Home বানিজ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে নজর দিন
4 weeks ago

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে নজর দিন

ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে আগামী (২০২৫-২৬) অর্থবছরের বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার সুপারিশ করেছেন শীর্ষস্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা। আর মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকার ওপরে নির্ধারণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার ও ভাতার অঙ্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বুধবার প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব সুপারিশ করা হয়েছে। এ সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হবে না বাজেটে। বর্তমান অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে একটি স্বস্তির বাজেট তৈরির চেষ্টা চলছে।
বাজেট প্রণয়নের আগে প্রতিবছরই বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মত নিতে এ ধরনের বৈঠক ডাকা হয়। সেটির ধারাবাহিকতায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলরুমে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বৈঠকটি পরিচালনা করেন।
শুরুতে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মেগা প্রকল্প ও কথার ফুলঝুরি থাকবে না আগামী বাজেটে। এ বাজেট সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের দিকে নেওয়ার দিকনির্দেশনা হবে। স্বল্প ও মধ্য পরিকল্পনা থাকবে না। তবে বর্তমান জরুরি ও প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আমাদের হাতে সীমাহীন সম্পত্তি নেই। ফলে ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু করা সম্ভব হবে না। আগামী বাজেট এমনভাবে প্রণয়ন করা হবে যা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দল ফেলে দিতে না পারে। আর সেটি করলে ভুক্তভোগী জনগণই তার জবাব চাইবে।
এলডিসি উত্তরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতি আছে। এলডিসি উত্তরণে যাব না এটি বলে বসে থাকলে তা ভালো হবে না। এলডিসি উত্তরণের সঙ্গে দুর্নীতি কমাতে হবে, ব্যয় কমাতে হবে। যা অনেক সময় ব্যবসায়ীরা করতে আগ্রহী হচ্ছে না। তবে দেশের ভেতরে ঘরে ঘরে যারা কাজ করছেন তাদের জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দেশে সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে, কর্মসংস্থান কম হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়াসহ তথ্যপ্রযুক্তিতে মনোযোগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার ও দুর্নীতি কমিয়ে আনার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বৈঠকে অংশ নিয়ে দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার বলেন, দেশে কয়েক বছর ধরে টানা ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। এতে সাধারণ মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা কমেছে, এজন্য আসন্ন বাজেটে ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকা করার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ অনেকটা দুর্ভোগে পড়েছে। সেটি মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার ও সুবিধাভোগীদের ভাতার অঙ্ক বৃদ্ধি, গরিব মানুষকে কম মূল্যে পণ্য সরবরাহে টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আগামী অর্থবছরে এর হার ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক বাহবা নিতে প্রতিবছর একটি উচ্চাভিলাষী বাজেট দেওয়া হতো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হার অনেক কম। বাজেটের আকার বাস্তবমুখী হওয়া দরকার। এছাড়া রাজস্ব আয় বাড়াতে বিভাগীয় ও মফস্বল শহরগুলোতে নজর দিতে হবে। সেখানে অনেক ধনী ব্যবসায়ী আছেন, যারা কর দেওয়ার যোগ্য কিন্তু দিচ্ছেন না।
দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, রাজস্ব আদায়ে অনেক ঘাটতি আছে। সরবরাহ কিছুটা উন্নতি হলেও মূল্যস্ফীতি সেভাবে কমছে না।বেসরকারি বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। এসব বিষয়ে নজর দিতে হবে।
দৈনিক জনকণ্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান বলেন, অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করতে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। করদাতার সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ হলে রিটার্ন দিচ্ছে ৪০ লাখ। বেশির ভাগ টিআইএনধারীদের রিটার্নের আওতায় আনতে হবে।
সমকালের উপ-সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আকার বাড়াতে হবে।
ইন্ডিপেন্ডেট টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক শামীম জাহিদী বলেন, কর দেওয়ার ক্ষেত্রে কালোটাকার মালিক ও ভালো ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। ফলে ভালো ব্যবসায়ীরা কর দিতে উৎসাহিত হচ্ছেন না। তিনি কেবল অপারেটরদের করের আওতায় আনার প্রস্তাব করেন।
প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন বাজেট বক্তব্যের বই ছোট পরিসরে করা ও বাজেটের আকার বাস্তবমুখী করে এ খাতে সংস্কারের ব্যাপারে অর্থ উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এছাড়া প্রতিবছর কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যানও বাজেটে প্রকাশ করার দাবি জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্যান্য সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, অন্য নগদ টাকার লেনদেন কমিয়ে এনে ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ে তোলা হলে কালোটাকার ছড়াছড়ি কমে আসবে।
এদিকে সরকারের নজর দেওয়া দরকার। এছাড়া শিশুদের কল্যাণে আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোসহ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়। প্রাক-বাজেটে আলোচনায় আরও উঠে আসে ভুল তথ্যে জিডিপির প্রবৃদ্ধি নির্ধারণের বিষয়টি। সেখানে বলা হয়, রপ্তানি খাতের ভুল তথ্য সংশোধন করা হলেও জিডিপির প্রবৃদ্ধি নিরূপণে সঠিক তথ্য সরবরাহ থাকা দরকার।
আগামী ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে বলা হয়, আমাদের সে ধরনের প্রস্তুতি খুব কম। এক্ষেত্রে প্রস্তুতি আরও বাড়াতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *