হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও এক অভিযোগ
কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতনে উসকানি দেওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৩ জনের নাম উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ২৯ জন সাংবাদিক রয়েছেন। এর আগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরও সাতটি অভিযোগ পড়ে ট্রাইব্যুনালে। এছাড়া ঢাকায়, খুলনা, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গাজীপুরের শ্রীপুরে নয়টি হত্যা মামলা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ঢাকা : আন্দোলনে নিহত রিয়ানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় এ অভিযোগ দাখিল করেন। বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম।
যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে তারা হলেন-সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, মো. আনিসুল হক, ড. হাছান মাহমুদ, হাসানুল হক ইনু, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জুনাইদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আতিকুল ইসলাম, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান হারুন-আর-রশীদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
অভিযোগ করা হয়েছে, সাবেক র্যাবপ্রধান মো. হারুন আর রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার, জিয়াউল আহসান, আদাবর থানার সাবেক ওসি মো. মাহাবুব রহমান, ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, আইনজীবী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নিঝুম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব নাঈমুল ইসলাম খান প্রমুখ।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০ থেকে ৪৯ নম্বর আসামিরা আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যাকে বৈধতা দিতে প্ররোচনা ও উসকানি দেওয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাদের দাবি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে মিথ্যা খবর প্রচার করেছেন।
পাশাপাশি আহত ও নিহতদের সঠিক তথ্য গোপনের উদ্দেশ্যে টকশো, কলাম লিখে ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সত্য আড়াল করে গুজব ও মিথ্যা সংবাদ ছড়িয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছেন। আন্দোলন চলমান অবস্থায় তারা আসামি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে ‘আমরা আপনার সাথে আছি’ বলে সরাসরি গণহত্যায় প্ররোচনা ও উসকানি দিয়েছেন।
রাজধানীতে আরও তিন হত্যা মামলা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে আরও তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ তিন মামলাকে এজাহার হিসাবে গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রাজধানীর খিলগাঁও, সূত্রাপুর ও মোহাম্মদপুরে তিনটি হত্যার ঘটনায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের পৃথক তিন আদালতে এসব মামলা করা হয়।
শেখ হাসিনা ছাড়া এসব মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক এমপি শামীম ওসমান, সাবেক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ, পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার প্রমুখ।
খুলনা : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালসহ ৮৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪০০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এস এম মনিরুল হাসান বাপ্পী বাদী হয়ে ফুলতলা থানায় এ মামলা দায়ের করেন। এটি খুলনায় দায়ের করা প্রথম হত্যা মামলা।
মামলায় উল্লেখযোগ অন্য আসামিরা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালউদ্দিন, শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল, শেখ সোহেল, শেখ রুবেল, শেখ বেলালউদ্দিন, কেসিসি’র সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, সাবেক সংসদ-সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. ডি. বাবুল রানা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিত কুমার অধিকারী।
ময়মনসিংহ ও ফুলপুর : ছাত্র আন্দোলনে ১৯ জুলাই রেদোয়ান হোসেন সাগর নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সদরের এমপি মোহিত উর রহমান শান্তসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়ার দুলাল উদ্দিনের ছেলে শিক্ষার্থী ফাহাদ উদ্দিন রিফাত বুধবার বিকালে বাদী হয়ে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আমলি আদালতে এ মামলা করেন। ১০ জনের নাম উল্লেখ ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ৬০-৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এছাড়া ফুলপুরে ২০ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে সাইফুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় বাবা তৈয়ব আলী বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে বুধবার ময়মনসিংহ আদালতে মামলা করেছেন। এতে আওয়ামী লীগের ১৬ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। বুধবার মধ্যরাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় সদর উপজেলার সুহিলপুর গ্রামের বাবুল মিয়া বাদী হয়ে তার ভাই জহিরুল ইসলামকে হত্যার অভিযোগ এনে মামলাটি করেন। মামলায় ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০০ জনতে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে জানা যায়, ২০২১ সালের ২৬ মার্চ জহিরুল ইসলাম নিহত হন।
শ্রীপুর (গাজীপুর) : শ্রীপুরে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিজিবি সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বিজিবি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে ছয় আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত দুজনের স্বজন বুধবার রাতে শ্রীপুর থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা করেছেন।
দুটি মামলায়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ-আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ঢাকা মহানগর গোয়েন্দাপ্রধান (ডিবি) হারুন-অর-রশীদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, স্থানীয় ২ সাবেক এমপি রুমানা আলী টুসি, ইকবাল হোসেন সবুজ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জামিল হোসেন দুর্জয়সহ দুটি মামলায় ৯৫ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা আরও ১ হাজার ১০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
নিহত শ্রীপুর উপজেলার কপাটিয়াপাড়ার জাকির হোসেন রানার বাবা জামাল উদ্দিন ও বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার থানার রহমত মিয়ার বাবা মো. মুঞ্জু মিয়া মামলা দুটি করেন।