Home জাতীয় খালেদা জিয়াকে নিয়ে অধ্যাপকের লেখা শেয়ার করলেন আইন উপদেষ্টা, কী আছে তাতে?
4 weeks ago

খালেদা জিয়াকে নিয়ে অধ্যাপকের লেখা শেয়ার করলেন আইন উপদেষ্টা, কী আছে তাতে?

সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষ্যে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এবার আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দীর্ঘ এক যুগ পর বৃহস্পতিবার সেনাকুঞ্জের এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন খালেদা জিয়া। এছাড়াও ২০১৮ সালের পর তিনি এই প্রথম প্রকাশ্যে কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস তার ভাষণে বলেন, খালেদা জিয়াকে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে পেরে আমরা গর্বিত।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পাশের আসনে বসে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন বিএনপির চেয়ারপারসন। যার একাধিক ভিডিও-ছবি ছড়িয়ে পড়ে। সেসব ছবি নিয়ে অনেক আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।  অনেকেই ছবি শেয়ার করে ফেসবুকে পোস্টও করেন। এবার বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ডেল মেডিকেল স্কুল

ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অস্টিনের অধ্যাপক রুমি আহমেদ। রোববার বেগম খালেদা জিয়ার সেনাকুঞ্জে যাওয়া নিয়ে দেওয়া পোস্টটি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করেছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

যুগান্তর পাঠকদের জন্য লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

বেগম খালেদা জিয়ার সেনাকুঞ্জ সফরের অনেক ভিডিও দেখলাম গতকাল! আমি যেহেতু চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র – আমি ওনার ভিডিওগুলো দেখেছি অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে!

একযুগ পর সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া, বসলেন ড. ইউনূসের পাশে

প্রথমত কাল দেখলাম হাসছেন এবং শ্বাস নেওয়ার জন্য না থেমে এবং না হাঁপিয়ে গিয়ে মোটামুটি লম্বা সময় কথা বলতে পারছেন। আরেকটা ব্যাপার লক্ষ করলাম ওনার অক্সিজেন লাগছে না!

এই পুরো ব্যাপারটা একটা মিরাকল ছাড়া আর কিছু না। এই কিছুদিন আগে ৮০ বছর বয়েসী, ৬-৭ মাস টানা আইসিইউতে কাটালেন। ওনার কিডনি ফেইল করেছিল; হার্ট ফেইলিউর ছিল; লিভার পুরো ফেইল করেছে। লিভার ফেইলিউর-এর জীবনঘাতী কমপ্লিকেশন যা যা হতে পারে সবই তার ছিল – সারা শরীরে পানি, পায়ে পানি, পেটে পানি, ফুসফুসে পানি! প্রতিদিন পেট আর ফুসফুসের পাশ থেকে সুই ঢুকিয়ে লিটারকে লিটার পানি ড্রেইন করতে হতো। ওনার দুই চেস্টে টিউব ঢোকানো ছিল কন্টিনিউয়াস পানি ড্রেইন করানোর জন্য। ঘাড়ের মধ্যে বিশাল মোটা ডায়ালাইসিস লাইন ছিল।

আরও কিছু কঠিন সমস্যা ছিল যেমন- রিউমাটয়েড আর্থরাইটিস- তার কথায় পরে আসছি। পৃথিবীর সবচেয়ে অ্যাডভান্সড আইসিইউগুলোতে আমি কাজ করছি গত ২০ বছর ধরে।

আশি বছর বয়সী একজন মানুষ এডভান্সড রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস যার লিভার ফেইল করেছে – কিডনি ফেইল করেছে; সিভিয়ার পালমোনারি হাইপারটেনশন আছে – এইদেশে আমরা আশা ছেড়ে দিতাম! বলে দিতাম প্যালিয়েটিভ কেয়ার নাও – হসপিসে চলে যাও।

৮০ বছর বয়েসী একজন মানুষের লিভার ফেইলিউর একটা ওয়ানওয়ে জার্নি। বাকি সব অর্গান ডোমিনোর মতো ফেইল করা শুরু করে। রোগী বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।

মিসেস খালেদা জিয়া যে সাত মাস আইসিইউ থেকে কাল সেনাকুঞ্জে এসে সবার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন- আবারও বলছি এটা মেডিকেল মিরাকল। উপরিওয়ালা কোথাও কেউ নিশ্চয় আছেন; যিনি সম্ভব-অসম্ভবের কারিগর- উনিই হয়তো চেয়েছেন অসম্ভবের ঘড়ির কাঁটাটাকে হাত দিয়ে ঠেকিয়ে রাখতে। কেউ ওনাকে এই দিনটা দেখিয়ে দিতে চেয়েছেন! কারো কোনো পুণ্য আছে কোথাও- এই সম্ভব-অসম্ভবের উল্টোচালে।

