হাসিনা গেছে যে পথে, পুনর্বাসনকারীরাও যাবে সে পথে
গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। নতুন বাংলাদেশ গড়ার সম্ভাবনা নিয়ে তিনদিন পর নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নতুন সরকার গঠনের পর ১২ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে দেশে ফেরা ও আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের পরামর্শ দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। এ ঘটনায় ব্যাপক সমালোচিত হন সাখাওয়াত হোসেন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তাকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার পক্ষে মত দেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতির অপসারণ ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেয় বিএনপি।
সম্প্রতি জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানও এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগকে বার বার ফ্যাসিস্ট না বলার পরামর্শ দেন।
এরপর থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে সহায়তাকারী হিসেবে রাজনৈতিক নেতাদের ইঙ্গিত করে বিভিন্ন রকম বক্তব্য দিয়ে আসছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে যেভাবে বিদায় করা হয়েছে, সেভাবেই পুনর্বাসনকারীদেরও বিদায় করার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহাসিক ৯ দফার ঘোষক ও সমম্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, হাসিনা গেছে যে পথে, হাসিনার পুনর্বাসনকারীরাও যাবে সে পথে। মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক ওয়ালে এক স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন কাদের।
সমন্বয়ক কাদের আরও বলেন, ‘এতো এতো রক্ত আর মায়ের বুক খালি হওয়ার পরও যারা খুনিদেরকে পুনর্বাসন করতে চায়, তাদের পরিণতিও একই হবে। এই প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা এই সুশীলদের, চক্রান্তকারীদেরও ছুড়ে ফেলে দেবে। ’
সালফ খান নামের একজন ওই স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে লিখেছেন ‘এই সরকারের আমলে সঠিক বিচার হলে হাসিনার পুনর্বাসন অসম্ভব হবে। কেননা আমরা জানি জুলাই-আগস্টে হাসিনার নির্দেশে কি তাণ্ডবলীলা চালানো হইছে। ’
জাবেদ আলম লেখেন, ‘বিপ্লবের সঙ্গে বেইমানী কোনোভাবেই মানা হবে না ইনশাআল্লাহ’।
মুহিবুল্লাহ সেফাত লেখেন, ‘ভাই ৭২ এর সংবিধান বাতিল করেন। লীগ নিষিদ্ধ করেন। ’
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, ‘ছেলেদের রক্তের ওপর পা রেখে দিল্লিকে কিবলা বানিয়ে ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জনগণের মুক্তির নিয়তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। আওয়ামী পুনর্বাসনের জন্য যারা উদ্যোগ নেবে, তাদেরকে ইতিহাস গণশত্রু হিসেবে চিহ্নিত করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটকে যারা ধারণ করে, যারা গণমানুষের আশা–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে চায়, তারা ২৪–পরবর্তী বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত করার দাবি ছাড়া আওয়ামী লীগ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আর কোনো দ্বিতীয় বক্তব্য দিতে পারে না।’
এর আগে সোমবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যখন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের কথা বলি, তখন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বক্তৃতায় সেটি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। ১৯৪৫ সালে জার্মানির ফ্যাসিস্ট নাৎসি পার্টিকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় এবং এখনো তারা নিষিদ্ধ রয়েছে; সেখান থেকেই বোঝা উচিত আওয়ামী লীগের পরিণতি কী হওয়া উচিত।’