ছাত্র আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জামায়াতের
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে দেশের ছাত্রসমাজের চলমান আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একই সঙ্গে দেশবাসীকে পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সমগ্র বাংলাদেশ আজ রক্তে রঞ্জিত। বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের শিক্ষাজীবন আজ অনিশ্চয়তার মাঝে উপনীত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ছাত্ররা হল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আজ আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা সকলেই জানেন, বেশ কিছুদিন যাবত সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে দেশের ছাত্রসমাজ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার প্রথম থেকেই ছাত্রসমাজের আন্দোলনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে অবজ্ঞা প্রদর্শন করে আসছে। দেশের শিক্ষক সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী, ওলামায়ে কেরামসহ দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসমূহ ছাত্রসমাজের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেয়ায় ছাত্রসমাজের আন্দোলন একটি সিদ্ধান্তকারী পর্যায়ে পৌঁছেছে। সরকার ছাত্রসমাজের আন্দোলনের যৌক্তিক সমাধান না করে সংবিধান ও আইন আদালতের দোহাই দিয়ে পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীদের উসকানিমূলক বক্তব্যের পর সারাদেশে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত ১৬ জুলাই দেশব্যাপী আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। পুলিশের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ ও বহিরাগত আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র, হকিস্টিক, ছোড়া, রামদা, লোহার রডসহ নানা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উপর হামলা চালিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে ছাত্রসমাজের উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্মম আক্রমণ পর্যবেক্ষণ করেছি। দেশবাসী বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখেছেন রংপুর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাঈদকে পুলিশ ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য জাতীয় পত্র-পত্রিকায় ও বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ সারাদেশ সাধারণ ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত করেছে। তাদের আক্রমণে ৭টি তরু-তাজা প্রাণ অকালে ঝড়ে পড়েছে। দেশের ছাত্রসমাজের এই রক্ত দান গোটা বিশ্ববাসীকে হতবাক করেছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের কয়েকটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং মানবাধিকার সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মূলত সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের পরেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। সুতরাং সরকারের মন্ত্রীগণ এই হত্যাকাণ্ডেরর দায়দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
তিনি দেশের এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত আহ্বান জানান।
১। ৭ জন ছাত্র হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট খুনিদেরকে অবিলম্বে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের দাবিসমূহ বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে তার যৌক্তিক সমাধান করতে হবে।
৩। অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষাজীবন রক্ষা করতে হবে।
৪। যারা সশস্ত্র হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে ও হাজার হাজার ছাত্রকে আহত করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৫। নিহতদের পরিবারকে উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
একই সঙ্গে দল-মত-নির্বিশেষে রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সকল ধরনের তাণ্ডবতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী চলমান এই শান্তিপূর্ণ ছাত্র আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘোষণা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ-এর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম প্রমুখ।