যেভাবে ভারতে পালিয়ে যান শামীম ওসমান ও নওফেল
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন উপায়ে দেশ থেকে পালিয়েছেন সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ দলটির অনেকেই।এদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দালালদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান বলে জানা গেছে।
গত ৩ আগস্ট শামীম ওসমান দেশ ছেড়েছেন বলে চাউর হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেদিন ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের জানান, তিনি দেশেই আছেন।
৫ সেপ্টেম্বর সরকার পতনের ঠিক এক মাসের মাথায় তাকে দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহে দেখা গেছে।
জানা গেছে, সরকার পতনের পর শামীম ওসমান দালালদের সহায়তায় রাতের আঁধারে বোরকা পরে ভারতে পালিয়ে যান।তিনি এখন দিল্লি অবস্থান করছেন।
দালালদের সহায়তায় গত ৮ সেপ্টেম্বর নওফেল ও বিপ্লব বড়ুয়া ভারতে পৌঁছান। পরে তারা বারাসাত এলাকায় চট্টগ্রামের জন্ম নেওয়া ভারতীয় নাগরিক জনৈক জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ভারতে চিকিৎসাধীন বিপ্লব বড়ুয়ার ভাই এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক বিদ্যুৎ বড়ুয়া সেখানে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
স্থানীয় লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাতক্ষীরার কলারোয়া, দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার সীমান্তের কয়েকটি জায়গা মানব পাচারের জন্য দালালচক্রের স্বর্গরাজ্য হিসাবে পরিচিত। স্থল ও জলপথে এসব এলাকা দিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যে সীমান্ত পারাপার হয়ে থাকে।
স্বাভাবিক সময়ে এসব ঘাট দিয়ে পাসপোর্ট ছাড়া ভারত যেতে মাথাপিছু ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে টাকার অঙ্ক বেড়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা ৫ থেকে ২০ লাখ টাকার চুক্তিতে ভারতে ঢুকছেন।
নির্দিষ্ট টাকা পেলে দালালচক্রের সদস্যরা নৌকাযোগে নির্বিঘ্নে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। পরে ভারতীয় অংশের দালালরা গোপন পথে শহরে যাওয়ার বাসরুট দেখিয়ে দেয়। কেউ কেউ ভারতে গিয়ে মাসিক চুক্তিতে কারো বাসা-বাড়িতে নিরাপদে থাকার ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে কলারোয়ার ভাদিয়ালী সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা লুৎফর আলী বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে এলাকা অরক্ষিত থাকে। এ সময় গাড়িতে করে বহিরাগত অনেকেই আসেন। তাদের কেউ কেউ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে (ভারতে) যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা এ পথে ভারতে ঢুকছেন জানার পর স্থানীয় বাসিন্দারা সতর্ক অবস্থায় আছেন। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে বিজিবি ক্যাম্পে খবর দেওয়া হচ্ছে।