আমাদের প্রধান কাজ গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন: আইন উপদেষ্টা
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছন, আমাদের প্রধান কাজ গণহত্যার বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। বিপ্লব পরবর্তী সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা থাকে। সে কারণেই আমাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। আমাদের কাজের সমালোচনা করুন সমস্যা নেই। কিন্তু যখন ব্যক্তিগত চরিত্র নিয়ে কথা বলা হয় তখন বোঝা যায় ফ্যাসিস্টকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারতের স্ক্রিপ্টে দেশে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই সরকার সফল হলে আমরা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার করতে পারবো। ছাত্র জনতার আত্মদানের সফলতার জন্য পরাজিত ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। ছাত্র, ছাত্রী, বেকার, চাকরিজীবী, রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সবাই মিলে আমাদের ডাইনির হাত থেকে রক্ষা করে। আমাদের এই আন্দোলন ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ কাশ্মীরে পরিণত হবে। আমাদের কাজ হচ্ছে ছাত্র-জনতার এই আত্মদানকারীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা রক্ষা করা।
শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘স্মৃতির মিনার -গণঅভ্যুত্থান ২০২৪’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব মোর্শেদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্যে রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও লেখক রাখাল রাহা প্রমুখ।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের আন্দোলনে অংশ নেওয়া নিজেকে রাজপথের সৈনিক হিসেবে উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের নির্মম গণহত্যার ফুটেজগুলো দেখার পরে এখনো গা শিউরে ওঠে। আবু সাঈদ, মুগ্ধ, রাফসানদের অবদান আমরা ভুলতে পারবো না। আমরা তাদের কাছে অনেক ঋণী। আত্মবলিদান দেওয়া শহীদদের প্রত্যাশা আমরা কতটা পূরণ করতে পারছি সেটাই ভাবার বিষয়।
তিনি আরও বলেন, ৭১ এর পর রক্ষীবাহিনী গঠন করে ওই সময়কার ফ্যাসিস্ট সরকার হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে এবং দেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়। আর গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা গোটা দেশটাকে খুনের রাজ্যে এক অন্ধকার নরকে পরিণত করেছিল। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের লুটপাট, জুলুম, নির্যাতন ও ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছে তাতে গোটা দেশ এক ভয়ঙ্কর বিভীষিকায় পরিণত হয়। ১৫ বছরে শেখ হাসিনা যা করেছে সেসব ভুলে গিয়ে যখন স্বৈরাচারের দোসররা বলে আগে ভালো ছিলাম তখন খুব কষ্ট পাই। তারা কি ভুলে গেছে জুলুম, নির্যাতনের কথা?
আন্দোলনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, পত্রিকাগুলো প্রথম দিকে সাহস দেখাতে পারেনি কিন্তু ক্রুশিয়াল টাইমে প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে। একটা ভুয়া ভিডিওর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটা ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে ৩ আগস্ট আমি নাকি ক্যান্টনমেন্টে ছিলাম আর ভারতীয় দালালদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছিলাম এসব দেখে আমি অবাক হলাম। মিথ্যা বলারও একটা সীমা থাকা দরকার। আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য ফ্যাসিবাদের দোসররা অনেক ষড়যন্ত্র করেছিল। তার একটা অংশ ব্যক্তিগত চরিত্র হরণ করা।
শেখ হাসিনার লুটপাটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এদেশকে লুট করা ফ্যাসিস্ট খুনি মহিলা যখন বলে তার বোন তাকে বলে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে খাওয়াচ্ছো রোহিঙ্গাদের খাওয়াতে পারবে না? তখন আসলে এই মিথ্যাবাদীকে ধিক্কার দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। শেখ হাসিনা ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের লুটপাট ও দুর্নীতির বিচার করতে হবে। সেটা দুর্নীতি দমন কমিশন ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু কথা হচ্ছে, যেই দুর্নীতি দমন কমিশন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে সেই কমিশনও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের তৈরি কমিশন। আওয়ামী দুর্নীতিবাজদের বিচার করতে হলে আগে দুদকের সংস্কার করতে হবে।
আসিফ নজরুল আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের আগে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনেও পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হেলমেট পরে অস্ত্র নিয়ে ছাত্র ও তাদের অভিভাবকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।