আপনারা কেউ কি ওনার হাত দুটো খেয়াল করেছেন? কীভাবে বেঁকে গিয়েছে? কনট্রাক্টেড হয়ে গিয়েছে? আমরা মেডিকেল কলেজে পড়েছি সোয়ান নেক ডিফর্মিটি; বাটোনেআর ডিফর্মিটি। গত শতাব্দীর টার্ম! এই শতাব্দীর মেডিকেল স্টুডেন্টরা এগুলো খুব একটা দেখে না এখন। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস চিকিৎসা না হলে বার্ন্ট আউট হয়ে যায়। অ্যাডভান্সড রিউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিসের শেষ পর্যায়ে গিয়ে হাতগুলো এভাবে শক্ত হয়ে কুঁকড়ে যায়| দুটো হাতই শুধু অচল হয় না- অবর্ণনীয় যন্ত্রণা হয়; হাই ডোজ ইম্মিউনিটি সাপ্রেস করা মেডিসিনে না থাকলে।

আপনি কি খেয়াল করেছেন উনি পা লম্বা করে হুইল চেয়ারে বসেছিলেন? উনি পা ভাঁজ করতে পারেন না! ওনাকে স্ট্র্যাপ দিয়ে হুইল চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল, যাতে পড়ে না যান। আমি খেয়াল করছিলাম ওনার ছোট পুত্রবধূ প্রতিটা মুহূর্ত শ্বাশুড়ির দিকে চোখ রাখছেন – কখন কি হয়ে যায়!

একটা জীবন চিন্তা করুন তো? অবর্ণনীয় ব্যথার কারণে পা ভাঁজ করা যায় না, স্টিফ হয়ে গিয়েছে- হাত দুটো অচল! পুরো পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে ওনাকে! হ্যাঁ আমি বলছি ‘দেওয়া হয়েছে’- এমনি এমনি হয়নি! আগে ওনাকে যখন টিভিতে দেখেছি- তখন তো এতো খারাপ অবস্থা ছিল না। উনি এই হাত দিয়ে করমর্দন করতেন- সারাদিন ফাইল স্বাক্ষর করতেন! একটু খুঁড়িয়ে হলেও হাঁটতে পারতেন। ২০০৮-এর নির্বাচনের আগে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৯ ঘণ্টা ক্যাম্পেইন করেছেন- সারারাত পথসভা করেছেন।

আজকাল আমরা এ ধরনের রিউমাটয়েড ডিফর্মিটি খুব কম দেখি। কারণ আজকাল রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের অনেক ডিজিজ মোডিফাইং ঔষধ আছে। এই ঔষধটা কন্ট্রোল করে রাখা যায়! একবিংশ শতাব্দীতে আমাদের চিকিৎসা বিজ্ঞান রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসকে এখন আর ওই পর্যায়ে পৌঁছতে দেয় না।

কিন্তু উনি যে চার-পাঁচ বছর জেলে ছিলেন তখন তার উপর গরুর চিকিৎসা হয়েছে, মানুষের চিকিৎসা হয়নি। উনি আধুনিক কোনো চিকিৎসা পাননি! যে ঔষধ দেওয়া হয়েছে তাতে ওনার ডিজিজ কন্ট্রোল তো হয়ইনি লিভার-কিডনি ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে।

২০০৭-এর পর থেকে ওনার পরিবারের উপর যা গিয়েছে, যা ট্র্যাজিক মহাকাব্য। বড় ছেলেকে মেরে তার কোমর ভেঙে দেওয়া হয়েছিল- তার দশ বছর লেগেছে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে! আরেক ছেলের উপর (যে রাজনীতির র-এর সাথে জড়িত ছিল না) তার উপর কি ঝড় গিয়েছে আল্লাহই জানেন। ছাড়া পাওয়ার কিছুদিন পর ৪৫ বছরের সুস্থ তরুণ ক্রিকেট প্লেয়ার মানুষটা ধুম করে মরে গেলেন।

এই কাজগুলো যারা করেছেন, যাদের সিদ্ধান্তে হয়েছে, যারা এক্সিকিউট করছেন- তাদেরকে জিয়া পরিবার ক্ষমা করলেও এই দেশের একটা বিশাল অংশ মানুষ কোনো দিনই ক্ষমা করবে না!

আরেকটা কথা- খালেদা জিয়ার এখন কি উচ্চ চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া উচিত? আমার মতে এখন এটা পলিটিক্যাল ও পারিবারিক ডিসিশন- মেডিকেল ডিসিশন না।

ওনার যে মেডিকেল টিম – তাদের অনেককে আমি চিনি! ওদের উপর আমার ১০০% আস্থা আছে। আমি মনে করি উনারাই যথেষ্ট। ওনাকে টেনেহিঁচড়ে বিদেশে নেওয়ার কোনো যুক্তি বা মেডিকেল নেসিসিটি আমি দেখি না। এটা আমার ব্যক্তিগত মত। ওনার পরিবার আরো ভালো বুঝবেন।

আশা করি মিসেস জিয়া দীর্ঘজীবী হন! আরও অনেক দিন বেঁচে থাকুন এবং টানাহেঁচড়া ধাক্কাধাক্কি ছাড়া নিজের বাড়িতে একটু শান্তিতে থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *