“আমি গণমাধ্যমের প্রতি ঋণী” – খাদিজা
তৌকির আহমেদ, জবি প্রতিনিধি:
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক খুশি। কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। আমি দেখেছি গণমাধ্যম সব সময় আমার সঙ্গে ছিল। গণমাধ্যম আমার জন্য অনেক করেছে। আমি গণমাধ্যমের প্রতি ঋণী।’
আজ খাদিজার দ্বিতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পরীক্ষায় বসেন। পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে দুপুরে সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
খাদিজাতুল কুবরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তবে তিনি পুনঃভর্তি নিয়ে ২০২০-২১ সেশনে পরীক্ষা দিচ্ছেন।
আজ সকাল ৯টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে মুক্তি পান খাদিজাতুল কুবরা। মুক্তি পেয়েই কারাগার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। বেলা ১১টা ৭ মিনিটে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন।
খাদিজার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নূরানা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘খাদিজা পরীক্ষা দিচ্ছেন। তিনি যাতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন, সেই চেষ্টা আমাদের থাকবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষারত খাদিজার বড় বোন সিরাজুম মুনিরা কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আদালতের নির্দেশনার পরও খাদিজাকে মুক্তি দিতে কারা কর্তৃপক্ষ দেরি করেছে।
সিরাজুম মুনিরা আরও বলেন, এখন তাঁরা খাদিজার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসককে দেখানোর কথা রয়েছে।
বেলা একটায় পরীক্ষা শেষ হয় খাদিজার। পরীক্ষা শেষে বোন ও দুলাভাইয়ের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
অনলাইনে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রচারসহ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অভিযোগে ২০২০ সালের অক্টোবরে খাদিজা ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। একটি মামলা হয় রাজধানীর কলাবাগান থানায়, অপরটি নিউমার্কেট থানায়। দুটি মামলার বাদীই পুলিশ।
গত বছরের মে মাসে দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।
অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গত বছরের ২৭ আগস্ট মিরপুরের বাসা থেকে খাদিজাকে গ্রেপ্তার করে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ।
আদালত ও আইনজীবী সূত্রের তথ্যমতে, বিচারিক আদালতে দুবার খাদিজার জামিন আবেদন নাকচ হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত করেন চেম্বার আদালত। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। ১৬ নভেম্বর খাদিজার জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা লিভ টু আপিল খারিজ করেন আপিল বিভাগ।
আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে দুই মামলায় খাদিজাকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকে। এর ধারাবাহিকতায় তিনি প্রায় এক বছর তিন মাস পর কারাগার থেকে আজ মুক্তি পেলেন।