নতুন ডিসিদের আ.লীগের ঘনিষ্ঠতার ‘আমলনামা’
নতুন নিয়োগ পাওয়া জেলা প্রশাসকের (ডিসি) বেশির ভাগই হাসিনা সরকারের অতি ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। এর মধ্যে অনেকে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, মেয়র এবং তৎকালীন সরকারের আস্থাভাজন দলবাজ সচিবদের পিএস (একান্ত সচিব) হিসাবে কাজ করেছেন।
নতুন ডিসিদের আমলনামা
ঢাকার ডিসি হিসাবে নিয়োগ পাওয়া তানভীর আহমেদ ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাবেক ডিসি মোমিনুর রহমানের ভাগনে। তানভীর আহমেদ সাবেক আইন সচিব আবু সালেহ মো. জহিরুল ইসলামের একান্ত সচিব (পিএস) ছিলেন। এছাড়া তিনি সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) সাজ্জাদুল ইসলাম শাহিনের নিকটাত্মীয়। বিগত সরকারের সময় অতিরিক্ত সচিব সায়লা ফারজানা এবং জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের দেওয়া ডিসির ফিটলিস্টে তানভীর আহমেদের নাম ছিল। ময়মনসিংহ জেলার ডিসি মফিদুল আলম চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র আ জ ম নাসিরের পিএস ছিলেন। তিনি সর্বশেষ স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পিএস ছিলেন।
কুষ্টিয়ার ডিসি হিসাবে নিয়োগ পাওয়া ফারহানা ইসলাম সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীরের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। তিনি একসময় রূপগঞ্জের ইউএনও ছিলেন। তিনি গোলাম দস্তগীরের মালিকানধীন গাজী টিভির সংবাদ পাঠিকা হিসাবে কাজ করছেন। ঝিনাইদহের ডিসি মো. আব্দুল আওয়াল কমলনগর ও কুমিল্লায় ইউএনও থাকা অবস্থায় দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিগত সরকারের সময় তৈরি করা ফিটলিস্টে তার নাম ছিল। মাগুরার ডিসি মো. অহিদুল ইসলাম গত সরকারের সময় ৫ বছর মরিশাসে ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। কক্সবাজার জেলার ডিসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত সরকারের সময় তিনি একটি মোটা বেতনে প্রকল্পে লিয়েনে পোস্টিং নিয়েছেন।
নোয়াখালীর ডিসি খন্দকার ইসতিয়াক ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। তার পিতা ও মামা গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তিনি চারটি উপজেলায় এসিল্যান্ড ছিলেন। খুলনার ডিসি মো. সাইফুল ইসলাম তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা এবং ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারির একান্ত সহচর ছিলেন। হবিগঞ্চে ইউএনও থাকাকালে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গত সরকারের সময় তিনি কলকাতা হাইকমিশনে উপ-হাইকশিনার হিসাবে কাজ করেছেন। বিগত সরকারের সময় তৈরি করা ডিসির ফিটলিস্টে তার নাম ছিল।
গোপলগঞ্জের ডিসি মো. কামরুজ্জামান বিগত সরকারের আস্থাভাজন হওয়ায় সৌদি আরবে ২০১৬-২০২১ পর্যন্ত কনসাল জেনারেল পদে নিয়োগ পেয়েছেন। রাজউকের পরিচালক ও হজ অফিসার হিসাবে পোস্টিং পেয়েছেন। গত সরকারের সময় তৈরি করা ডিসির ফিটলিস্টে তার নাম ছিল। সিরাজগঞ্জের ডিসি মোহাম্মদ মনির হোসেন রাজউকের পরিচালক ছিলেন। তিনি সালমান এফ রহমানের সঙ্গে শেয়ারবাজার কারসাজির অপকর্মে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। তার শতকোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জামালপুরের ডিসি হাসিনা বেগম ঢাকা ডিসি অফিসে এলএও হিসাবে কাজ করেছেন। ইউএনও হিসাবে নরসিংদীতে কর্মরত থাকা অবস্থায় তাকে তৎকালীন ডিসি তাকে অনুপযুক্ত কর্মকর্তা হিসাবে চিহ্নিত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠান।
কিশোরগঞ্জের ডিসি ফৌজিয়া খান বিগত সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত ছিলেন। গত আগস্ট মাসে বিপ্লবের সময় বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সচিব জাহাঙ্গীর হোসেনের ডান হাত হিসাবে ভূমিকা রাখার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রাজশাহীর ডিসি মো. মাহবুবুর রহমান পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমানের ভাগনিজামাই।
ফরিদপুরের ডিসি মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লাহ ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাবেক ডিসি মোমিনুর রহমানের ভাগনিজামাই। বর্তমান ঢাকার ডিসি তানভীর আহমেদের ভগ্নিপতি। পদোন্নতির পর পরই তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে ফুল দিতে গিয়েছেন। বিগত সরকারের সময় তৈরি করা ডিসির ফিটলিস্টে তার নাম ছিল। শরীয়তপুরের ডিসি আব্দুল আজিজ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলেন। তিনি সাবেক সরকারে কট্টর সমর্থক বলে অভিযোগ রয়েছে। পদোন্নতি পেয়ে তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে ফুল দিতে গিয়েছেন। পঞ্চগড়ের ডিসি মোহাম্মদ নায়িরুজ্জাম এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রাহমাতুম মুনিমের পিএস ছিলেন।
লালমনিরহাটের ডিসি রকিব হায়দার উপ-সচিব হিসাবে পদোন্নতি পেয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে ফুল দিয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি এক সময় মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন। গত সরকারের সময় তৈরি করা ডিসির ফিটলিস্টে বরগুনার ডিসি মোহাম্মদ শফিউল আলমের নাম ছিল।
নীলফামারীর ডিসি শরীফা হকের মাঠ প্রশাসনে এক বছর কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। বিগত সরকারের সময় গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া নিয়োগ পাওয়া বাকি ডিসিদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেও প্রায় একই ধরনের অভিযোগ রয়েছে।