Home সারাদেশ মেধাভিত্তিক কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতে কোটার বৈষম্য’র সাথে আরেক বাধা নিয়োগে অর্থের গোপন লেনদেন।
মেধাভিত্তিক কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতে কোটার বৈষম্য’র সাথে আরেক বাধা নিয়োগে অর্থের গোপন লেনদেন।
বালী তাইফুর রহমান তূর্য, সমাজকর্মী ও লেখক।
কর্মক্ষেত্র এবং মেধাভিত্তিক ভর্তি নিশ্চিতে কোটার বৈষম্যর সাথে আরেক বড় প্রতিবন্ধকতা হলো নিয়োগে অবৈধ অর্থের গোপন লেনদেন।
মেধাভিত্তিক ভর্তি বা সরকারি কর্মক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক নিয়োগ তখনই নিশ্চিত করা যাবে যখন নিয়োগ প্রকৃয়ায় চা নাস্তা খরচ(অর্থ লেনদেন) ঠেকানো যাবে।কোটার থেকেও এটি বেশি ভয়াবহ।তাই কোটা সংস্কারের সাথে সাথে এই দাবিও তোলা উচিৎ।নিয়োগ প্রকৃয়ায় অর্থ লেনদেন বন্ধ করতে হলে প্রথমে যারা অর্থ দিয়ে চাকরি পেতে চায়,বা নিতে চায় তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।আগে ঘুষ চাইতো,এখন কর্মকর্তার বাসা খুজে প্যাকেটে করে চা নাস্তা খরচ জোড় করে দিয়ে আসে।কর্মকর্তারা না নিলে তার স্ত্রীকে দিয়ে আসে।এই পুরো সিস্টেমটাকে একটি চক্র পুরো মেধা শূন্য করে দিচ্ছে।
দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেনীর চাকরিতে বিনা পয়সায় নিয়োগ পেয়েছেন এমন লোক খুজে পাওয়া খুবই কঠিন।যদি চাকরি পাওয়ার পরে কেউ বলেও,তাও বিশ্বাস হয় না।কারণ সে ঠেকেই বলে যে চাকরিতে পয়সা লাগে নি,বললে তো তার চাকরিও থাকবে না।
বাস্তবতা হলো কোনো সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে একজন মালি বা নাইট গার্ডকে পর্যন্ত চার থেকে পাচ লক্ষ টাকা দিয়ে চাকরি নিশ্চিত করতে হয়।অনেক সময় চাকরি দাতা পক্ষ চাকরি গ্রহিতা পক্ষকে বাধ্য করেন এই টাকা দিতে,অথবা চাকরি প্রার্থী নিজেরাই রাস্তা খোজেন কিভাবে চাকরি দাতার কাছে এই অর্থ পৌঁছে দিয়ে অবৈধভাবে চাকরি নিশ্চিত করবেন।মেধা তো এখানেই মাঠে মারা যায়,সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের তুলনায় কর্মচারী থাকেন কয়েক গুন বেশি।তাই মেধাকে তো প্রথম শ্রেণির নিচের চাকরিতে এমনিতেই এতিমের মতো দাড় করিয়ে রাখা হয়।
বিশেষ করে তৃতীয়,চতুর্থ শ্রেণীর অর্থাৎ অফিস সহকারি এবং অফিস সহায়ক পদে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে যখনই চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় তখনই বাইরে মাছের দরের মতো চাকরির দর উঠতে শোনা যায়। যে যত বেশি দিতে পারবে সে বিভিন্নভাবে সেই টাকাটা নিয়োগদাতাদের কাছে পৌঁছাতে পথ খুজতে থাকে।এখানে অর্থ গ্রহীতার চাইতেও বেশি দোষ অর্থ দাতার।যদি কেউ অর্থ না দিতো,তবুও কর্তৃপক্ষকে নিয়োগ দিতেই হতো।অর্থাৎ চাকরি প্রার্থীদের মেধায় লড়াইয়ের অনিহা এবং বিকল্প পথের অন্বেষণই এই দুর্নীতির হৃতপিন্ড এবং নিয়ামক।
তাই যেকোনো নিয়োগ প্রকৃয়া স্বচ্ছ করতে হলে চাকরি প্রার্থীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে প্রতিটি নিয়োগে।সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি কমাতে হবে,ঢাকা ভিত্তিক নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করতে হবে। বেকারের তো এমনিতেই আয় নেই,সে এই বাড়তি ফি আর ঢাকায় যাওয়ার যাতায়াত খরচ কোথায় পাবে?তাই সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি সর্বোচ্চ ১০০ টাকা নির্ধারণ করা উচিৎ।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল নিয়োগ স্থানীয় প্রশাসন বা জেলা প্রশাসনের অধীনে দিয়ে দেয়া প্রয়োজন।স্থানীয় সভাপতি আর প্রতিষ্ঠান প্রধানরা মিলেই অনিয়মের আখরা গড়ে তোলে।যদি এই নিয়োগ আর ভর্তি পরীক্ষায় মেধা নিশ্চিত করা না যায়,কোনোভাবেই মেধাভিত্তিক নিয়োগ নিশ্চিত করা যাবে না।বৈষম্যপূর্ণ কোটা পদ্ধতি মেধার পথে বাধা অবশ্যই,তবে আরও বড় বাধা এই নিয়োগ প্রকৃয়ায় অবৈধ গোপন অর্থ লেনদেন।তাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উচিৎ এই দাবিগুলোও তুলে ধরা উচিৎ।