Home বিশ্ব এবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে খেলা
মার্চ ১৭, ২০২৫

এবার যুদ্ধবিরতি নিয়ে খেলা

নির্বাচনের প্রচারণায় কেবল দুটি ফোনালাপে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করে দিতে পারেন বলে জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এখন তিনি বলছেন যে, সেই বক্তব্যটি ছিল ঠাট্টা করার জন্য। ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ৬০ দিন কেটে গেছে। কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। যদিও ট্রাম্প শিগগিরই যুদ্ধ বন্ধ করার আশা করেছেন। তবে এই আশার মধ্যেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে যুদ্ধবিরতির খেলা চলছে। স্বয়ং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

যুদ্ধবিরতি নিয়ে খেলা 
আজ ইউক্রেন যুদ্ধের ১১১৭ দিন। যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে এতদিন কোনো আলোচনাই হয়নি। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর আলোচনা শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতি মানতে বাধ্য করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। না মানলে রাশিয়ার ওপর আরো নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাশিয়াকে প্রস্তাব মেনে নিতে বলেছিলেন। না হলে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এরপর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তার ঘনিষ্ঠ মিত্র বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেস্কোর সঙ্গে বৈঠকের পর পুতিন প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কথা জানান। তবে কিছু শর্ত দেন। যদিও সেইসব শর্ত গণমাধ্যমে পুরোপুরি আসেনি। এতে বৈশ্বিক গণমাধ্যমগুলো ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, ইউক্রেন যুদ্ধ হয়তো বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু এক দিন পরই পুতিনের সব শর্তের কথা শুনে চক্ষু চড়কগাছ।

রাশিয়ায় আমেরিকার একটি প্রতিনিধি দলও সফর করেছে। বৃহস্পতিবার ভারা প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, রাশিয়ার মতামত প্রতিনিধি দলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর শুত্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে লেখেন, এই ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান হওয়ার খুব খুব ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদ জানালেও ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্য যুদ্ধের বিষয়ে এখনো অনেক অর্থীমাংসিত বিষয় রয়েছে। ইউক্রেনের অনেক এলাকা যেমন রাশিয়ার দখলে, তেমনি কুরস্ক অঞ্চলের রাশিয়ার কিছু এলাকা ইউক্রেনের সৈন্যরা দখল করে রেখেছে। ফলে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে এখনো পুরোপুরি আশাবাদী হতে পারছেন না বিশ্লেষকরা।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি পুতিনের বক্তব্যকে ধূর্ততা বলে অভিহিত করেছেন। শুক্রবার জেলেনস্কি সোশ্যাল মিডিয়া এক্সে (পূর্বের টুইটার) একাধিক পোস্ট দেন। পোস্টগুলোতে তিনি সমালেচনা অব্যাহত রাখেন এবং লেখেন, ‘পুতিন এই যুদ্ধ থেকে সরে আসতে পারবেন না। কারণ এটি তাকে কিছুই দিবে না। এ কারণেই তিনি এখন কূটনীতিকে ব্যর্থ করতে যুদ্ধবিরতির আগেই চরম কঠিন ও অগ্রহণযোগ্য শর্ত আরোপ করছেন। তার মতে, পুতিন সবার সঙ্গে অনন্তকাল ধরে আলোচনা চালিয়ে যাবেন। তিনি দিন, সপ্তাহ, মাস ধরে অর্থহীন আলোচনা করবেন। আর তার সৈন্যরা মানুষ হজ্ঞা চালাতে থাকবে। পুতিনের দেওয়া প্রতিটি শর্তই কুটনীতিকে ব্যাহত করার একটি চেষ্টা। এভাবেই রাশিয়া কাজ করে এবং আমরা এটি সম্পর্কে আগে থেকেই সতর্ক করেছি বলে উল্লেখ করেন জেলেনস্কি।

বস্তুত, যুদ্ধবিরতির বিষয়ে পুতিনের নীতিতে খুশি নয় ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের একাধিক দেশ। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চুক্তি নিয়ে ছেলেখেলা করছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। আমরা সেটা হতে দিতে পারিনা। পুতিন বিষয়টিকে একেবারেই অরুরুত্ব দিচ্ছেন না। ক্রেমলিন আসলে শাস্তি চায় না। তাই পুতিন যুদ্ধবিরতি পিছিয়ে দিতে চাইছেন। স্টারমার বলেছেন, রাশিয়া যদি শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে আসে, তাহলে আমাদেরকে দীর্ঘস্থায়ী শাস্তি নিশ্চিত করতে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার বিষয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। আর যদি না আসে তাহলে যুদ্ধ বন্ধ করতে আমাদেরকে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক চাপ আরো বাড়াতে হবে।

পুতিনের নীতি নিয়ে এর আগে ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। হোয়াইট হাউজে জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের বাদানুবাদের পর ইউরোপের অধিকাংশ দেশ ইউক্রেনের পাশেই দাঁড়িয়েছিল। ব্রিটেন ও ফ্রান্স ছিল তাদের মধ্যে অন্যতম। ইউক্রেনে সেনা পাঠাতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে এই দুই দেশ। যুদ্ধবিরতি নিয়ে যখন আলোচনা তুঙ্গে, তখন রাশিয়ার ভেতরে কুরস্ক অঞ্চলে থাকা ইউক্রেনীয় সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান নিয়ে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তাদের হয় ‘আত্মত্মসমপর্ণ অথবা মৃত্যু’ পথ খোলা আছে বলে জানিয়েছেন পুতিন। এদিকে ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে জোরালোভাবে অনুরোধ করেছেন যে, পুতিন যেন রুশ বাহিনীর দ্বারা বেষ্টিত ইউক্রেনীয় সেনাদের জীবন রক্ষা করেন। সেখানে হত্যাকাণ্ড চালানো হলে সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড হবে বলে বর্ণনা করেছেন ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। পুতিন মিথ্যা কথা বলছেন। পুতিন এবং ট্রাম্পের এই আহ্বানে যুদ্ধবিরতিতে আশার আলো দেখতে পারছেন না বিশ্লেষকরা। এমনকি এক জরিপে দেখা গেছে, ইউক্রেনবাসীরাও মনে করছেন না যে রাশিয়ার। সঙ্গে যুদ্ধবিরতির কাজটি সফল হবে। তবে হোয়াইট হাউজ বিশ্বাস করে যে, দুই পক্ষ এর আগে কখনো শান্তির এত কাছে ছিল না। এদিকে বিভিন্ন মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, জেলেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গোপনে তার বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সার্বিক পরিস্থিতিতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি আসলে হবে কি না এবং হলেও সেটা কবে হবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলে মনে করছেন অন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *