ডিবি হারুনের যে লোভনীয় প্রস্তাবে রাজি হননি নির্মাতা সুমন
তরুণ নির্মাতা সুমন ধর ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ নামে একটি সিনেমার কাজ শুরু করেছিলেন। সে খবর ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় ডেকে নিয়ে তাকে ছবিটি না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
দিনাজপুরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ইয়াসমিনের জীবন নিয়ে সিনেমা না বানিয়ে বরং অন্য কোনো গল্পে তাকে সিনেমা বানানোর নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন-অর-রশীদ। গল্প ও পৃষ্ঠপোষকও তিনি ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলেন।
তরুণ নির্মাতার জন্য এই বাজারে ‘প্রযোজক’ ও ‘স্পন্সর’ পাওয়া সত্যিই কঠিন। ডিবি হারুনের এই ‘দারুণ অফার’ কেন গ্রহণ করলেন না নির্মাতা সুমন ধর?
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি প্রফেশনাল প্রডিউসার ছাড়া কাজ করি না। ওরা তো সরকারি লোক, স্পন্সর ম্যানেজ করে দিতে চেয়েছিল। আমি কখনো রাষ্ট্রের টাকায় সিনেমা বানাতে চাইনি, তাই আবেদনও করিনি। আমার একটা সিনেমা অনুদানের জন্য জমা দিয়েছিল চ্যানেল আই। আমি নিজে কখনো দিইনি। এসব কারণে ওই অফার আমি গ্রহণ করিনি।’
সম্প্রতি সেসময়ের ঘটনা ভাগাভাগি করেন সুমন ধর। তিনি জানান, ফোন করে তাকে ডিবি অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা জায়েদ খান। এই তরুণ নির্মাতাকে জায়েদ খান বলেছিলেন, ‘হারুণ ভাই আমাকে বলেছিলেন, তোমাকে তুলে নিয়ে আসতে। তুমি আমার পরিচালক সমিতির সদস্য, তাই সেটা করিনি। তুমি ছোট মানুষ, পরিচালনা করো, হারুন ভাইকে রাগানো ঠিক হবে না। তুমি এ রকম একটা গল্প নিয়ে কেন কাজ করবা?’
গোয়েন্দাপ্রধান হারুনের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয়ে যাওয়া ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’ ছবিটি আবারও শুরু হচ্ছে। সেসময় নায়িকা হিসেবে মিমের সঙ্গে চুক্তি হওয়ায় নায়িকার চরিত্রটি তিনিই করছেন। খোঁজা হচ্ছে নায়ক। ছবিটি করবেন বলে সেসময় নাটকের কাজ কমিয়ে দিয়েছিলেন সুমন। দীর্ঘ সময় ধরে করেছিলেন গবেষণা ও চিত্রনাট্য তৈরির কাজ। ঠিক কী কারণে ছবি বন্ধ করতে বলেছিলেন ডিবি হারুন? জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘তিনি এটুকুই বলছিলেন, এই ছবি করা যাবে না। একজনকে ডেকে বললেন, আমাদের কাছে ভালো ভালো গল্প আছে, সেগুলো সুমনের সঙ্গে শেয়ার করেন। সুমন যেটা পছন্দ করবে, সেটা দিয়ে দেবেন। তার যদি স্পন্সর প্রয়োজন হয়, আমরা জোগাড় করে দেব।
ইয়াসমিনের ঘটনাটি ১৯৯৫ সালের। ওই বছরের ২৩ আগস্ট রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি বাসে দিনাজপুরের দশমাইল মোড়ে নামেন ইয়াসমিন আক্তার (১৬)। একটি দোকানের সামনে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল সে। ওই সময় টহল পুলিশের একটি ভ্যান তাকে দিনাজপুর পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে একপ্রকার জোর করে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন সকালে গোবিন্দপুরে ওই কিশোরীর লাশ পাওয়া যায়। ঘটনাটি দিনাজপুরের মানুষকে ক্ষুব্ধ করে। প্রতিবাদে বহু মানুষ রাস্তায় নেমে এলে তাদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। সে সময় নিহত হন সাতজন, আহত দুই শতাধিক। এ ঘটনা অবলম্বনেই নির্মিত হবে ‘আমি ইয়াসমিন বলছি’।
ডিবি অফিসের ওই ঘটনা জানতে চাওয়া হয়েছিল কানাডায় অবস্থানরত ঢালিউড অভিনেতা জায়েদ খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডিবিতে আমার একটা কাজ ছিল সেদিন। দেখি, সুমন ধর এবং ইয়াসমিন ছবি নিয়ে কথা হচ্ছে। তখন আমি বিষয়টা জানতে চাইলাম, যেহেতু আমি নিজেও চলচ্চিত্রের মানুষ, নিজ দায়িত্বে বিষয়টার সমাধান করে দিতে চেষ্টা করেছি। সেটা কিন্তু গণমাধ্যমে সুমন বলেছে।’