Home সারাদেশ রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নমুক্ত নিরাপদ কর্মপরিবেশ চাই ইমরাম শেখ, এডিসি, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ
আগস্ট ৯, ২০২৪

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নমুক্ত নিরাপদ কর্মপরিবেশ চাই ইমরাম শেখ, এডিসি, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ

মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ নয় বরং বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নমুক্ত ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ চাই:

প্রায় ৪০০ বছর আগে উপমহাদেশে পুলিশের যাত্রা শুরু হলেও আমাদের আধুনিক পুলিশের জন্ম ১৮৬১ সালের পুলিশ এক্ট এর মাধ্যমে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ১ম বুলেট ছুড়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাংলাদেশ পুলিশ। গৌরবের এ-অধ্যায়কে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কবলে পড়ে কিছুটা কলুষিত হয় বাংলাদেশ পুলিশ; কলুষিত হয় দপ্তরসমূহ। “Power tends to corrupt and absolute power corrupts absolutely.”(-Lord Acton). বাঙালীর চরিত্র যেমন তেমনই রাজনীতিক, পুলিশ, প্রশাসন ও অন্যান্য দপ্তর তেমনই হবে; আর সেটাই স্বাভাবিক নয় কি? কথায় বলে, জনগণ শাসকের রূপ ধারণ করে। পুলিশতো রাষ্ট্রীয় বাহিনী। মুঘল বা ব্রিটিশদের খাজনা আদায়ের লাঠিয়াল! এভাবে সর্বদা রাজনীতির বলি হয় পুলিশ। রাজনীতির এ-দুর্বৃত্তায়নের শেষ কোথায়? বিরোধী দলগুলোকে দমনের হাতিয়ার পুলিশ-প্রশাসনকে ব্যবহার করেছে ক্ষমতাসীন সব দলই। সাম্প্রতিক সময়ের আন্দোলনে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের পর পুলিশকে যেভাবে অন্যায় হত্যা ও নির্যাতন হয়েছে তা সভ্যতা বিবর্জিত ও অন্যায়। আন্দোলনে নিহত ও পুলিশ হত্যার ন্যায়বিচার কামনা করছি।

পুলিশের মাঠে অনুপস্থিতিতে সারাদেশব্যাপী সন্ত্রাস, ডাকাত, চোর ও অরাজকতাবাদীরা রাজ করছে। গত সোমবার থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ২৩২ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এর আগে কোটা আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত সংঘাতে ৩২৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল। গত ২৩ দিনে সারা দেশে মোট ৫৬০ জন নিহত হয়েছেন। (সূত্র: প্রথম আলো)। শত শত পুলিশ সদস্যকে কেনো হত্যা করলেন? অন্যায়ের দায়ভার গুটিকয়েক পুলিশের আর সিদ্ধান্তপ্রণেতাদের। যারা এহেন খুন, লুটপাট ও রাহাজানিতে যুক্ত হলেন তারা কি কঠিন বিচারের সম্মুখীন হবে না? অবশ্যই হবে।

আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে। আমাদেরও প্রত্যাশা যে, পুলিশের একটা সুন্দর সংস্কার ও ন্যায়বিচার ওনারা করবেন। কিন্তু ভবিষ্যতে এই রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়ন হতে মুক্তির সম্ভাবনা কতটুকু আছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ ও কঠিনসাধ্য বলে মনে হয়। তাই সংস্কার জরুরী এমনভাবে যেনো পদোন্নতি, বদলি, প্রেষণ ইত্যাদিও হতে হবে সাবলিল, সিস্টেম্যাটিক, ঘুষ ও তদবিরমুক্ত। আশার কথা হলো এই যে, বাংলাদেশ পুলিশের নিম্নধাপে থাকা সদস্যদের পদোন্নতি এবং কনস্টবল ও এস,আই নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুকরণীয় পর্যায়ে এসেছে। বাকি সংস্কারের আশায় পুলিশ সদস্যরা।

বর্তমান বাদী (অভিযোগকারী) ও বিবাদী (অভিযুক্ত) কোনো পক্ষকেই সন্তুষ্ট করা কঠিন এমনই এক দৃশ্যমান সংস্থা (visible organ) পুলিশ। অংশীজন বা সেবাপ্রার্থীদেরকে হয়রানী, আর্থিক সুবিধা গ্রহণ ইত্যাদি অধিকাংশ দপ্তরে থাকলেও পুলিশের কাছে আসা মানুষ খানিকটা বিপদগ্রস্ত থাকে। এমতাবস্থায় তাদের থেকে সুবিধা গ্রহণ বা খারাপ ব্যবহার মানুষের মনে দাগ কাটে বেশি। রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ রোদ-বৃষ্টিতে অনেক কষ্টের ডিউটি করে। আবার তারাই দশ টাকা নিয়ে ক্যামেরাবন্দি হয়ে ভাইরাল হয়। এই জাতীর মন এতো নিচু ও সুযোগ-সন্ধানী। সুযোগ পেলে বেগুণ, কাঁচামরিচও চুরি করে। এই বাঙালীর চরিত্র আরো ভালোভাবে জানতে ড. হুমায়ুন আজাদ সাহেবের “বাঙালী: একটি রুগ্ন জনগোষ্ঠী?” শিরোনামের ২টি অনুচ্ছেদ পড়ার অনুরোধ করছি। আসলে সবটা আমাদের জানা। এই জাতী থেকেই পুলিশ। কনস্টেবল ও সাব-ইন্সপেক্টর নিয়োগে মাঠে হাজার হাজার প্রার্থী দেখেছি; নিয়োগ পেয়েছে কয়েকশত মাত্র। বাকি যারা পুলিশ হতে চেয়েছিলো তাদের অনেকেই হয়তো তার স্বপ্নের পুলিশকে ঢিল ছুটেছে! এটা কথার কথা বললাম।

পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করুন; আলাদা বিভাগ করে কঠিন সিস্টেমের মধ্যে রাখুন আর রাজনীতির বলি যেনো না হতে হয় সেই ব্যবস্থা করুন। আর অন্যের ভালো কাজকে ভালো চোখে দেখা ও বলা এবং অন্যায়কে প্রতিবাদের ভাষায় দেখার সংস্কৃতি রাখা উচিত। দেখবেন পুলিশও জনগণের এরকম ঢালাও শত্রুতে পরিণত হবে না। মনে রাখবেন বাংলাদেশ পুলিশে বর্তমানে প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার সদস্য আছে, যার মধ্যে খারাপ হয়তো আনুমানিক ১৫ হাজার পুলিশ। তাহলে বাকি ২ লাখ কেনো তাদের দায় নিবে? পুলিশে হয় আপনার কাছের যারা আছে তারা হয়তো ব্যক্তি হিসেবে খারাপ নয়; কিন্তু আপনার প্রতিপক্ষ কেনো হতে হচ্ছে ভেবে দেখবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *