শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে নুরের আহ্বান
দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় জীবন উৎসর্গ করা সকল বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী শান্তি-শৃঙ্খলা ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় সম্প্রীতি সমাবেশ করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগর আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে এ সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে গুলিস্তান-ফুলবাড়িয়া ঘুরে পল্টন মোড়, দৈনিক বাংলা, ফকিরাপুল, বিএনপির দলীয় কার্যালয়, নাইটিংগেল মোড় ঘুরে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সম্প্রীতি সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ২০১৪, ১৮, ২৪’ সালে নির্বাচনে ভারত হাসিনাকে একচ্ছত্র সমর্থন দিয়েছিল। সারা বিশ্ব যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলছে তখনও ভারত হাসিনাকে ক্ষমতায় আনতে মরিয়া। আমাদের পাশের দেশ ভারতকে বলব আপনারা আমাদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখুন। একটা দলের জন্য সম্পর্ক নষ্ট করবেন না। ভারতের সাথে আমাদের বন্দী বিনিময় চুক্তি রয়েছে। শেখ হাসিনাকে অন্য দেশে পাঠানোর তদবির না করে অবিলম্বে বাংলাদেশে পাঠানো হোক, তা না হলে ভারতীয় হাইকমিশনার ঘেরাও করবে গণঅধিকার পরিষদ।
তিনি আরও বলেন, এই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক, তারা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করেছে। তাদের উচিত সকল রাজনৈতিক দল গুলোর সাথে আলাপ করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা। আশা করি এই সরকার জনগণকে সাথে নিয়ে কাজ করবে। যদিও সব কাজ সম্পূর্ণ করতে পারবে না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনরুদ্ধার করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যে টাকা পাচার করেছে সে পাচারকারীদেরকে এই সরকার অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করবে।
নুর আরও বলেন, ‘ছাত্র-জনতা যখন বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে স্বাধীন করেছে, তখন একদল মানুষ নৈরাজ্য করছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় দখলদারিত্ব চালাচ্ছে, লুটপাট করছে, এসবের মূল্য উদ্দেশ্য ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে ব্যর্থ করা। তাই ছাত্র-জনতাকে বলব নৈরাজ্যরোধে পাড়ায় পাড়ায় প্রতিরোধ কমিটি গঠন করুন। এসব নৈরাজ্য গণঅধিকার পরিষদ, বিএনপি-জামায়াত করছে না। এগুলো কারা করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করা।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, বিপ্লবের পরে আবার প্রতিবিপ্লব ঘটার সম্ভাবনা থাকে। ইতোমধ্যে সর্বত্র বিশৃঙ্খলা, ডাকাতি, রাহাজানি, হানাহানি শুরু হয়েছে। এগুলো কিন্তু ভাল লক্ষণ নয়। আমাদের অর্জনকে বিতর্কিত করতে এই চক্রান্ত শুরু হয়েছে যে, আগেই তো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল ছিল, এখন তো জনগণের নিরাপত্তা নেই। এবিষয়ে সকল রাজনৈতিক দল এবং জনগণকে সর্তক থাকতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকার দ্রুতসময়ের মধ্যে অবাধ-সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে তাদের উপর জনগণের আস্থা রক্ষা করবে বলে মনে করি। এই মুহূর্তে দরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ সকল সরকারি সেক্টর সংস্কার করা। আগামী ১ মাসের মধ্যে সকল সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের সরিয়ে দিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। যারা ১৪, ১৮ ও ২৪’ সালের অবৈধ নির্বাচনের সাথে জড়িত, তাদেরকে কোনো ছাড় নয়। এছাড়া যারা গুম-খুনের সাথে জড়িত তাদের চাকরিচ্যুত করে শাস্তি দিতে হবে। গুম-খুনের নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে। তাকে অবশ্যই ভারত থেকে ফেরত আনতে হবে। এতো মানুষ হত্যা করে কেউ পালিয়ে যেতে পারে না। অবশ্যই তার বিচার হতে হবে। আর পুলিশের সাথে আর কোনো সংঘাত নয়। তাদের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্য বলতে চাই, আমরা আপনাদের সাথে আছি। আপনারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন না। আসুন, সবাই মিলে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা করি। জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে দেশকে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভূমিকা রাখি। এই বাংলাদেশে আর কখনোই কোনো শেখ হাসিনা তৈরি হতে দেওয়া যাবে না।
গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান ও রবিউল হাসানের সঞ্চালনায় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সুকুমার বড়ুয়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক লতিফ মাসুম, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, শহিদুল ইসলাম ফাহিম, আব্দুজ জাহের, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, আইন সম্পাদক এডভোকেট শওকত, সহ সম্পাদক হাবিবুর রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক নুরুল করিম শাকিল, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক সুহেল রানা সম্পদ প্রমুখ।