Home জাতীয় মেয়েকে বিয়ের শর্তে জামাইয়ের হাতে প্রশ্নপত্র তুলে দেন শ্বশুর
জুলাই ১৪, ২০২৪

মেয়েকে বিয়ের শর্তে জামাইয়ের হাতে প্রশ্নপত্র তুলে দেন শ্বশুর

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) ক্যাডার, নন-ক্যাডারসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। সিআইডির পাশাপাশি একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে পিএসসির একজন সাবেক মেম্বার তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন এই শর্তে যে, বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে দিবো, তবে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। শ্বশুর ছিলেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কমিটির সভাপতি। শুধু মেয়ের জামাই নয়, জামাইয়ের বোনকেও একই কায়দায় বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে। ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস পরীক্ষায় জামাই ও তার বোনকে উত্তীর্ণ করেছেন ফাঁস করা প্রশ্নের মাধ্যমে। জামাইও তার কথা রেখেছেন, উত্তীর্ণ হওয়ার পর পিএসসির তৎকালীন ঐ মেম্বারের মেয়েকে বিয়ে করেছেন। এক পরিবারের ভাই-বোন এখন সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা।

১৯৯৫ সাল থেকেই প্রশ্ন ফাঁস হতো, তবে তা সীমিত পরিসরে। ২০০২ সাল থেকে ব্যাপক হারে প্রশ্ন ফাঁস হতো। প্রশ্ন ফাঁসের অফিস হয়ে দাঁড়িয়েছিল পিএসসি। যেখানে যা খুশি করা যেত। প্রিলিমিনারি ও লিখিত দুই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দলীয় নেতা থেকে শুরু করে রিকশাচালক, পান দোকানদারসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রশ্ন ফাঁসের সিন্ডিকেটে জড়িয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। লালমনিরহাটের আদিতমারি উপজেলায় একজন আওয়ামী লীগ নেতা মিজানুর রহমান প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ছিলেন। তার নাম এখন অনেকের মুখে মুখে। এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। তার দলে থাকার সুযোগ নেই। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সিআইডির পর্যালোচনায় একটি ক্যাডার থেকে বেরিয়ে এসেছে, ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে ২৪টি জেলার কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি। মোট ৭০ জন উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে নারী মাত্র সাত জন। ৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে ১৬ জেলায় কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হয়নি। মোট ১০০ জন উত্তীর্ণ হয়, এর মধ্যে নারী মাত্র চার জন। এখানে কোটা পূরণ করা হয়নি। ৪৩তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে ১৪ জেলায় কোনো প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়নি। মোট ১০০ জন উত্তীর্ণ হন, এর মধ্যে ৯ জন নারী। সিআইডি এই তিনটি বিসিএস পরীক্ষা পর্যালোচনা করেছে।

এতে দেখা গেছে, যেসব জেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, তারাই উত্তীর্ণ হয়েছেন। শুধুমাত্র পুলিশ ক্যাডার নয়, সকল ক্যাডারে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। প্রশ্ন ফাঁসের কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারা এই সুবিধা পেয়েছে।

প্রশ্ন ফাঁস চক্রের দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বিসিএস পরীক্ষার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, পিএসসির সেই কর্মকর্তাদের অনেকে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত। অনেক কর্মকর্তা পলাতক রয়েছে। যাদের নাম আসছে, তাদের গ্রেফতারে অভিযানে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *