উপেক্ষা করেছেন, নিষিদ্ধ করেছেন বা অপমান করেছেন। যুদ্ধবিরতির জন্য জনসমর্থন এখন যুক্তরাজ্যে ৭০% এর বেশি, কিন্তু সরকারের বা বিরোধীদের কারোর মধ্যেই প্রতিফলিত হয় না। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থা, জাতিসংঘ এমনকি পোপ সহিংসতার নিন্দা করলেও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে এখনো কোনো অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের একটি প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্র বাধা দিয়েছে। এমনকি প্রতিবাদের ভাষাকে দমাতে তা নিয়ে কাটাছেঁড়া করা হচ্ছে, বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ”একাডেমিক তত্ত্ব” খাড়া করা হচ্ছে। বৃটেনের পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ক্যামেরন মনে করেন, ”গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়।
অবিলম্বে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান স্থগিত করতে বলেছিলো। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষিতই থেকে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিপরীতে অসংখ্য মানবাধিকার সংস্থা আন্তর্জাতিক আদালতে যেতে আপত্তি তুলেছে। ‘আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন’ এর ভিত্তিতে ইয়েমেনে হুথিদের উপর বিমান হামলাকে ন্যায্যতা দিয়ে ঋষি সুনাকের বক্তব্য শুনে অনেকেই হতাশ। পাশাপাশি ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাজ্যের অবিচল সমর্থনের কথা জানিয়েছেন বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
হামলার পরদিন সুনাক ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে টেলিফোনে আলাপকালে বলেছিলেন বৃটেন ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে’ ইসরাইলের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বিশ্ব যেন এক সুরে কথা বলে সেজন্য কাজ করছে লন্ডন।
‘আন্তর্জাতিক আইন ভারসাম্যের খেলার মতো ঝুলে রয়েছে’ হেগে একটি উদ্বোধনী বিবৃতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি একথা বলেছেন। কিন্তু ইসরাইল এবং তার মিত্ররা আন্তর্জাতিক আইনের অপব্যবহার করে চলেছে। এটি করার মাধ্যমে, তারা পরিবর্তিত ভূ-রাজনৈতিক বাতাসকে উত্তেজিত করে তুলেছে যার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে পশ্চিমের রাজনৈতিক এজেন্ডা। এই প্রেক্ষিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আনা মামলাটি চিত্রিত করে যে সম্ভবত তারাই গাজার তীব্র দুর্দশার অবসানের প্রচেষ্টাকে বাধা দিচ্ছে যারা প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে।