Home বিশ্ব হামাস কেমন আচরণ করেছে, জানালেন জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলি নারী
অক্টোবর ২৪, ২০২৩

হামাস কেমন আচরণ করেছে, জানালেন জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পাওয়া ইসরায়েলি নারী

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হাতে জিম্মি হয়েছিলেন ৮৫ বছর বয়সী ইসরায়েলি নারী ইয়োশেভেদ লিফশিৎজ। গতকাল সোমবার রাতে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মুক্তির পর লিফশিৎজ জানিয়েছেন, জিম্মি থাকা অবস্থায় কোন পরিস্থিতিতে ছিলেন তিনি। আর হামাস সদস্যরা তাঁর সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন।

আজ মঙ্গলবার ইসরায়েলের তেল আবিবে একটি হাসাপাতালে সংবাদ সম্মেলন করেন লিফশিৎজ। তিনি বলেন, ইসরায়েলের কিবুৎজ এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেন হামাস সদস্যরা। পরে তাঁকে মোটরসাইকেলে করে গাজায় নেওয়া হয়। এ সময় তাঁর শরীরে বেশ কয়েক জায়গায় আঘাত লাগে। শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল তাঁর।

সোমবার লিফশিৎজ ছাড়াও নুরিত কুপার (৭৯) নামের আরও এক ইসরায়েলি নারীকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। এর আগে আরও দুই মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দেয় গোষ্ঠীটি। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এ সময় ওই জিম্মিদের আটক করা হয়েছিল। ইসরায়েল বলছে, হামাসের কাছে এখনো ২০০ জনের বেশি ব্যক্তি জিম্মি রয়েছেন।

হামাসের হাতে জিম্মি থাকার সময় তিনি ‘নারকীয় পরিস্থিতির’ মধ্য দিয়ে গেছেন বলে জানান লিফশিৎজ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইসরায়েল সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে গাজা সীমান্তে বেড়া দিয়েছে। তবে তা হামাস যোদ্ধাদের ইসরায়েলে প্রবেশ ঠেকাতে পারেনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিফশিৎজের সঙ্গে ছিলেন তাঁর মেয়ে শ্যারন। মায়ের পক্ষে দোভাষীর কাজ করছিলেন তিনি। শ্যারন বলেন, তাঁর মাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। তাঁকে ভেজা মাটির ওপর দিয়ে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। গাজায় মাটির নিচে সুড়ঙ্গের (টানেল) একটি বড় নেটওয়ার্ক রয়েছে। এটা ‘মাকড়সার জালের’ মতো।

লিফশিৎজ বলেন, যখন তাঁকে গাজায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তখন তাঁর ঘড়ি ও গয়নাগুলো নিয়ে নেন হামাস সদস্যরা। গাজায় মোটরসাইকেল থেকে নামার পর তাঁকে নিতে আসা লোকজন বলেছিলেন, ‘আমরা পবিত্র কোরআনে বিশ্বাস করি। আমরা আপনাকে আঘাত করব না।’

মায়ের কথা তুলে ধরতে গিয়ে এ সময় শ্যারন বলেন, লিফশিৎজসহ ২৪ জনকে সুড়ঙ্গের ভেতরে নেওয়া হয়েছিল। সেখানের মাটি নরম ও স্যাঁতসেঁতে। এর দুই–তিন ঘণ্টা পর কিবুৎজ এলাকা থেকে জিম্মি করা পাঁচজনকে আলাদা করে একটি কক্ষে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁদের জন্য নিরাপত্তারক্ষী ও চিকিৎসক ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সুড়ঙ্গের ভেতরে লিফশিৎজকে যেখানে রাখা হয়েছিল, স্থানটি পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন ছিল। তাঁদের মাদুর (ম্যাট্রেস) পেতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রতি দুই–তিন দিনে একজন চিকিৎসক এসে সবাইকে দেখে যেতেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হতো। একজন জিম্মিকে গাজায় নিয়ে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। তাঁকেও চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল।

ইসরায়েলের দিকে ‘তাক করা আছে’ হিজবুল্লাহর দেড় লাখ রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র

লিফশিৎজ জানান, প্রতি পাঁচজন জিম্মির জন্য একজন নিরাপত্তারক্ষীর ব্যবস্থা রেখেছে হামাস। জিম্মিদের ‘খুঁটিনাটি বিষয়ে’ খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। নারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন নারীদেরও সেখানে দায়িত্বে রেখেছে হামাস।

জিম্মি থাকার সময় তাঁদের পনির (চিজ) ও শসা খেতে দেওয়া হয়েছিল বলে জানান লিফশিৎজ। তিনি বলেন, একই খাবার হামাস সদস্যরাও খেয়েছেন। এ সময় শ্যারন বলেন, তাঁর মা মনে করেন ‘সব জিম্মি মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত এই গল্পটা শেষ হবে না।’

গাজায় রাতভর ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১৪০: হামাস

এদিকে নতুন করে মুক্তি দেওয়া দুজনকে নিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রথমে রাজি ছিলেন না বলে জানিয়েছেন হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, এখন তাঁদের গ্রহণ করা হয়েছে, সম্ভবত ইসরায়েলের রাজপথ থেকে আসা চাপের কারণে।

বন্দীদের নিরাপত্তা নিয়ে হওয়া সমঝোতার শর্ত ইসরায়েল লঙ্ঘন করার পরও তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে জানান হামদান। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, অন্তত তাঁদের মুক্তি দেওয়ার সময় যেন হামলা বন্ধ করা হয়। যাতে তাঁদের রেডক্রসের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া যায়; কিন্তু ইসরায়েল মানেনি। এতে বোঝা গেল, আপনি ইসরায়েলকে বিশ্বাস করতে পারেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *