গোমতীর পাড়ে কান্নার রোল
গোমতীর তীরে ডুকরে ডুকরে কাঁদছেন ফরহাদ হোসেন। কখনও দুই হাত আকাশের দিকে তুলে আবার কখনও কপাল চাপড়ে। কিছু আগেই বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তার সংসারের সহায়-সম্বলসহ ঘরের সবকিছু। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নিজেকে সামলাতে না পেরে তাই কুমিল্লার বুড়িচংয়ের বুরবুড়িয়ায় তাকে কাঁদতে দেখা গেছে।
ফরহাদ হোসেনের বাড়ি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুরবুড়িয়ায়। কথা বলে জানা গেছে, গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে পড়েছে। প্রবলবেগে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে পানি। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে বুরবুড়িয়া এলাকায় প্রথমে একটি ছোট গর্ত দিয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরেই তা বড় আকারে বাঁধ ধসে ভয়ংকর রূপ নেয়। এরপর থেকে প্রবল স্রোতে পানি ঢুকতে শুরু করে বুড়িচং উপজেলায়। স্রোতের পানিতে ভেসে গেছে তার ঘরের সব জিনিসপত্র। নড়বড়ে ঘরটিও পানিতে ভেসে গেছে। চোখের সামনে এভাবে সবকিছু শেষ হতে দেখে ভেঙে পড়েছেন ফরহাদ। পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক ফরহাদ জানান, তার ১১ মাসের একটি শিশু রয়েছে। তাকে নিয়েই সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বেড়িবাঁধে। হঠাৎ পানি ঢুকে পড়ায় ঘরের কিছুই বের করতে পারেননি। একরকম এক কাপড়েই বের হতে বাধ্য হয়েছেন।
আহাজারি করতে করতে ফরহাদ বলেন, আমার কিছুই নেই। বাচ্চাদের জন্যও কিছু রাখতে পারিনি। সিএনজিচালিত অটোরিকশাটা কোনো মতে স্থানীয়দের নিয়ে রাস্তায় তুলতে পেরেছি। আর কিছুই নেই। শূন্য হাতে পরিবার নিয়ে আমি এখন পথে বসে গেছি।
শুধু ফরহাদ একা নন, তার মতো শত শত বাসিন্দাকে সড়কে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। তাদের সঙ্গে রয়েছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন পাশের আশ্রয়কেন্দ্রে। কেউবা বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আত্মীয়দের বাড়ি উঠেছেন। সবার চোখে পানি টলমল করছে। কেউ নামাজ পড়ে দোয়া করছেন। কেউ আজান দিচ্ছেন। মসজিদে মসজিদে শোনা যাচ্ছে সতর্কতা অনুরোধ।
জানা গেছে, বুড়িচং উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন ষোলনল, পীরযাত্রাপুর, বুড়িচং সদর, বাকশিমুল এবং রাজাপুর ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিদা আক্তার জানিয়েছেন, বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া অংশে পানি বাঁধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। প্রবল প্রবাহের সঙ্গে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। সবাইকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।