Home রাজনীতি অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে পথ চলতে চায় বিএনপি
নভেম্বর ২, ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে পথ চলতে চায় বিএনপি

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে পথ চলতে চায় বিএনপি। এজন্য জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে যাতে কোনো দূরত্ব তৈরি না হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে দলটি। তবে যৌক্তিক সময়ে ভোটের ব্যবস্থা না করলে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে থেকে সরকারের ওপর চাপও তৈরি করবে বিএনপি। সেক্ষেত্রে আন্দোলনের ফসল অন্তর্বর্তী সরকারকে কেউ যাতে ব্যর্থ করতে না পারে, সেজন্য ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের দিন থেকেই নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে দলটি।

জানা যায়, সোমবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাষ্ট্র মেরামতে ঘোষিত সংস্কার কর্মসূচি এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবির বিষয়ে আলোচনা করেন নেতারা। তারা ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রে নতুন করে কোনো ধরনের সংকট বা জটিলতায় পড়ুক- এমন পরিস্থিতি সতর্কভাবে এড়িয়ে চলার অবস্থান প্রকাশ করেন।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় দিতে চাই। আমরা আশা করি, সরকার এ সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে সংস্কার কাজ শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দেবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া; সে অনুযায়ী কাজ চলছে।

বিএনপি নেতাদের মতে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করছে দল, যা ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে বিরোধী বহু নেতাকর্মীকে গুম-খুন, নির্যাতন করেছে। সর্বশেষ হাজারো ছাত্র-জনতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। অথচ এসব ঘটনায় জড়িত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি। অনেকে পালিয়ে গেছেন। বিষয়টি জনগণ ভালোভাবে দেখছে না। এছাড়া গণতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন কমিশনব্যবস্থা সংস্কার, সেদিকে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান কিছু দেখা যায়নি। জনগণের যে প্রত্যাশা-গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার, তা ফিরিয়ে আনাই প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কারণ, গত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা ভোট দিতে উদ্গ্রীব হয়ে আছে। সরকারের উচিত হবে জনগণের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দেওয়া। দ্রুত তা না করলে সরকার জনগণের আস্থা হারাতে পারে বলে মনে করেন নেতারা।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে। সবসময় সব সম্প্রদায় একসঙ্গে কাজ করে আসছি, একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। ইদানীং দেখছি একটা সম্প্রদায়ের মানুষ বড় রকমের আন্দোলন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। অথচ যে দাবিতে তারা আন্দোলন করছে, তা দেশে এখন ঘটছে না। অথচ এ নিয়ে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার ষড়যন্ত্রে নেমেছে একটি মহল। ছাত্র-জনতার রক্ত দিয়ে অর্জিত বিপ্লবকে অনেকাংশে বিপন্ন করার চেষ্টা করছে। এটি পরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে। নানাভাবে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে ফেরাতে চক্রান্ত চলছে। কিন্তু তা সফল হতে দেওয়া যাবে না। সরকারকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপিসহ রাজপথের প্রতিটি রাজনৈতিক দলকেও সজাগ থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি, সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি রাজপথও না ছাড়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনের বিষয়ে এখন প্রায় সব রাজনৈতিক দল একমত। জনগণও চায় দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ। যৌক্তিক সময়ে ভোটের ব্যবস্থা না করলে নির্বাচনের দাবিতে একটা সময় জনগণও মাঠে নামতে পারে। কারণ, নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব নয়।

এদিকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ছাত্র-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা সব শক্তির ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রাখবে দলটি। দলীয় সূত্র জানায়, এবারের ৭ নভেম্বর ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ জাঁকজমকভাবে পালন করবে বিএনপি। এ উপলক্ষ্যে ইতোমধ্যে ১০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে দলটি। এর মধ্যে ৮ নভেম্বর ঢাকায় বড় আকারে র‌্যালি করবে। ৭ নভেম্বরকেন্দ্রিক কর্মসূচির পর কর্মসূচির গতি বাড়ানো হবে। জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *